সাতক্ষীরায় সহিংসতার ঘটনা পর্যবেক্ষণে নাগরিক প্রতিনিধি দল : জামায়ত-শিবির ’৭১ এর বর্বরতা দেখিয়েছে

    0
    540

    ৩ মার্চ হরতাল চলাকালে জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা দোকানে ভাংচুর ও লুটপাট করার দু’সপ্তাহেও পুলিশ প্রশাসন ও ক্ষমতাসীন দলের নেতারা একবারের জন্য খোঁজ নিতে আসেনি। যারা হামলা চালিয়েছে তাদের চিনলেও বলার উপায় নেই। একটি স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক দেশে এটা ভাবা যায় না। এমতাবস্থায় জীবন নিয়ে বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে।
    শনিবার সকাল ৯টায় সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ব্যাংদহা বাজারে কেন্দ্রীয় নাগরিক প্রতিনিধি দলের সদস্যরা ২৮ ফেব্র“য়ারি জামায়াত নেতা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় ঘোষণার পর জেলা জুড়ে সহিংসতার ঘটনা পর্যবেক্ষণে এলে মুদি ও স্টোশনারি ব্যবসায়ী উজ্জ্বল সরদার ও বিমল সরদার এসব কথা বলেন।
    বেছে বেছে সংখ্যালঘুদের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভাংচুর ও লুটপাটের টার্গেট করা হয়েছে উল্লেখ করে ওই বাজারের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী অভিমন্যু সরকার, নিমাই ঢালী ও বিধান বিশ্বাসসহ কয়েকজন জানান, ২৮ ফেব্র“য়ারি ও পরবর্তী সহিংসতার ঘটনায় রাস্তায় গাছ ফেলে অবরোধ করে যেভাবে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে ফেলা হয় তাতে ’৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীদের নতুন করে যুদ্ধ ঘোষণার সামিল বলে মনে হয়েছে। সাতক্ষীরা জেলা শহর থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে, যদি দু’সপ্তাহেও পুলিশ এ বাজারে না আসতে পারে তা’হলে জনগণের টাকা দিয়ে পুলিশ পুষে লাভ কি? একই কথা বলেন, ৩ মার্চ জামায়াত-শিবিরের লুটপাটের পর অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ভস্মিভূত হওয়া বঙ্গবন্ধু স্মৃতি পাঠাগারের সভাপতি শেখ মুনায়েম হোসেন।
    সকাল ১০টার দিকে প্রতিনিধিদলের সদস্যরা কদমতলায় নিহত সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এবিএম মামুনের বাড়িতে গেলে সহিংসতার ঘটনা বর্ণনা দিতে যেয়ে অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক আকরাম হোসেন বলেন, যেভাবে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করার পর দোতলা থেকে মারতে মারতে নীচে নামিয়ে ডোবার মধ্যে ফেলে তার ছেলেকে ইট দিয়ে থেঁতলে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে তা একজন সুস্থ ব্যক্তির দ্বারা কাম্য নয়। সহায়তা চেয়ে পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের সাড়া না পেয়ে মামুনকে মরতে হলো উল্লেখ করে তিনি বলেন, এরপরও দোষী পুলিশ কর্মকর্তা সদর থানার ওসি গাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীম রয়েছেন বহাল তবিয়তে। নিজের চেয়ার ঠিক রাখতে একটি মহলের চাপে আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের কুড়িকাহনিয়া গ্রামের জামায়াত বিরোধী জনগণের নেতা নূরে আলম ছিদ্দিকিকে ১৪ মার্চ শহরের পোস্ট অফিস মোড় থেকে আটক করে মামুন হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠিয়েছে। অথচ ফিংড়ি ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান, জেলা জামায়াতের সাবেক প্রচার সম্পাদক আলতাফ হোসাইনসহ একটি চক্র প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাদের ধরছে না। মামুনের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস অবিলম্বে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে বলেন, দলীয় নেতা বা পুলিশ নয়, জনগণ সংগঠিত হয়ে এর প্রতিবাদ না করলে হত্যাকারীদের হাত শক্ত হবে।
    জামায়াত-শিবিরের হামলা ও অগ্নিসংযোগে পুঁড়ে যাওয়া কোরআন শরীফ প্রতিনিধি দলের সদস্যদের দেখিয়ে কুচপুকুর গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত পলাশ, কবীর ও রবিউল ইসলাম বলেন, যারা মিছিল ও হামলার নেতৃত্ব দিয়েছিল তাদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন নেতার সখ্যতার ফলে আজও তারা এলাকায় থেকে হুমকি দিচ্ছে।
