স্পিরুলিনা লম্বা সময় বেঁচে থাকার এক জাদুকাঠির নাম

    0
    839

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,মার্চঃ অতি সাধারন ভাষায় স্পিরোলিনা হলো- সবুজ শ্যাওলা বা শৈবাল। যা কিনা আমাদের দেশে খাল-বিলে বা পানিতে জন্মায়। সাগরের তলদেশে এর আরেক নাম সামুদ্রিক শৈবাল নামে পরিচিত। তবে এখন বৈজ্ঞানিক ভাবে এর চাষ ও করা হচ্ছে । যা কৃত্রিম জলাধারে উৎপন্ন করে বাণিজ্যিক ভাবে বাজারে আনার পরিকল্পনা করা হয়েছে । বিশ্রি জাতীয় এই সবুজ শ্যাওলাটি আমাদের স্বাস্থের জন্য অনেক অনেক উপকারী। স্পিরুলিনা কে প্রোটিনের এক বিরাট উৎস হিসেবে বিবেচনা করা হয় ।

    স্পিরুলিনার বৈশিষ্টঃ- স্পিরুলিনার বিশেষ বৈশিষ্ট হলো, তা ব্যাপক মাত্রায় শরীরের রেডিয়েশন ইনভোলভমেন্ট বাধা দেয়।জাপানিরা বেশিদিন বা লম্বা সময় বেঁচে থাকার একমাত্র জাদুকাঠি হলো-সবুজ শ্যাওলা বা স্পিরুলিনা। জাপানে এটি নড়ি নামে পরিচিত। জাপানিরা খাবারের সময় প্রচুর পরিমানে স্পিরুলিনা খায়।

    রোগ প্রতিরোধে স্পিরুলিনারঃ- বিসিএসআইআর’র বায়োলজিক্যাল রিসার্চ ডিভিশন সূত্রে জানা যায়, বর্তমান বাজারে স্পিরুলিনা ট্যাবলেট, ক্যাপসুল, পাউডাররূপে পাওয়া যায়। এছাড়া চা পাতি বা রুটি, আলুভর্তা, নুডলস্, শরবত, হালুয়া ইত্যাদিতে স্পিরুলিনা মিশিয়ে নানা জাতীয় খাবার তৈরি করা সম্ভব।
    উপকারিতা ও গুনাবলি:

    ৬০-৬৩% উদ্ভিজ্জ আামিষ স্পিরুলিনায় আছে যা কিনা মাংসের চাইতে ৩-৪ গুণ বেশি।
      স্পিরুলিনায় অধিক পরিমানে প্রোটিন, ভিটামিন, লৌহ ও একাধিক খণিজ পদার্থ থাকে।
    সাধারন খাবার হিসেবে এটি খাওয়া যাবে প্রতিদিন।
    মুল্যবান ভেষজ হিসেবে দেশে- বিদেশে স্পিরুলিনার প্রচুর চাহিদা রয়েছে।
      স্পিরুলিনা দেহের শক্তি যোগায় প্রচুর পরিমাণে।
    সাইক্লিস্ট ও অ্যাথলেটিকসদের জন্য স্পিরুলিনা উপকারী খাবার।
    স্পিরুলিনা একটি শক্তিবর্ধক সম্পূরক খাদ্য।
    স্পিরুলিনা নিয়মিত খেলে দৈনন্দিন পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে পুষ্টিহীনতা, রক্তশূন্যতা, রাতকানা, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, আলসার, বাত, হেপাটাইটিস ও ক্লান্তি দূর হবে।
    স্পিরুলিনার প্রায় অর্ধেকটাই আমিষ।
    দিনে মাত্র ১০ গ্রাম স্পিরুলিনা খেয়ে দৈনিক আমিষ চাহিদার ৭০% মেটানো সম্ভব।
    পেশিকলা গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে স্পিরুলিনা । এছাড়াও এটি শরীর থেকে বের করে দেয় দিনের পর দিন জমে ওঠা ক্ষতিকর সব টক্সিন।
    এটি পরিশ্রম করার ক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীরের ওজনও রাখে নিয়ন্ত্রনে।
    সবুজ শ্যাওলাতে ৬০% এর মত সব ভেজিটেবলের প্রোটিন আছে।
    প্রোটিন যুক্ত খাবার যেমন মাছ, মাংস, দুধ বা ডিমর চাহিদা স্পিরুলিনা পুরুন করতে পারে।

