হিজাবের পক্ষে এরদোয়ানের গণভোটের চ্যালেঞ্জ থেকে অতীতের ভুল স্বীকার বিরোধী দলের

0
313
"বিরোধী দলের নেতা কিলিকদারগ্ল‍ুর তথাকথিত ঐ স্বীকারোক্তি (হিজাব ইস্যুতে তার দল ভুল করেছিলো) ও আশ্বাস আসলে, তুর্কি ধর্মপ্রাণ জনগণের ধর্মীয় আবেগকে ব্যবহার করে তাঁদেরকে ধোঁকা দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার পাঁয়তারা মাত্র"

আমার সিলেট ডেস্কঃ ধর্মহীন (সেকুলার) তুর্কি প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা কামাল পাশার প্রতিষ্ঠিত রিপাবলিকান পিপলস পার্টি (সিএইচপি) বর্তমানে দেশটির প্রধান বিরোধী দল। এটির বর্তমান নেতা কামাল কিলিকদারগ্ল‍ু সম্প্রতি হিজাববিরোধী অবস্থান থেকে আপাতত সরে গিয়ে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে বলেছেন-এ ক্ষতগুলোর একটি হলো হিজাব পরা সমস্যা।

হিজাব ইস্যুতে আমার দল অতীতে ভুল করেছিলো! এ ইস্যুকে পিছনে ফেলে দেয়ার সময় এসেছে। আমরা সার্বজনীন আইন নীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ সংবিধিবদ্ধ একটি কাঠামো তৈরি করেছি। আমরা রাজনীতির একচেটিয়াকরণ থেকে নারীদের পোশাকের ইস্যুটি সরিয়ে নিয়েছি। ভবিষ্যতে ধর্মপ্রাণ তুর্কিদের হিজাব পরার ক্ষেত্রে আর কোনো প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হবে না।

শনিবার দক্ষিণ-পূর্ব তুরস্কের মালাতিয়া শহরে এক টিভি ভাষণে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান সরকারী ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নারীদের হিজাব পরার আইনী অধিকার নিশ্চিত করতে দেশের সংবিধান সংশোধনে গণভোটোর প্রস্তাব দিয়ে কিলিকদারগ্ল‍ু’র উল্লিখিত বক্তব্যকে চ্যালেঞ্জ করে বলেছেন: সিএইচপি নেতা দীর্ঘদিনের ভুলে যাওয়া হিজাব বিতর্কটি আবার তুলেছেন।

আপনি আপনার প্রস্তাবে সৎ ও আন্তরিক হলে এবং আপনি মানবাধিকার হিসেবে হিজাব ইস্যুকে বিতর্ক থেকে সত্যিই সরিয়ে দিতে চাইলে, আইনের মাধ্যমে নয়, বরং এটি অর্জন করতে আসুন। আসুন, আমাদের মেয়ে ও বোনদের মনকে সহজ করতে হিজাবের স্বাধীনতাকে সাংবিধানিক নিশ্চয়তা দেই।

আমরা সাংবিধানিক এ সংশোধনীর জন্যে প্রস্তুতি নিয়েছি। আমরা (বিরোধী দলের) ভুল আন্দোলনের বিরুদ্ধে সাংবিধানিক একটি সংশোধনী খসড়া তৈরী করেছি -যা গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি বিষয়। আমরা এটি শিগগিরই সংসদে পেশ করবো। সেখানে এটি গৃহীত হলে, তা তুরস্কের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি লাভ হবে। আর সেখানে বিষয়টির সমাধান না হলে, আমরা আমাদের সংগ্রাম চালিয়ে যাবো। আমরা তা জনগণের কাছে উপস্থাপন করবো।

নির্বাচনের পর, আমাদের দেশকে নাগরিক ও স্বাধীনতাবাদী একটি সংবিধানের আওতায় নিয়ে আসুন। আপনার সাহস থাকলে আসুন, এ বিষয়টিকে গণভোটে নিয়ে যাই। জাতিকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে দিন।

কিন্তু এরদোয়ানের ঐ ফিরিয়ে দিয়ে এক টুইটে কিলিকদারগ্ল‍ু লিখেছেন: কী হয়েছে? আপনি কোন গণভোটের কথা বলছেন? আমাদের খসড়া বিল সমর্থন করুন; গণভোট নয়। আপনি কি ভুয়া অরবানের (হাঙ্গেরীর প্রধানমন্ত্রী) মতো খেলতে চাচ্ছেন, এরদোয়ান? এটি তুরস্ক, হাঙ্গেরী নয়। আপনি পালাতে না পারলে, এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে … আপনার কি সেই সাহস আছে?

