৬ মাসেও উদঘাটন হয়নি নবীগঞ্জে ‘আলমগীর’ হত্যাকান্ডের রহস্য

0
587

নূরুজ্জামান ফারুকী বিশেষ প্রতিনিধি ॥
নবীগঞ্জ উপজেলার নিজ আগনা ফিশারী সংলগ্ন রাস্তার উপর থেকে উদ্ধার করা নিহত আলমগীর মিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় দায়েরী মামলার এফআইআর ভুক্ত আসামীরা এখন পর্যন্ত অধরা। ৬ মাসেও মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। এদিকে এখনও কান্না থামছে না নিহতের পরিবারের স্বজনদের মাঝে। আসামীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও গ্রেফতার করছেন না মামলা তদন্ত কর্মকর্তা। এমন অভিযোগ নিহতের পরিবারের। এ ঘটনায় এলাকা জোরে আলোচনার ঝড় বইছে। আলমগীর মৃত্যু রহস্য উদঘাটনসহ দোষীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবী এলাকাবাসীর।
সুত্রে জানাযায়, উপজেলার বড় ভাকৈর (পুর্ব) ইউনিয়নের ছোট ভাকৈর গ্রামের আবুল কালাম আজাদের ছেলে আলমগীর মিয়া ইনাতগঞ্জ ইউপির নিজ আগনা গ্রামের ফোর মিয়া, বাবুল মিয়া, জুবেল মিয়া, রুয়েল মিয়া, রাকেশ, রেনু মিয়া, আলীম, আহাদ, গোলাপ ও লেবু মিয়া গংদের সাথে প্রায় প্রতিদিন গভীর রাত পর্যন্ত আড্ডা দিত। নিজ আগনা একটি ফিশারীর কেয়ার টেকার ফোর মিয়া। ওই ফিশারীর পাড়ে একটি ঘরে ফোর মিয়ার তত্ত্বাবধানে প্রতিদিন বসতো জুয়া ও মদের আসর। উক্ত আসরে উল্লেখিত লোকদের সাথে মদ সেবন ও জুয়া খেলায় অংশ নিত আলমগীর। সম্প্রতি টাকা লেনদেনকে কেন্দ্র করে আলমগীর মিয়া ও রুয়েল মিয়ার মধ্যে বিরুধ দেখা দেয়। এছাড়া মাংসের টাকা নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয় ফোর মিয়ার সাথে আলমগীরের। এরজের ধরে বিগত ২০ জানুয়ারী সকালে স্থানীয় কাজীর বাজারে আলমগীর মিয়ার সাথে ফোর মিয়া ও রুয়েল মিয়ার বাকযুদ্ধ হয়। ঘটনার প্রেক্ষিতে ওই দিন সন্ধ্যায় আলমগীরকে বাড়ি থেকে ডেকে নেয় জুবেল মিয়া। এ সময় জুবেল মিয়া আলমগীরের পরিবারের লোকজনদের জানায় নিজ আগনা গ্রামের এরশাদ উল্লার ছেলে রুয়েল মিয়ার সাথে টাকা লেনদেন এর বিরোধ মিমাংসার জন্য তারা নিজ আগনা রুয়েল মিয়ার বাড়িতে যাচ্ছে। আর বাড়ি ফিরেনি আলমগীর। এরই মধ্যে রাত প্রায় দেড়টার দিকে বাড়িতে খবর আসে আলমগীরের মৃতদেহ নবীগঞ্জ-ইনাতগঞ্জ রাস্তার উপর পড়ে আছে। খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন ছুটে যান ঘটনাস্থলে। উপস্থিত হন ইনাতগঞ্জ ফাড়িঁ পুলিশ। নিহত আলমগীর মিয়ার মৃতদেহ পাওয়া যায় ফিশারীর কেয়ারটেকার ফোর মিয়ার বাড়ি থেকে ২ শ গজ উত্তরে। পরিবারের লোকজন পরিকল্পিতভাবে আলমগীরকে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ করলেও ইনাতগঞ্জ ফাড়িঁ পুলিশ তা আমলে নেয় নি। পুলিশের ধারনা অজ্ঞাতনামা গাড়ীর চাপায় আলমগীরের মৃত্যু হয়েছে। ইনাতগঞ্জ ফাড়িঁ ইনচার্জ শামছুদ্দিনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে রক্তাক্ত মৃতদেহ উদ্ধার করে ৪৪৩/ তাং ২১/০১/২০২১ইং জিডি মুলে মৃতের ছুরতহাল তৈরী করে হবিগঞ্জ মর্গে প্রেরন করেন। উক্ত জিডিতে স্থানীয় লোকজনের বরাত দিয়ে সড়ক দূর্ঘটনায় আলমগীর মিয়া মারাগেছেন মর্মে উল্লেখ্য করেন ফাড়ি ইনচার্জ শামছুদ্দিন খান। সাথে সাথে মৃতের পরিবার এর প্রতিবাদ করে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবী করেন। পরবর্তীতে নিহতের স্ত্রী মোর্শেদা বেগম বাদী হয়ে নবীগঞ্জ থানায় মামলা দিতে আসলে ময়নাতদন্ত রিপোর্টের আগে মামলা নেয়া হবে না মর্মে তাদেরকে জানান। পরবর্তীতে নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে হবিগঞ্জের বিজ্ঞ আদালতে ২ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। বিজ্ঞ বিচারক এ বিষয়ে নবীগঞ্জ থানায় কোন মামলা, জিডি বা অপমৃত্যু মামলা হয়েছে কি না প্রতিবেদন দেয়ার জন্য ওসি নবীগঞ্জকে নির্দেশ দেন। আদালতের আদেশে ড়শ ২৫/০২/২০২১ইং তারিখে ইনাতগঞ্জ ফাড়িঁ ইনচার্জ শামছুদ্দিন খানঁ জিডি হয়েছে উল্লেখ্য করে একটি প্রতিবেদন দেন। উক্ত প্রতিবেদন যাওয়ার পর বিজ্ঞ আদালত মামলাটি এফআইআর