মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবে নারী সাংবাদিককে বহিষ্কার সংক্রান্ত বিষয়ে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন

0
401
মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবে নারী সাংবাদিককে বহিষ্কার সংক্রান্ত বিষয়ে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন এর একাংশ

হাইকোর্টের আদেশে নিষ্পতির নির্দেশ যৌথমূলধনের।

স্টাফ রিপোর্টারঃ মৌলভীবাজারের এক নারী সাংবাদিকের ফল উৎসব আয়োজনকে কেন্দ্র করে প্রেসক্লাবের সভাপতি এম.এ.সালাম ও সাধারণ সম্পাদক পান্না দও ক্ষমতার অপব্যবহার করে বেআইনী ভাবে প্রেসক্লাব থেকে বহিষ্কারের অভিযোগ উঠেছে।

পরবর্তীতে মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশে বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে যৌথমূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর থেকে মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবকে একটি পত্র পাঠানো হয়। বৃহস্পতিবার (১২ মে) দূপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে অয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করে এসব জানান দৈনিক ভোরের পাতা ও দি পিপলস টাইমের মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি এ.এস.কাঁকন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নাসিমুন আরা হক মিনু ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল নোমান।

লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবের তিনি প্রথম নারী সদস্য এবং ২০২০-২০২২ সালের নির্বাচনে বিজয়ী প্রথম নারী ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক। মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবে ফল উৎসব আয়োজনকে কেন্দ্র করে গত ২০-০৭ ২০২১ তারিখে সভাপতি এম. এ সালামের একান্ত অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক পান্না দত্ত সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ এনে তার বিরুদ্ধে অসত্য, ভিওিহীন ও সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে কারন দর্শানোর নোটিশ প্রদান করেন। তিনি গত ২-০৮-২০২১ তারিখ লিখিত জবাবে বিষয়টি কার্যকরী কমিটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ জানান।

নোটিশে ১৪ দিনের মধ্যে জবাব দেয়ার কথা উল্লেখ থাকলেও জবাব দেয়ার প্রায় ৩ মাস ৩ দিন পর গত ৬ নভেম্বর ২০২১ ইংরেজি শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় মৌলভীবাজার প্রেসক্লাব ভবনে কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় এ প্রসঙ্গটি উত্থাপিত হয়।

তিনি জানান সভায় নির্বাহী কমিটির অধিকাংশ সদস্য নারী সাংবাদিকের পক্ষে নীতিগত অবস্থানে অনড় থাকায় সভাপতি সভাস্থল ছেড়ে চলে যান। পরে কিছু নির্বাহী কমিটির সদস্য সভাপতিকে সভাস্থলে পূনরায় আসার অনুরোধ করেন। ওই সময় সভাপতি শর্ত সাপেক্ষে প্রেসক্লাবের সভা কক্ষে ফিরেন এবং তার নির্দ্দেশনা মানতে সকলকে বাধ্য করেন। তিনি বলেন সভায় নির্বাহী কমিটির অধিকাংশ সদস্যরা তার কারন দর্শানোর নোটিশের জবাবে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বিষয়টি শেষ করতে চাইলেও সভাপতি তা মানতে চাননা। এসময়  তার জবাব সন্তুষজনক নয় বলে দাবি করে সভাপতি বলেন এটি সংগঠনের বিরুদ্ধে তার গুরুতর অপরাধ, যা ক্ষমার অযোগ্য। তাৎক্ষণিক সভার অন্যান্য সদস্যরা নারী সাংবাকিকে সভাপতির কাছে আবার ক্ষমা চওয়ার কথা বলেন, নারী সাংবাদিক সবার প্রতি সম্মান রেখে আবারও সভা চলা কালে দাঁড়িয়ে সভাপতির প্রতি হাতজোড় করে ক্ষমা চান। কিন্তু সভাপতি  তার প্রতি অশালীন আচরণ করেন এবং সভাপতি কারো কোন কথা না শুনে তার একক সিদ্ধান্তে নির্বাচিত ক্রিড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদককে কাঁকনকে বহিষ্কার করতে বলেন। ওই সভা চলাকালিন অবস্থায় সভাপতি তাকে তুই-তোকার করে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে সবার সামনে অপমানও করেন। সবার সামনে বলেন তার বাসায় গিয়ে বিষয়টি শেষ করলো না কেন। সভায় বাকি সদস্যরা তখন সভাপতিকে অনুরোধ করেন বিষয়টি আর না বাড়িয়ে এখানেই শেষ করার জন্য। কিন্তু সভাপতি সাধারণ সম্পাদক কোন কথা না শুনে সংবাদিক এ.এস.কাঁকনকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেন। তবে এ বহিষ্কারের সিদ্ধান্তের লিখিত কপি এখনও তাকে দেয়া হয়নি বলে সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান।