উল্লেখ্য, তুরস্কে হিজাব পরা নিয়ে ধর্মপ্রাণ মেয়েরা দীর্ঘদিন ধরে আইনী লড়াই করে আসছেন। আগে শিক্ষা ও সরকারী প্রতিষ্ঠানে হিজাব পরা নিষিদ্ধ ছিলো; যদিও এগুলোর বাইরে হিজাব পরার প্রচলন রয়েছে।

সিএইচপি আধুনিকতার নামে জনগণের মাঝে হিজাববিরোধী মনোভাব উসকে দেয় এবং তা পরা নিষিদ্ধের আইনকে সমর্থন করে।

১৯৯০ ও ২০০০’র দশক জুড়ে সেখানকার জনসাধারণের মাঝে ও রাজনৈতিক বিতর্কে হিজাব নিষিদ্ধের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান দখল করেছিলো। সেখানে হিজাব পরার নিষেধাজ্ঞা প্রথম ১৯৮০’র দশকে ব্যাপকভাবে প্রয়োগ করা হয়। ১৯৯৭ সালের জুনে সেখানকার সামরিক বাহিনী “উত্তর আধুনিক অভ্যুত্থান” নামে অভিহিত একটি ঘটনায় নির্বাচিত রক্ষণশীল এরবাকান সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করে আরো কঠোরভাবে হিজাববিরোধী নীতি প্রয়োগ করে।

এরপর ইসলামপন্থী এরদোয়ান সরকার ক্ষমতায় এলে, তুরস্কের সংসদ ২০০৮ সালে এরদোয়ানের একটি পদক্ষেপে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের হিজাব পরার উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় – যেটিকে কিলিকদারগ্ল‍ুসহ সিএইচপি’র আইন প্রণেতারা ধর্মনিরপেক্ষতাবিরোধী হওয়ার অজুহাত দেখিয়ে সাংবিধানিক আদালতে বাধা দেয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করে। ২০১৩ সালে দেশটির সরকারী প্রতিষ্ঠানেও মহিলাদের হিজার পরার উপর নিষেধাজ্ঞাও তুলে নেয়া হয়।

আগামী বছর তুরস্কে অনুষ্ঠিতব্য সাধারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে হিজাব নিয়ে বিগত ক-মাস ধরে দেশটিতে রাজনৈতিক বিতর্ক চলছে। এরদোয়ান বরাবরই দাবি করে আসছেন যে, তাঁর দলই দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের প্রতিনিধিত্ব করে। আর অন্য কোনো দল ক্ষমতায় গেলে, তারা নারীদের হিজাব পরার অধিকার রক্ষা করতে পারবে না। অতীতই এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ।

তবে সম্প্রতি হিজাব নিয়ে এরদোয়ানের গণভোটের চ্যালেঞ্জকে কিলিকদারগ্ল‍ু প্রত্যাখ্যান করায় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন -বিরোধী দলের নেতা কিলিকদারগ্ল‍ুর তথাকথিত ঐ স্বীকারোক্তি (হিজাব ইস্যুতে তার দল ভুল করেছিলো) ও আশ্বাস আসলে, তুর্কি ধর্মপ্রাণ জনগণের ধর্মীয় আবেগকে ব্যবহার করে তাঁদেরকে ধোঁকা দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার পাঁয়তারা মাত্র।

ক্ষমতার বাইরে থাকা সেকুলার ও সমাজতন্ত্রী দলগুলোর গতানুগতিক কৌশলই থাকে – জনগণের ধর্মীয় মূল্যবোধকে ব্যবহার করে গণতন্ত্রের আশ্বাস দিয়ে ক্ষমতায় গিয়ে জনগণের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে যথাসম্ভব তাদের ধর্মীয় ও বাকস্বাধীনতা কেড়ে নিয়ে গণতন্ত্রের টুটি চেপে ধরে যতোটা পারা যায় – ক্ষমতায় টিকে থাকা। বর্তমানে রাশিয়া, চীন, উত্তর কোরিয়া, কিউবা ইত্যাদি দেশের সরকারগুলো এর উদাহরণ।
অতীতে হোসনি মুবারক, ইয়াসির আরাফাত, সাদ্দাম হুসেন, গাদ্দাফী প্রমুখ মুলত ধর্মহীন (সেকুলার) ও সমাজতন্ত্রী হয়েও যার যার অঞ্চলে ইসলামী সেন্টিমেন্টকে ব্যবহার করে ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের বোকা বানিয়ে ক্ষমতায় গিয়ে দীর্ঘদিন ক্ষমতা দখল করে রেখেছিলেন। সূত্র: ডেইলি সাবাহ, আল-আরাবিয়া, মিডল ইস্ট আই, ইউরো নিউজ ও অন্যান্য।