শ্রীমঙ্গলে বিষক্রিয়ায় প্রেমিকের মৃত্যু নিয়ে মামলাঃআত্মহত্যা না প্ররোচনা চলছে জল্পনা কল্পনা

0
454
শ্রীমঙ্গলে বিষক্রিয়ায় প্রেমিকের মৃত্যু নিয়ে মামলাঃআত্মহত্যা না প্ররোচনা চলছে জল্পনা কল্পনা
ছবি-নিহত জুনেদ মিয়া (২১)

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ  মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে প্রেমের সূত্র ধরে টগবগে এক যুবকের বিষক্রিয়ায় অকাল মৃত্যুবরণ নিয়ে উপজেলাজুড়ে বিরাজ করছে নানা জল্পনা কল্পনা। এই মৃত্যু আত্মহত্যা না প্ররোচনা? নিহত যুবকের পিতার দাবী বিষ পানে প্ররোচনা দিয়েছে মেয়েটির পরিবার এবং কথিত প্রেমিকের পরিবারের দাবি “কোথায় বিষ খেয়েছে তাদের জানা নেই। তবে একজন নারী তাদের এক আত্মীয়াকে ফোন করে আমাদেরকে বিষ খাওয়ার কথা জানিয়েছে।“

পুলিশের সুত্রে জানা গেছে মৃত যুবকের বাবা শামসু মিয়া মেয়েটির পরিবারকে প্ররোচনায় বিষ পানে বাধ্য করেছে মর্মে শ্রীমঙ্গল থানায় মামলা দায়ের করেছে। অপরদিকে প্রেমিকার পরিবারের দাবি “ছেলেটি আমাদের বাড়িতে এসে হুমকি প্রদান করায় আমরা থানায় অভিযোগ করেছি।“

জানা যায়, বিষক্রিয়ায় নিহত জুনেদ মিয়ার পিতার নাম সামসু মিয়া, তিনি একজন গাড়ি চালক।নিহত জুনায়েদ শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল এর আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব ছিলেন, লেখাপড়ার ফাঁকে কাজ করতেন হবিগঞ্জ রোডস্থ টি টাউন রেস্ট হাউসে। বসবাস করতেন শহরের বিরাহিমপুর এলাকায়।

অপরদিকে নিহত জুনেদের প্রেমিকা ও জেলা শহরের একটি মহিলা কলেজে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। তার বাবা একজন বাগান ব্যবসায়ী। বসবাস করেন ৬ নং আশিদ্রোন ইউপি এলাকার মহাজেরাবাদ গ্রামে। 

মামলা সুত্রে জানা যায়,নিহত জুনেদের পিতা দাবী করেছে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে গিয়ে তার ছেলে জুনেদকে প্রেমিক হিসেবে বিষ খেয়ে প্রমাণ করতে বলায়,বিষপানে আত্মহত্যা করেছে যুবক জুনেদ।এ সময় তার দুই বন্ধুও ঘটনাস্থল থেকে দূরে মহাজেরাবাদ স্কুলের সম্মুখে অবস্থান করছিলেন।এ ঘটনায় জুনেদের বাবা তিন জনের নাম উল্ল্যেখ করে এবং ৩/৪ জনকে অজ্ঞাত রেখে একটি মামলা দায়ের করেছে।মামলা নং-২৭,ধারা-৩০৬,৫০৬,৩৬।

সরেজমিন গেলে,হামিদুল্লার স্ত্রী সেলিনা বেগম প্ররোচনার কথা অস্বীকার করে বলেন,আমার ও সন্তান আছে।ছেলেটি (জুনেদ)হঠাৎ আমাদের ঘরে এসে আমার মেয়েকে তার কাছে বিয়ে দিতে বলে, আমি পূর্বে তাকে চিনি না। এ সময় আমার মেয়ে ও এসে পরে। সে (জুনেদ) বলে তার বাবা-মা অন্যত্র তাকে বিয়ে করাতে চাচ্ছে এসময় আমার পায়ে ধরে অনুরোধ করতে থাকে আমি তাকে মানা করি আমাদের ঘরে একজনও পুরুষ লোক নেই,আমার স্বামী যদি ঘরে এসে দেখে তুমি এখানে, তাহলে আমার পরিবারে অশান্তি সৃষ্টি হবে।তাছাড়া আমার স্বামী হার্ডের রোগী ডাক্তার তাকে কোন টেনশন দিতে নিষেধ করেছে।ছেলেটিকে বুঝাতে চেষ্টা করি বাবা তুমি তোমার মা বাবার কথামতে চলার চেষ্টা করো। এখন আমার মেয়েকে বিয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানায় এবং তার (জুনেদের) মা-বাবার মতামতে ঠিক করা স্থানে বিয়ে করতে বলে ঘর থেকে চলে যেতে বলি।সে চলে যায়।