    সাতক্ষীরার কুচপুকুর, কদমতলা ও ব্যাংদহা এলাকা ঘুরে দুপুর ১২টায় সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে নাগরিক প্রতিনিধি দলের সদস্য সম্প্রীতি মঞ্চের ড্যানিশ দিলীপ দত্ত, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের অসিত বরন রায়, গণ ঐক্যের এ্যাড.এসএম সবুর, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারি অধ্যাপক রাজীব মীর, কাপিং ফাউন্ডেশনের দীপায়ন খিসা, সাংবাদিক সালিম সামাদ, নোমান চৌধুরী, বদিয়ার রহমান, এ্যাড. নিলুফার বানু, মাহফুজা হক ও কাপেট ফাউণ্ডেশনের সদস্য প্রবট চাকমা স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় মিলিত হন।
    ওয়ার্কাস পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য বিমল বিশ্বাস প্রেস ব্রিফিং-এ বলেন, ’৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ ও সাঈদীর বিরুদ্ধে বিশেষ ট্রাইব্যুনালের পরবর্তী তাণ্ডবের হুবহু মিল রয়েছে। নোয়াখালির বেগমগঞ্জ, কক্সবাজারের রামু, কালিগঞ্জের ফতেপুর ও চাকদহসহ বিভিন্ন স্থানে সম্প্রতি সংখ্যালঘুদের বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও উপাসনালয়ে যে তাণ্ডব চালানো হয়েছে তা মক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তির নতুন পাকিস্তান বানানোর চেষ্টারই নামান্তর। জামায়াত ও শিবির সাতক্ষীরায় বর্বরোচিত হামলা চালিয়ে নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে। তাদের বাড়িঘর, দোকানপাটে আগুন জ্বালিয়ে একাত্তরের বীভৎসতার পুনরাবৃত্তি ঘটিয়েছে। এদের সমূলে নিধন করতে ক্ষুদ্র স্বার্থ পরিহার করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জনপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
    বিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে উল্লেখ করে তারা বলেন, জিয়াউর রহমান ইনডেমনিটি অর্ডার পাশ করিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের জেল থেকে মুক্তি দিয়ে রাজাকার, আলবদর ও আল সামসদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসতে সহযোগিতা করেছে।
    বিএনপি, জামায়াত ও আর্ন্তজাতিক শক্তি আমেরিকা, যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে তারা বলেন, নতুন মুক্তিযুদ্ধ শুরু করতে হবে, নইলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিলুপ্ত হয়ে সাম্প্রদায়িক শক্তি প্রতিষ্ঠিত হবে।
    মতবিনিময় সভায় সাতক্ষীরার সার্বিক ঘটনা নিয়ে উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন, প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, সাধারণ সম্পাদক মোজাফ্ফার রহমান, কল্যাণ ব্যাণার্জি, মোস্তাফিজুর রহমান উজ্জল, আব্দুল বারি, অসীম কুমার চক্রবর্তী, রঘুনাথ খাঁ প্রমুখ।
    জামায়াত শিবিরের এই তাণ্ডব সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের ব্যর্থতার কারণে সম্ভব হয়েছে মন্তব্য করে তারা বলেন, পুলিশ ও সরকারের প্রতি নির্ভরশীলতা কমাতে হবে। অবিলম্বে ক্ষতিগ্রস্তদের যথেষ্ট ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। মামুন হত্যাকারীসহ তাণ্ডব সৃষ্টিকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে প্রতিনিধি দলের কর্মকর্তারা আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এই শক্তিকে প্রতিহত করতে না পারলে বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষতার মর্যাদা নষ্ট হবে। গণজাগরণ মঞ্চের সাথে ঐকমত্য প্রকাশ করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ত্বরান্বিত করার আহবান জানান তারা। সাতক্ষীরার জামায়াত শিবিরের তাণ্ডবে প্রশাসনের অবহেলাকারীদের চিহ্নিত করে তাদের শাস্তির বিধান করার ওপরও নেতৃবৃন্দ গুরুত্ব আরোপ করেন । 

    সাতক্ষীরায় সহিংসতার ঘটনা পর্যবেক্ষণে নাগরিক প্রতিনিধি দল : জামায়ত-শিবির ’৭১ এর বর্বরতা দেখিয়েছে
    সাতক্ষীরায় সহিংসতার ঘটনা পর্যবেক্ষণে নাগরিক প্রতিনিধি দল : জামায়ত-শিবির ’৭১ এর বর্বরতা দেখিয়েছে