    গুণধর স্পিরুলিনাঃ-
    ১. আয়রন –  পালং শাকের থেকে ২৩ গুণ বেশী।
    ২. বিটা ক্যরোটিন – ( ভিটামিন অ ) গাঁজর থেকে ৩৯ গুণ বেশী।
    ৩. ক্যালশিয়াম –  দুধের থেকে ২৬ গুণ বেশী।
    ৪. প্রোটিন  – সয়াবিন থেকে ৩.৭০ গুণ বেশী।
    ৫. স্প্রিরুলিনায় ওমেগা ৩. ৬ ও ৯ আছে।

    গর্ভবতী মহিলাদের জন্য স্পিরুলিনার উপকারিতাঃ- গর্ভবতী মহিলাদের জন্য এটা বেশ কাজের। গর্ভবতী মহিলাদের আয়রনের অভাব পুরুন করার জন্য ডাক্তার সাধারণত লিভার খাবারের পরামর্শ দেন। স্পিরুলিনা লিভারের অপোজিট
    হিসাবে কাজ করে। বাচ্চাদের সবসময় সব পুষ্টি খাবার দেয়া সম্ভব হয়ে উঠে না বা সব
    খাবার বাচ্চারা খেতেও চায় না। পুষ্টি সমস্যা পুরুনে স্পিরুলিনা এক্ষেত্রে ভালো ভুমিকা রাখতে পারে।

    বাংলাদেশে গবেষণাঃ- ফ্রান্সের আর্থিক সহযোগিতায় ঢাকার বিসিএসআইআর গবেষণাগারে ফ্রান্সের বেক্মা পদ্ধতিতে স্পিরুলিনার চাষ শুরু হয়। সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা দেশের আবহাওয়া ও অর্থনৈতিক সমস্যার পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তীকালে স্পিরুলিনা চাষের কিছু পরিবর্তন করেন। বাংলাদেশে প্রথম বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ক্ষুদ্র শৈবাল স্পিরুলিনা চাষের শিল্পকারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়। বিসিএসআইআর’র কাছ থেকে পদ্ধতিটি ইজারা নিয়ে কয়েকটি উত্পাদনকারী প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে স্পিরুলিনা উত্পাদন ও বাজারজাত করছে। বর্তমানে বিসিএসআইআর গবেষণাগারের অধীনে বায়োলজিক্যাল রিসার্চ ডিভিশনের বিজ্ঞানীরা স্পিরুলিনার ব্যাপক কার্যকর ভূমিকা নিয়ে নানা ধরনের গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

    সতর্কতাঃ- শুকনা ও পরিষ্কার পাত্রে স্পিরুলিনা রাখতে হবে। বাতাস বা পানির সংস্পর্শে শুকনা স্পিরুলিনা খাওয়া যাবে না। বেশি মাত্রায় লৌহ ও ভিটামিনের কারণে ব্যবহারকারীর স্পিরুলিনা সহ্য না হলে স্পিরুলিনা খাওয়ার মাত্রা বা পরিমাণ কমিয়ে দিতে হবে।

    বাংলাদেশে চাষের সম্ভবনাঃ- বাংলাদেশের আবহাওয়া স্পিরুলিনা চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। ১৯৯৩ সন থেকে এদেশে স্পিরুলিনার চাষ শুরু হয়েছে। বাড়ির চৌবাচ্চা, বড় হাঁড়ি, ছাদের জলাধার ও প্লাস্টিকের গামলায় এর চাষ করা যায়।

