লোডশেডিংয়ের কারণে উৎপাদন মৌসুমে হুমকির মুখে চা-শিল্প

0
317
লোডশেডিংয়ের কারণে উৎপাদন মৌসুমে হুমকির মুখে চা-শিল্প
লোডশেডিংয়ের কারণে উৎপাদন মৌসুমে হুমকির মুখে চা-শিল্প

নূরুজ্জামান ফারুকী,বিশেষ প্রতিনিধি: জুলাই থেকে অক্টোবর মাসকে বলা হয় চা উৎপাদন মৌসুম। এ সময়ে প্রতিটি বাগানের ফ্যাক্টরিতে ক্ষেত্র ভেদে পাঁচ থেকে ৭০ হাজার কেজি চা পাতা আসে প্রক্রিয়াজাতের জন্য।

কিন্তু বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ফলে এই কাঁচাপাতা প্রক্রিয়াজাত করতে সমস্যায় পড়ছেন বাগান মালিকরা। আর এতে করে জেলার চারটি উপজেলায় ২৪টি চা বাগানের চায়ের উৎপাদন অব্যাহত লোডশেডিংয়ের কারণে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে চা শিল্প।

নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকায় চা বাগানের কারখানাগুলো ২৪ ঘণ্টা চালু রাখা যাচ্ছে না। এতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ও গুণগত মান নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। যার প্রভাব পড়বে আগামী রফতানি বাজারে।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ে লোডশেডিং শিডিউল চালু হওয়ায় এই কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে দেশের অন্যতম অর্থকরী ও রফতানিযোগ্য ফসল চা। হবিগঞ্জসহ সারা জেলায় লোডশেডিং প্রতিদিন পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা স্থায়ী হচ্ছে। কোনো কোনো এলাকায় লোডশেডিংয়ের মাত্রা আরো বেশি। যার ফলে চলতি বছর থেকে ৫ হাজার কোটি কেজি চায়ের যে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের প্রত্যাশা করা হয়েছিল, তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন খোদ চা শিল্প সংশ্লিষ্টরা।

জানা যায়, সারা দেশে মোট ১৬৩টি চা বাগানের মধ্যে হবিগঞ্জ জেলার শুধু ৪টি উপজেলা মধ্যে মাধবপুর, চুনারুঘাট, বাহুবল ও নবীগঞ্জে রয়েছে ছোট-বড় মোট ২৪টি চা বাগান। এখানকার চায়ের গুণগত মান অন্য এলাকার চা থেকে অনেক ভালো এবং দেশের অধিকাংশ চা উৎপাদন হয় হবিগঞ্জ জেলায়। দেশের অভ্যন্তরীণ চায়ের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও এ অঞ্চলের চা রফতানি করা হয়। তবে হঠাৎ করে লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ায় চা শিল্প এখন নানামুখী সঙ্কটে পড়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

চা শিল্পের সাথে জড়িতরা বলছেন, হঠাৎ করে লোডশেডিংয়ের মাত্রা তীব্র হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে উৎপাদন প্রক্রিয়া। এতে করে নষ্ট হচ্ছে চায়ের গুণগত মান। যার প্রভাব পড়বে রফতানি বাজারেও।

অন্যদিকে জেনারেটর চালিয়ে চায়ের কারখানাগুলোকে সচল রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। কারণ এতে ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে অনেক। আবার চাহিদা অনুযায়ী জ্বালানি তেল না পাওয়ার কথাও বলছেন তারা। এমন বিপর্যয়কর পরিস্থিতি থেকে সহসা উত্তরণের কোনো আশাও দেখাতে পারছে না হবিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। সব মিলিয়ে একধরনের হতাশা দেখা দিয়েছে চা বাগানগুলোর মালিক,কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ভুক্তভোগীদের।

মাধবপুর উপজেলার সুরমা চা বাগানের মহা-ব্যবস্থাপক মো. আবুল হোসেন জানান, ১ ঘন্টা লোডশেডিং মানে আমাদের দুই ঘন্টা লস শুধু উৎপাদন লসনা কোয়ালিটিও লস, এভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে কোয়ালিটি চা ধরে রাখা খুবই কঠিন। কর্তৃপক্ষ যদি বাগানের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা করে দেয় তাহলে উৎপাদন খরচটা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাবে।

লালচান্দ চা বাগানের ব্যবস্থাপক মোফাজ্জল হোসেন ও নোয়াপাড়া চা বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক সোহাগ বলেন, হবিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুতের লাইন চা বাগানে ব্যবহার করি কিন্তু প্রতিদিন লোডশেডিং কারণে আমাদের চা বাগানসহ সকল চা বাগানে মারাত্মক সমস্যা হচ্ছে।

দেউন্দি চা বাগানের সিনিয়র ব্যবস্থাপক রিয়াজ উদ্দিন বলেন, চায়ের ভরা মওসুমে প্রন্ড খড়ায় আমাদের সেচ দিতে হচ্ছ। নতুন করে বিদ্যুৎ সমস্যা আমাদের মরার উপর খাড়ার গা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেচ এবং জেনারেটর ব্যবহারে উৎপাদন খরচ কয়েকগুন বাড়ছে।

হবিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির উপ-মহাব্যবস্থাপক মাসুম মোল্লা জানান, চা-বাগানগুলো একই ফিডারে উপজেলা ভিত্তিক তাদেরকে ব্যাবস্থা করে দিতে কাজ চলছে। আশা করছি তা হলে গেলে তাদের সুযোগ সুবিধা বেড়ে যাবে।