হাওরের ফসল ঘরে ওঠা পর্যন্ত ভাটি জেলা সুনামগঞ্জে ছুটি বাতিল

0
181

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধিঃ নির্ধারিত সময়ে হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ শেষ করতে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে বলে জানালেন পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম।

তিনি বলেন, ‘হাওরের ফসল ঘরে ওঠার আগ পর্যন্ত ছুটি পাবেন না সুনামগঞ্জ পাউবোর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বাঁধের কাজ সুন্দরভাবে শেষ করার জন্য ২৬ জন সার্ভেয়ার কাজ করছেন। এতে সুনামগঞ্জ পাউবোর জনবল সংকট নিরসন হবে। ফেব্রুয়ারি ও মার্চ এই দুই মাস কঠোরভাবে ফসল রক্ষা বাঁধের নির্মাণকাজ মনিটরিং করবে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। যাতে বাঁধের কাজ সঠিকভাবে হয়। এই দুই মাস সর্বোচ্চ সতর্ক থেকে বাঁধ নির্মাণ করা হবে। বাঁধ নির্মাণে কোনও ধরনের অনিয়মের প্রমাণ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বিকালে তাহিরপুর উপজেলার শনির হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের নির্মাণকাজ পরিদর্শন শেষে স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে এসব কথা জানিয়েছেন তিনি।

হাওরবাসী ও সাংবাদিকদেরকে বাঁধের যেকোনো সমস্যার বিষয়ে মন্ত্রী ও সংশ্লিষ্টদের জানানোর আহ্বান জানান তিনি। উপমন্ত্রী বলেন, ‘বাঁধের যেকোনো সমস্যা আমাদের সঙ্গে শেয়ার করবেন। সুনির্দিষ্ট তথ্য দিয়ে আমাদের সহযোগিতা করবেন। গতবারের চেয়ে এবার আরও বেশি সতর্কতার সঙ্গে বাঁধ নির্মাণ করছি আমরা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাওরের বাঁধ নির্মাণে স্থায়ী ও টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করছে পাউবো ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়।’

হাওরবাসী যাতে নিরাপদে ফসল ঘরে তুলতে পারেন, সে ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি উল্লেখ করে উপমন্ত্রী আরো বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে সেভাবে নির্দেশনা দিয়েছি। হাওরবাসী যাতে হাসিমুখে বোরো ফসল ঘরে তুলতে পারেন, সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি আমরা।’

চলতি বছর ৭৪৫ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী আরও বলেন, ‘২০২২ সালের বন্যায় হাওরের বাঁধ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তাই চলতি বছর বেশি কাজ করা হচ্ছে। এবার এক হাজার ৭৬টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি বাঁধ নির্মাণে কাজ করছে। এজন্য সরকার ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। এখন পর্যন্ত ৭৫ কোটি টাকা ছাড় দেওয়া হয়েছে। আগামী সপ্তাহে আরও ২৫ কোটি টাকা ছাড় দেওয়া হবে। এখন পর্যন্ত বাঁধের কাজ ৫৪ শতাংশ শেষ হয়েছে। মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে বাকি ৪৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়ে যাবে। এরই মধ্যে ঘরে ফসল তুলতে পারবেন কৃষকরা।’

প্রতিটি উপজেলায় দুজন সার্ভেয়ার বাঁধের কাজ দেখভাল করছেন উল্লেখ করে উপমন্ত্রী বলেন, ‌‘পাউবোর উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আজ থেকে সুনামগঞ্জে অফিস করবেন। ৭ মার্চের আগে বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী ১২টি উপজেলার হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ দুবার করে পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবেন।’

বাংলাদেশ একসময় বিদেশ নির্ভর ছিল, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘সবাই মিলে টেকসই বাঁধ নির্মাণ করে হাওরের ফসল রক্ষা করে কৃষকের ঘরে তুলে দিতে চাই। এজন্য সবার আন্তরিক সহযোগিতা প্রয়োজন।’

এ সময় মন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন সুনামগঞ্জ-১ আসনের সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী, পাউবোর উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী খুশি মোহন সরকারসহ পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রমুখ।