১৬ কোটি সমর্থকদের জন্য আজ জিততে

    0
    220

    আমারসিলেটটোয়েন্টিফোর.কম ০৩ সেপ্টেম্বর  : ১৬ কোটি সমর্থকদের জন্য আজ জিততে হবে ডি ক্রুইফের শিষ্যদের। বাংলাদেশের ৫৬ হাজার বর্গমাইলের এ জনপথে আনন্দের বন্যা বইয়ে দিতে কাঠমান্ডুতে মামুনুল ইসলাম-এমিলিদের সামনে ভারতের বিপক্ষে জয়ের বিকল্প অন্য কোনো পথ নেই। সারা দেশ জয়ের অপেক্ষায় রয়েছে। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে টিকে থাকতে হলে আজ ভারতকে হারাতে হবেই। ক্রুইফের শিষ্যদের মনে রাখতে হবে ক্লাবের চেয়ে দেশ বড়। ক্লাব ৩০-৩৫ লাখ টাকা দেয় বলে ক্লাবকে সব কিছু উজাড় করে দিতে হবে আর জাতীয় দলের হয়ে খেলার সময় সাবধানতা বজায় রেখে খেলতে হবে। এই হীন সনাতন ধ্যান-ধারণা থেকে খেলোয়াড়দের বেরিয়ে আসতে হবে। দেশ মায়ের মতো।

    জননীর প্রতি যে মমতা রয়েছে দেশের প্রতিও খেলোয়াড়দের তা থাকা অপরিহার্য। মা যেমন সন্তানকে কোলেপিঠে করে মানুষ করে দেশও তেমনি আলো-বাতাস দিয়ে তাদের বেড়ে উঠতে সহায়তা করেছে। সব ঝেরে ফেলে আজ ভারতের বিপক্ষে লড়াকু মেজাজে খেলে দেশকে জয় উপহার দেয়া হবে খেলোয়াড়দের পবিত্র দায়িত্ব। এবার ভারতের বিরুদ্ধে আজ মাঠে নামার আগে গতকাল সকালে নেপাল আর্মি গ্রাউন্ডে অনুশীলন করেছে ডি ক্রুইফের শিষ্যরা।

    ম্যাচ সম্পর্কে বাংলাদেশের ডাচ কোচ লোডভিক ডি ক্রুইফ জানান, ভারত এবং বাংলাদেশ দলের প্রশিক্ষণের দায়িত্বে রয়েছেন দুই ডাচ কোচ। উভয় কোচই জানেন কিভাবে আধুনিক ফুটবল খেলাতে হয়। তারা পাকিস্তানের বিপক্ষে জিতে জয় দিয়ে শুরু করেছে। টুর্নামেন্টে টিকে থাকতে হলে আমাদের আজ জিততেই হবে। ছেলেরা জেতার জন্যই মাঠে নামবে। আগের ম্যাচে যে ভুল হয়েছিল তা আর হবে না বলে জানিয়েছে তারা। ভারতীয় দলের ডাচ কোচ ওয়াইম কোভারম্যান জানান, আমাদের পাঁচটি ম্যাচই ফাইনাল। পাঁচ ফাইনালের প্রথমটিতে জিতেছি। অবশিষ্ট রয়েছে চারটি ফাইনাল যার দ্বিতীয়টি বাংলাদেশের বিপক্ষে আজ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচে হেরেছে তার মানে তারা টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যায়নি। তারা আমাদের বিপক্ষ ঘুরে দাঁড়াতে চাইবে, আমরা তাদের সেই সুযোগ দেবো না। বাংলাদেশ দলে যে বেশ কয়েকজন ভালো মানের ফুটবলার রয়েছেন তা স্বীকার করেছেন ভারতীয় কোচ।

    দক্ষিণ এশিয়া ভারত সমরাস্ত্রে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে থাকলেও ফুটবলের মানের দিক দিয়ে দুদেশের মধ্যে তেমন পার্থক্য নেই। ফিফা র‌্যাংকিংয়ে ভারত রয়েছে ১৪৫তম স্থানে আর বাংলাদেশের অবস্থান ১৫৮। অতীতে এ দুদেশ ২৯ বার মুখোমুখি হয়েছে এর মধ্যে ভারত জিতেছে ১৭ বার বাংলাদেশ জিতেছে ৫ বার। অবশিষ্ট ৭টি ম্যাচ অমীমাংসিতভাবে শেষ হয়েছে। দুদলের ম্যাচে ভারত বাংলাদেশের জালে বল পাঠিয়েছে ৪০ বার। আর লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা ভারতের জালে বল পাঠিয়েছে ১৯ বার।