এ সময় সেলিনা বেগমের মেয়ের সাথে কথা বললে,মেয়েটি স্বীকার করে তাদের মাঝে একটি রিলেশন ছিল প্রায় ৩/৪ বছর ধরে যা কয়েকবার ব্রেকাপ হয়,জুনেদকে বারবার বুঝাতে চেষ্টা করেছে বুঝাতে। কিন্তু সে কোন বুঝ মানে না,নম্বার পরিবর্তন করলেও খুঁজে বের করে ফোন করতে থাকে।বহু অনুরোধ করে বলেছি এখন আমার বিয়ে পরিবার থেকে দিবেনা কারণ আমার আত্মীয়ের মধ্যে বড় বোনেরা রয়েছে এবং পালিয়েও যেতে পারবোনা মা বাবার সম্মান নষ্ট করবোনা।এক প্রশ্নের জবাবে মেয়েটি জানায়, আমাদের ঘরে সে বসেনি কিছু খাইতেও দেয়নি বা কিছু খাইতে দেখিনি।     

অপরদিকে জুনেদের বন্ধু পায়েল ও সাজু নামের দুজন জানায়, জুনেদকে মেয়েটি তার মাকে রাজি করাতে তাদের বাসায় যাবার জন্য বলেছিল। শুক্রবার (২৮ জানুয়ারী) দুপুর ২ টার দিকে জুনেদ, বন্ধু পায়েল ও সাজুকে সাথে নিয়ে মহাজেরাবাদ মেয়েটির বাবার বাড়িতে যায়। এসময় তাদেরকে প্রেমিকার বাড়ির আশে পাশে রেখে চাঁদনীদের বাড়িতে প্রবেশ করে। এর কিছুক্ষণ পর জুনেদ চাঁদনীদের বাড়ি থেকে দৌড়ে বের হয়ে বলে আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাও আমার আব্বাকে খবর দাও।

আমরা জুনেদকে দ্রুত শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে (বিকেল ৩ টা ১৫ মিঃ) নিয়ে গেলে সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে ডাক্তার রেফার করে পরে মৌলভীবাজার থেকে সিলেট ওসমানীতে রেফার করে কিন্ত রাস্তাতে তার অবস্থা আরোও খারাপ হতে থাকলে ওসমানীতে যাওয়ার আগে আল-রাহিয়ান হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। অবশেষে সেখানে শনিবার (২৯ জানুয়ারি ২০২২ ইং) তারিখ সকাল ১০ টা ৫৫ মিনিটে জুনেদকে ডাক্তার মৃত ঘোষনা করেন। 

উল্লেখ্য,শনিবার দুপুরে ২ টার দিকে সিলেট থেকে জুনেদের মৃতদেহ শ্রীমঙ্গল থানায় নিয়ে আসলে শতাধিক লোক সেখানে ভীড় করে। আত্মীয় স্বজনের আহাজারিতে পুরো থানা চত্বরের পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। শেষে ময়না তদন্তের জন্য মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে মৃতদেহ প্রেরণ করে শনিবার রাতেই কলেজ রোডস্থ গোরস্থানে দাফন করা হয়।

এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল থানার ওসি (তদন্ত) হুমায়ুন কবির বলেন, এ বিষয়ে দু’তিন জনের নাম উল্লেখ করে এবং ৩/৪ জনকে অজ্ঞাত রেখে একটি মামলা হয়েছে।ঘটনার তদন্ত চলছে।তদন্তের প্রেক্ষিতে আসামিদের আটক করা হবে এবং ময়না তদন্তের প্রেক্ষিতে চূড়ান্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।