শ্রীমঙ্গলে আজ বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস পালিত

0
191

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ আজ বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস। এ উপলক্ষে সারা দেশের ন্যায় শ্রীমঙ্গল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সচেতনতামূলক আলোচনা সভা ও র‍্যালীর আয়োজন করা হয়।
শ্রীমঙ্গল ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের ইউএইচএফপিও ডা. সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন ডা. পার্থ সারথি সিংহ (এমওডিসি), ডা. সনি কুমার সাহা (আরএমও), ডা. শুচিশ্রী সাহা (মেডিকেল অফিসার) সহ হাসপাতাল ও ফিল্ডের স্টাফবৃন্দ।
এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় “আগামীতে নিজেকে সুরক্ষায় ডায়াবেটিসকে জানুন”।

চিকিৎসকদের সুত্রে জানা যায়,বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে ১৯৮০ সালে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ছিল প্রায় ১১ কোটি। ২০১৪ সালে সেটা বেড়ে হয় ৪২ কোটিরও বেশি। ১৯৮০ সালে ১৮ বছরের বেশি বয়সী মানুষের ডায়াবেটিস হওয়ার হার ছিল ৫ শতাংশেরও কম কিন্তু ২০১৪ সালের তাদের সংখ্যা বেড়ে দাড়িযেছে ৮ দশকি ৫ শতাংশ।

*ডায়াবেটিস হয়েছে কিভাবে বুঝবেন
১৷ ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া
২। খুব বেশী পিপাসা লাগা
৩। বেশী ক্ষুধা পাওয়া
৪। যথেষ্ঠ খাওয়া সত্ত্বেও ওজন কমে যাওয়া
৫। ক্লান্তি ও দুর্বলতা বোধ করা
৬। ক্ষত শুকাতে দেরী হওয়া
৭। খোশ-পাঁচড়া,ফোঁড়া প্রভৃতি চর্মরোগ দেখা দেওয়া
৮। চোখে কম দেখা।

ডায়াবেটিসের প্রকারভেদ:

-ডায়াবেটিসের মূলত চারটি ধরন রয়েছে:

ক) ধরন ১ (টাইপ.১)- এই ধরনের রোগীদের শরীরে ইনসুলিন একেবারেই তৈরী হয় না। সাধারণতঃ ৩০ বৎসরের কম বয়সে (গড় বয়স ১০-২০ বৎসর) এ ধরনের ডায়াবেটিস দেখা যায়। সু্‌স্থ্য থাকার জন্য এ ধরনের রোগীকে ইনসুলিন নিতে হয়। এই ধরনের রোগীরা সাধারনত কৃষকায় হয়ে থাকেন।

খ) ধরন ২ (টাইপ.২)- এই শ্রেণীর রোগীর বয়স অধিকাংশ ক্ষেত্রে ত্রিশ বৎসরের উপরে হয়ে থাকে। তবে ত্রিশ বৎসরের নিচে এই ধরনের রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে। এই ধরনের রোগীদের শরীরে ইনসুলিন তৈরী হয় তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ঠ নয় অথবা শরীরে ইনসুলিনের কার্যক্ষমতা কমে যায়। অনেক সময় এই দুই ধরনের কারণ একই সাথে দেখা দিতে পারে। এই ধরনের রোগীরা ইনসুলিন নির্ভরশীল নন। অনেক ক্ষেত্রে খাদ্যাভাসের পরিবর্তন এবং নিয়িমিত ব্যয়ামের সাহায্যে এদের চিকিৎসা করা সম্ভব। এই ধরনের রোগীরা বেশীরভাগ ক্ষেত্রে স্থূলকায় হয়ে থাকেন।

গ) অন্যান্য নির্দিষ্ট কারণ ভিত্তিক শ্রেণী-

১. জেনেটিক কারনে ইনসুলিন তৈরী কম হওয়া
২. জেনেটিক কারনে ইনসুলিনের কার্যক্ষমতা কমে যাওয়া
৩. অগ্ন্যাশয়ের বিভিন্ন রোগ
৪. অন্যান্য হরমোনের আধিক্য
৫. ঔষধ ও রাসায়নিক দ্রব্যের সংস্পর্শ
৬. সংক্রামক ব্যধি
৭. অন্যান্য কোন প্রতিরোধ ক্ষমতার জটিলতা

এই ধরনের রোগী ক্ষীণকায় ও অপুষ্টির শিকার হয়ে থাকে এবং ইনসুলিন ছাড়া অনেক দিন বেঁচে থাকতে পারে। এই ধরনের রোগীর বয়স ৩০ বৎসরের নিচে হয়ে থাকে।

ঘ) গর্ভকালীন ডায়াবেটিস-

অনেক সময় গর্ভবতী অবস্থায় প্রসূতিদের ডায়াবেটিস ধরা পড়ে। আবার প্রসবের পর ডায়াবেটিস থাকে না। এই প্রকারের জটিলতাকে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস বলা হয়। গর্ভবতী মহিলাদের ডায়াবেটিস হলে গর্ভবতী,ভ্রুণ,প্রসূতি ও সদ্য-প্রসূত শিশু সকলের জন্যই বিপদজনক হতে পারে। বিপদ এড়ানোর জন্য গর্ভকালীন অবস্থায় ডায়াবেটিসের প্রয়োজনে ইনসুলিনের মাধ্যমে বিশেষভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা দরকার। এই ধরনের রোগীদের প্রসব হাসপাতালে করা প্রয়োজন।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে করণীয়

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে চারটি নিয়ম মানতে হয়ঃ

১. নিয়ন্ত্রিত খাদ্য গ্রহণ
২. সাধ্যমত কায়িত পরিশ্রম ও ব্যায়াম
৩. ঔষধ
৪. শিক্ষা
পথ্য ও বাড়তি সতর্কতা
১. আঁশবহুল খাবার (ডাল,শাক,সবজি,টক ফল ইত্যাদি) বেশী খেতে হবে
২. উদ্ভিদ তেল,অর্থাৎ সয়াবিন তেল,সরিষার তেল ইত্যাদি এবং সব ধরনের মাছ খাওয়া অভ্যাস করতে হবে
৩. ওজন স্বাভাবিক রাখতে হবে।
৪. চিনি-মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়া বাদ দিতে হবে
৫. চাল,আটা দিয়ে তৈরী খাবার,মিষ্টি ফল ইত্যাদি কিছুটা হিসেব করে খেতে হবে।
৬. ঘি,মাখন,চর্বি,ডালডা,মাংস ইত্যাদি কম খেতে হবে।
৭. অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হলে অর্থাৎ অসু্‌স্থ অবস্থায় বিশেষ খাদ্য-ব্যবস্থা জেনে নিতে হবে।