    বাংলাদেশের বাজার সম্ভবনাঃ- বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ দারিদ্র্যসীমার কাছাকাছি বাস করে। স্বভাবতই দানাশস্য খাদ্যের চাহিদা কোনোমতে মিটলেও খাদ্যপ্রাণ অর্থাৎ প্রোটিনের ঘাটতি ব্যাপক। ডিম, দুধ, মাছ, মাংস প্রভৃতি সাধারণ মানুষের কাছে সহজলভ্য নয়। স্পিরুলিনা নামক শ্যাওলা অতি উচ্চমাত্রার প্রোটিন ও মিনারেলসমৃদ্ধ। বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানি এই শ্যাওলা দিয়ে ট্যাবলেট তৈরি করে অকল্পনীয় উচ্চমূল্যে বাজারজাত করছে। চিকিৎসকদের রোগীর ব্যবস্থাপত্র স্পিরুলিনা উল্লেখ করতে উৎসাহিত করা হয়। আর বয়স্ক মহিলা রোগীদের ফুড সাপ্লিমেন্ট হিসেবে স্পিরুলিনা একটি গতানুগতিক আইটেম। বাংলাদেশে সমুদ্র উপকূলে প্রাকৃতিক উপায়ে স্পিরুলিনা চাষ করলে দেশের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি কৃত্রিম উপায়ে এটির উৎপাদন সম্ভব কিনা তা নিয়েও গবেষণা করা যেতে পারে। বিশ্বে দামি খাবার হিসেবে এ শৈবালের বেশি চাষ হয় থাইল্যান্ডে। থাইল্যান্ডের ব্যাংককে বাংলাদেশী টাকায় প্রতি কেজি স্পিরুলিনা ১৪ হাজার, যুক্তরাষ্ট্রে ৮ হাজার, ইংল্যান্ডে ১০ হাজার, ফ্রান্সে ২৮ হাজার ও বাংলাদেশে ৬ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। বাংলাদেশে এর চাষ সম্প্রাসারন করা গেলে ভাল ফলাফল আশা করা যায়। বাংলাদেশের বিশাল এই সমুদ্রকে যদি কাজে লাগানো যায়, তবে খাদ্যের পাশাপাশি উপকূলীয় অঞ্চলের মৎস্যজীবী চাষীদের বিকল্প আয়ের উৎস হিসেবে শৈবাল চাষ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারবে।

    বাণিজ্যিক ভিত্তিতে যারা উত্পাদন করছেঃ- এভারগ্রিন এন্টারপ্রাইজ, সাভার, লাইফ লাইন ইন্টারন্যাশনাল (প্রজেক্ট বিল্ডার্স লিঃ), লাঙ্গলবন্দ, সোনাগাঁও, নেচার ফুড প্রোডাক্টস, ধামরাই, ওয়ান্ডার হার্বস, নয়াপুর, সোনারগাঁও, ইউরেকা ইন্টারন্যাশনাল, ধউর, উত্তরা, গ্রিনটেক গ্রিনহাউস বাংলাদেশ লি.।

    স্পিরুলিনা কিভাবে খাবেনঃ- বাংলাদেশেও বড় বড় ফার্মেসী গুলোতে স্পিরুলিনা পাওয়া যায়। বয়স্কদের জন্য এটা খুবই ভালো একটা খাবার। স্পিরুলিনা ট্যাবলেট এবং গুঁড়ো হিসেবে পাওয়া যায়। স্পিরুলিনার গুঁড়ো পানিতে গুলে খেতে পারেন। পরিশেষে একটি কথা; বাজার থেকে আজই স্পিরুলিনা কিনুন এবং কোমল পানীয় ড্রিংক্স ও জুস এর বদলে স্পিরোলিনা খান। সুস্থ থাকুন ও সুস্থ ইউন।

    পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াঃ- স্পিরুলিনা খাওয়া আরম্ভ করলে প্রথম কয়েকদিন পেটে একটু ভুটভাট করতে পারে। নিরুৎসাহ না হয়ে খাওয়া চালিয়ে গেলে পরবর্তীতে এই সমস্যা থাকবে না।