হিসেবে রুজু করার জন্য ওসি নবীগঞ্জকে নিদের্শ দিলে মামলাটি রুজু হয়। মামলার তদন্তভার দেয়া হয় ওসি (তদন্ত) আমিনুল ইসলামকে। মামলা দায়েরের প্রায় ৪ মাস এবং হত্যাকান্ডের ৬ মাস অতিবাহিত হলেও পুলিশ এ ঘটনার প্রকৃত কারন উদঘাটন করতে পারেনি। এমনকি এফআইআর ভুক্ত আসামীরা বাড়িতে ঘুরাফেরা করলে বাদী পক্ষ বারবার তাগিদ দিলেও কাউক গ্রেফতার করা হয়নি বলে অভিযোগ মৃতের পরিবারের। এরমধ্যে বিদেশ দুবাই পাড়ি জমান মামলার ১নং আসামী আসামী জুবেল মিয়া। দ্বিতীয় আসামী রুয়েল মিয়া দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন এলাকায়। তবে ঘটনার পরপর কিছুদিন আত্মগোপনে ছিলেন জুবেল, রুয়েলসহ ওই দিন রাতের আড্ডায় থাকা অপরাপর সহপার্টিরা। বিভিন্ন প্রাপ্ত সুত্রে জানাযায়, ২০ জানুয়ারী সন্ধ্যায় আলমগীর মিয়াকে বাড়ি থেকে ডেকে আনেন জুবেল। রাতে আলমগীরসহ ৬/৭ জনের সহপার্টিরা প্রতিদিনের ন্যায় নিজ আগনা একটি ফিশারীদে ফোর মিয়ার তত্ত্বাবধানে জুয়া ও মদের আসর হয়। উক্ত জুয়া খেলায় প্রথমে আলমগীর লাভমান হলে আর খেলতে রাজি না হয়ে বাড়িতে আসার চেষ্টা করে। কিন্তু সহপার্টি রুয়েল, জুবেল, বাবুল, লেবু, রাকেশ, আহাদ, ফোর মিয়াসহ অপরাপরগণ তাকে জুয়া খেলা শেষ করে যাওয়ার জন্য চাপ দেয়। তাদের কথা না মানায় আলমগীরের সাথে তাদের বাকবিতন্ডার সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে একজন লাইট দিয়ে মাথায় আঘাত করলে আলমগীর জ্ঞান শুন্য হয়ে পড়ে। মৃতভেবে তারা রাস্তায় পেলে দেয়। এ সময় লড়াচড়া দেখে এলোপাথাড়িভাবে তাকে আঘাত করে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। এমন তথ্য বাবুল মিয়া তার স্ত্রীর নিকট বললে, তার স্ত্রী শিপা বেগম ঘটনার কয়েক দিন পরেই ইনাতগঞ্জ বাজারে একটি দোকানে বসে লোকজনদের নিকট বলেন। তার কথা বার্তা অনেকেই ভিডিওতে ধারন করে রাখেন। এলাকাবাসী নিহত আলমগীর মিয়ার ঘটনাটি সড়ক দূর্ঘটনা মানতে নারাজ। তাদের দাবী জুয়া ও মদ নিয়েই পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনার পরপর স্থানীয় কাজিরবাজারে এমনটাই ছাউর হয়েছে মানুষের মুখে। স্থানীয়রা বলেন, পুলিশ বাবুল মিয়া, ফোর মিয়া, রুয়েল মিয়াকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই থলের বিড়াল বের হয়ে আসবে। এদিকে নিহত আলমগীর মিয়ার স্ত্রী মামলার বাদী মোর্শেদ বেগম কান্না বিজড়িত কন্ঠে বলেন, তার স্বামীকে জুবেল, রুয়েল, বাবুল, ফোর মিয়াগংরা পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। মামলার পরও পুলিশ তাদেরকে গ্রেফতার করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। সড়ক দূর্ঘটনায় তার স্বামী মারাগেছে পুলিশের এমন ভুল ধারনার কারনে ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশংখ্যা করছেন। তিনি বলেন, জুবেল, রুয়েল এলাকায় ঘুরাফেরা করলে তারা মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে বারবার গ্রেফতারের জন্য তাগিদ দেন। কিন্তু তিনি আসছি, আসব বলে সময় পাড় করেছেন। এমনকি হত্যাকারী জুবেল মিয়াকে বিদেশ যাবার সুযোগ করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এমন অভিযোগও করেন নিহতের স্ত্রী মোর্শেদা বেগম। এ ব্যাপারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ওসি (তদন্ত) আমিনুল ইসলাম বলেন, জুবেল বিদেশ, তাকে না পাওয়ায় গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। অপর আসামী রুয়েল মিয়ার বিষয়ে বলেন, ময়নাতদন্ত রিপোর্ট আসার আগ পর্যন্ত তাকে গ্রেফতার করতে আগ্রহ নন। এছাড়া ৬ মাসেও নিহত আলমগীর মিয়ার ময়নাতদন্ত রিপোর্ট না আসায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন নিহতের স্বজনরা। নিহত আলমগীর মিয়ার ৩ কন্যা। আরিফা, তিশা ও হিভা। পিতাহারা ওই অসহায় মেয়েরা এ প্রতিনিধির কাছে এসে হাউমাউ করে কেদেঁ উঠেন। তারা তাদের বাবা’র খুনিদের গ্রেফতারসহ দৃষ্টান্ত শাস্তি দাবী করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবী জানান।