    ১৯৯৭ সাল থেকে শুরু হওয়া সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের তিনটির ফাইনালে খেলেছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। এর মধ্যে ২০০৩ সালের ফাইনালে মালদ্বীপকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশ। ১৯৯৯ এবং ২০০৫ সালের ফাইনালে ভারতের কাছে হেরে রানার্সআপ ট্রফি নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের। উপমহাদেশের আট দেশের ১৮০ কোটি জনগণের কাছে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ মানে গরিবের বিশ্বকাপ। এবার সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিততে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা এবং ভুটান বিদেশী কোচ এনে তালিম নিয়েছে। ভারত এবং বাংলাদেশ দলে রয়েছে ডাচ কোচ। শ্রীলঙ্কা দলের প্রশিক্ষণে ব্রাজিলিয়ান কোচ। মালদ্বীপ দলের হাঙ্গেরিয়ান, ভুটান দলে জাপানি কোচ এবং নেপাল দলের দায়িত্বে রয়েছেন ইংল্যান্ডের জ্যাক স্ট্যাফেনস্কি।

    ভারত দলেও রয়েছে ১৯৮৮ সালে ইউরোজয়ী হল্যান্ড দলের সদস্য কোভারম্যান। কোচ হিসেবে ভারতীয় দলে তার শুরুটা গত বছর আগস্টে, ফাইনালে ক্যামেরুনকে হারিয়ে নেহেরু কাপ জিতে দারুণ অভিষেক ভারতীয় দলে। এরপর আর কোভারম্যানের শিষ্যরা ভালো ফলাফল করতে পারেননি। সিঙ্গাপুর, ফিলিস্তিনের কাছে হার, অতঃপর মায়ানমারের কাছে হেরে এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপ শেষ। এই সাফের জন্য খেলা একমাত্র অনুশীলন ম্যাচে তাজিকিস্তানে তাজিকদের কাছে সাফ চ্যাম্পিয়ন ভারত হেরেছে ৩-০ গোলে। বাইচুং ভুটিয়াসহ দলের আট নয় জন সিনিয়র খেলোয়াড়ের বিদায়ে পর ভারত দল এখন তারুণ্যনির্ভর।

    ভারত নেপালের বিপক্ষে যে খেলা খেলেছে তা দেখে বাংলাদেশ শিবির জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারত জিতলেও ভালো খেলতে পারেনি। আত্মঘাতী গোলে তাদের জিততে হয়েছে। বাংলাদেশের অধিনায়ক মামুনুল ইসলাম জানিয়েছেন, পাকিস্তানের বিপক্ষে ভারত যে খেলা খেলেছে, তাতে মনে হয়েছে তাদের হারানো সম্ভব। ভারত-বাংলাদেশ দলের মধ্যে তেমন পার্থক্য নেই। তাদের দলের সুনীল, মেহতাবসহ কয়েকজন ভালো মানের ফুটবলার রয়েছেন। আমাদেরও রয়েছে এমিলি, জাহিদ ও তকসিলরা। তবে তারা নেপালের বিরুদ্ধে ভালো করতে পারেনি। ভারতের বিরুদ্ধে আজ জ্বলে উঠতে হবে এবং প্রমাণ করতে হবে তারাও ম্যাচ উইনার।

    দুদলের শেষ লড়াইয়ে জিতেছে বাংলাদেশ। ২০১০ সালে ৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় অনুষ্ঠিত দশম সাফ গেমসের ফুটবলে বাংলাদেশ ভারতকে ১-০ গোলে হারিয়েছিল। শুধু ভারত নয়, ওই আসরের ফাইনালে আফগানিস্তানকে ৪-১ গোলে হারিয়ে ফুটবলে স্বর্ণ জিতেছিল বাংলাদেশ। ভারতদের বিপক্ষে বাংলাদেশের পক্ষে জয়সূচক গোলটি করেছিলেন সবুজ।