স্বজন হারোনোদের আর্তচিৎকার আজও কানে লাগে

    0
    207

    আমারসিলেট24ডটকম,২৯এপ্রিলভয়াল ২৯ এপ্রিল আজ। ১৯৯১ সালের এদিনে প্রলয়ংকরি ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাসেবাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় এক লাখ৩৮ হাজার মানুষ নিহত এবং এক কোটি মানুষ তাদের সর্বস্ব হারায়।নিহতের সংখ্যা বিচারে স্মরণকালের ভয়াভহতম ঘূণিঝড় গুলোর মধ্যে ’৯১- সালের  এই ঘুর্ণিঝড় একটি।

    ’৯১-এর এই ভয়াল ঘটনা এখনো দুঃস্বপ্নের মতো তাড়িয়ে বেড়ায় উপকূলবাসীকে।ঘটনার এত বছর পরও স্মৃতি থেকে মুছে ফেলতে পারছেন না সেই দুঃসহ সময়গুলো।গভীর রাতে ঘুম ভেঙে যায় জলোচ্ছ্বাস আর ঘূর্ণিঝড়ের কথা মনে হলে। নিহতদেরলাশ, স্বজন হারোনোদের আর্তচিৎকার আর বিলাপ ফিরে ফিরে আসে তাদের জীবনে।

    প্রতি বছরের মতো বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন আজ স্মরণ করবে এইদিনটিকে। স্বজন হারানোর বিলাপে মুখরিত হবে আকাশ বাতাস। সেদিনের ঘটনার পরযারা বেঁচে আছেন আত্মার শান্তি কামনা করবেন হারিয়ে যাওয়াদের। তবে অনেকপরিবার ছিল সব সদস্যই সেই ভয়াল রাতে প্রাণ হারিয়েছেন। কেউ হারিয়েছেন অনেকসদস্যকে। সন্দ্বীপের মোজান্মেল হোসেন (কনট্রাকটর ) এই বিভিষিকাময় রাতেহারিয়েছেন পরিবারের ১১ সদস্যকে। এখন তিনি কিভাবে আছেন, কী করছেন বলতেপারেনি অনেকে।

    সন্দ্বীপের মনিরুল হুদা বাবন বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন- সেদিনেরস্মৃতিচারণ করে বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের পর দিন লাশের স্তুপ জমে গিয়েছিল। শুধুমানুষ নয়। গরু ছাগল মহিষ আর মানুষের মৃতদেহে একাকার হয়ে গিয়েছিল সেদিন।কোনো রকম ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া মানুষ এবং পশু মাটি গর্ত করে চাপা দেয়াহয়েছিল সেদিন।

    ঢাকাস্থ সন্দ্বীপ সমিতির সাধারণ সম্পাদক হেদায়েতুল ইসলাম মিন্টু বলেন, সেদিনের ঘটনা মনে হলে এখনো শিউরে উঠেন তিনি। চোখের সামনে ভেসে উঠে হাজারহাজার লাশ আর ধংসস্তুপের ছবি।

    সন্দ্বীপ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সন্দ্বীপে বর্তমানে দুটিআশ্রয়কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ চলছে । তবে এ দু’টি পর্যাপ্ত নয় উল্লেখ করেতিনি বলেন, ঝড় জলোচ্ছাস থেকে সন্দ্বীপের মানুষকে বাঁচানোর জণ্য আরোআশ্রয়কেন্দ্রের প্রয়োজন।

    পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড়টি ১৯৯১ সালের ২৯এপ্রিল চট্রগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় অঞ্চলে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার বেগে আঘাতকরে। এই ঘূর্ণিঝড়ের ফলে ৬ মিটার (২০ ফুট ) উচ্চতার জলোচ্ছাস উপকূলীয় এলাকাপ্লাবিত করে এবং এর ফলে প্রায় এক লাখ ৩৮ হাজার মানুষ নিহত হয়। এদেরবেশিরভাগই নিহত হয় চট্রগ্রাম জেলার উপকূল ও দ্বীপসমুহে। সন্দ্বীপ, মহেশখালী , হাতীয়া দ্বীপে নিহতের সংখ্যা সর্বাধিক । এরমধ্যে শুধু সন্দ্বীপে মারাযায় ২৩ হাজার লোক।

    ধারণা করা হয়, এই ঘুর্ণিঝড়ের কারণে প্রায় ১দশমিক পাঁচ বিলিয়ন ডলারের (১৯৯১সালের মার্কিন ডলার ) ক্ষতি হয়। সাগর ও নদীর উপকুল প্লাবিত হয়। কর্ণফুলিনদীর তীরে কংক্রিটের বাঁধ থাকলেও এটি জলোচ্ছাসে ধংস হয়। চট্রগ্রাম বন্দরের১০০ টন ওজনের একটি ক্রেন ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে স্থানচ্যুত হয় এবং আঘাতের কারণেটুকরো টুকরো অংশে বিভক্ত হয়।বন্দরে নোঙর করা বিভিন্ন ছোট বড় জাহাজ ,লঞ্চ ওঅন্যান্য জলযান নিখোঁজ ও ক্ষতিগ্রস্ত হয় যার মধ্যে নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীরঅনেক যানও ছিল। এছাড়াও প্রায় ১০ লক্ষ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

    ঘূর্ণিঝড়টির গতিপথ সর্ম্পকে সেই সময় বলা হয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ১৯৯১ এর২২ এপ্রিল বঙ্গোপসাগরে একটি গভীর নিম্মচাপের সৃষ্টি হয। বাতাসে গতিবেগের ওনিম্মচাপের আকার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এটি ২৪ এপ্রিল ০২বি ঘুর্নিঝড়ে রূপনেয়। ঘূর্ণিঝড়টি উত্তর-পূর্বদিকে অগ্রসর হওযার সাথে সাথে এর শক্তি আরোবাড়তে থাকে। ২৮ ও ২৯ এপ্রিল এটির তীব্রতা প্রচণ্ড বৃদ্ধি পায় এবং গতিবেগ১৬০ মাইল/ঘন্টায় পৌঁছায় যা একটি ক্যাটাগরি-৫ ঘূর্নিঝড়ের সমতুল্য।

    প্রতি বছরের মতো বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন আজ স্মরণ করবে এইদিনটিকে। স্বজন হারানোর বিলাপে মুখরিত হবে আকাশ বাতাস। সেদিনের ঘটনার পরযারা বেচেঁ আছেন আত্মার শান্তি কামনা করবেন হারিয়ে যাওয়াদের। তবে অনেকপরিবার আছে সব সদস্যই সেই ভয়াল রাতে প্রাণ হারিয়েছেন। কেউ হারিয়েছেন অনেকসদস্যকে।

    ২৯ এপ্রিল রাতে এটি চট্টগ্রামের উপকূলবর্তী অঞ্চলে ১৫৫ মাইল/ঘণ্টা বেগেআঘাত করে যা ক্যাটাগরি-৪ ঘূর্নিঝড়ের সমতুল্য। স্থলভাগে আক্রমনের পর এরগতিবেগ ধীরে ধীরে হ্রাস পায় এবং ৩০ এপ্রিল এটি বিলুপ্ত হয়। সূত্রঃবাসস।