    যেখানে পাওয়া যাবেঃ- লাজ ফার্মা : কলাবাগান, ঢাকা। সিভিক পয়েন্ট : সায়েন্স ল্যাবরেটরি পুলিশ বক্স সংলগ্ন, মিরপুর রোড। নেচার ফুড প্রোডাক্টস : স্পেকট্রাম ইন্টারন্যাশনাল, নোয়াব ম্যানশন (২য় তলা), ৩৪ গ্রিন রোড, ধানমন্ডি। লাইফ লাইন ইন্টারন্যাশনাল : বিক্রয় কেন্দ্র, ৬৯২/ বি, বড় মগবাজার।

    স্পিরুলিনা সম্পর্কে ডাক্তারদের অভিমতঃ-
    ১। ভিটামিন এ, ভিটামিন বি ১২ এবং আয়রন- এই তিনটি ‘পুষ্টি’ উপাদান রক্ত তৈরীর জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ। এ তিনের সমন্বয়ে ওয়ান্ডার ফুড ‘স্পিরুলিনা’ ব্যতীত বিশ্বে অপর কোনো খাদ্যে আছে বলে আমার জানা নেই। – – – প্রফেসর ডাঃ বি চৌধুরী
    ২। আগামী দিনের মানব জাতির রক্ষাকল্পে শ্রেষ্ঠ, সফল খাদ্য হিসেবে ‘ওয়ান্ডার ফুড’ (স্পিরুলিনা) পরিদৃষ্ট হবে। মানব দেহে ঘাটতি পূরণে ‘ওয়ান্ডার ফুড’ (স্পিরুলিনা) ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। — – – বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

    ৩। বাংলাদেশের প্রতিটি স্বাস্থ্য সচেতন নাগরিকের মনোদৈহিক ও ঐশী শক্তি জোগাতে সম্পূর্ণ স্বাস্থ্য বান্ধব, বিপদ মুক্ত প্রাকৃতিক পরিবেশে সংগৃহিত ও প্রস্তুতকৃত স্পিরুলিনা প্লেটেনসিস-এর সার্বিক বিকাশ, ব্যবহার কামনা করছি। – – – – ডাঃ এইচ এম কে এম শামীমুল হাসান

    ৪। অপুষ্টিজনিত সমস্যা, রাতকানা রোগ, রক্তস্বল্পতা, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার ইত্যাদি সমস্যা সমাধানে স্পিরুলিনার ভূমিকা উল্লেখযোগ্য্। – – – ডাঃ এফ জেড মজিদ

    ৫। স্পিরুলিনা ট্যাবলেটে রয়েছে ৬০%-৭০% অত্যন্ত উচ্চ শ্রেণীর কোলেষ্টেরল মুক্ত প্রোটিন যা মানব দেহের ভারসাম্যতা রক্ষায় অপরিহার্য পুষ্টির উৎস। — সামুন্নাহার, পুষ্টিবিদ, বারডেম হাসপাতাল

    ৬। স্পিরুলিনা ট্যাবলেটে রয়েছে উচ্চ মাত্রায় জিএলএ যা মানব দেহের ক্ষতিকারক এলডিএলকে কমিয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। – – – – ডাঃ শহিদুল ইসলাম, হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ

    ৭। স্পিরুলিনা ট্যাবলেটে রয়েছে উচ্চ মাত্রায় বি ক্যারোটিন এবং আরও ১০টি ক্যারোটিনওয়েড যা বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার ও টিউমারের বৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করে। — ইন্টারনেট

    ৮। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মোকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এ আর চৌধুরী, সহযোগী অধ্যাপক মীর মেসবাহ উদ্দিন, ডার্মোটোলজি ও ভেনেরিওলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ জেড এম সাইফুল ইসলাম ২২ জন রোগীর উপর এবং বিসিএসআইআর-এর বিজ্ঞানীরা ৬০ জন রোগীর উপর স্পিরুলিনা নিয়ে গবেষণা চালান। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন ৯-১০ গ্রাম করে স্পিরুলিনা খাওয়ালে ৪-৬ মাস পর রোগীর আর্সেনিক জনিত চর্মরোগ সম্পূর্ণরূপে উপশম হয়।সুত্রঃকৃষি উদ্যোগতা