সংবাদিক  এ.এস.কাঁকন আরও জানান, তার প্রতি এ অন্যায়ের প্রতিকার চেয়ে মহামান্য হাইকোর্টের স্বরণাপন্ন হন। যথাযথ প্রমাণসহ মহামান্য হাইকোর্টে একটি রিটপিটিশন দায়ের করেন (রীট পিটিশন নাম্বার ১১৭১৭/২০২১)। গত ৫ ডিসেম্বর ২০২১ ইং রিটের পক্ষে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল নোমান। শুনানি শেষে বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম বিচারপতি মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে রেজিষ্ট্রার জয়েন্ট স্টক কোম্পানি ও ফার্মের নিবন্ধক (আরজেএসসি) কে নির্দেশ দেন। হাইকোর্টের নির্দেশ ও সংবাদিক  এ.এস.কাঁকন এর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৬-০৪-২০২২ ইংরেজি তারিখে যৌথমূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর থেকে তাকে

প্রেসক্লাব থেকে অন্যায়ভাবে বহিষ্কারের আদেশ বাতিল প্রসঙ্গে মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবকে একটি পত্র পাঠানো হয়। যেখানে উল্লেখ করা হয় মৌলভীবাজার প্রেসক্লাব নামীয় সোসাইটি গত ৬-১২-১৯৮৭

তারিখে নিবন্ধিত হবার পর থেকে নির্বাহী পর্ষদের কোন তালিকাই তাদেরকে দাখিল করেননি, যেখানে সোসাইটি রেজিষ্ট্রেশন অ্যাক্ট-১৮৬০ এর ৪ ধারা অনুযায়ী প্রত্যেক বছর নির্বাহী পর্ষদের তালিকা তাদের নিকট দাখিল করার বিধান রয়েছে। পত্রে আরও উল্লেখ করা হয় যে সোসাইটি রেজিষ্ট্রেশন অ্যাক্ট-১৮৬০ এর ৪ ধারা অনুযায়ী নির্ধারিত ফি প্রদান সাপেক্ষে অনলাইনের মাধ্যমে নির্বাহী পরিষদের তালিকা দাখিল করার জন্য এবং একই সাথে এ.এস.কাঁকন কর্তৃক উপস্থাপিত অভিযোগ সোসাইটির রুলস ও রেগুলেশন অনুযায়ী নিষ্পওির জন্য।

এ.এস.কাঁকন তার লিখিত বক্তবে আরও বলেন, মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবের গত (২০২০-২০২২) সালের ২ বছর মেয়াদে নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে দ্বায়িত্ব গ্রহনের পর থেকে এই কমিটির সভাপতি এম এ সালাম ও সাধারণ সম্পাদক পান্না দত্তের কাছে প্রতিনিয়ত অশোভন আচরণের স্বীকার হন তিনি। নানা কৌশলে সভাপতি প্রায়ই হয়রানি করেন এবং তাঁর বাসায় যেতে বলেন। প্রথমে তার ইঙ্গিত বুজতে না পারলেও পরবর্তীতে যেকোন বিষয়ে কথা বললে সভাপতি যখন বারবার তার বাসায় গিয়ে কথা বলার জন্য বলেন তখন তিনি চিন্তিত হন এবং বিষয়টি এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেন। এতে পরিস্থিতি খারাপ হওয়া শুরু হয়। প্রতিনিয়ত তার সাথে আর বৈষম্যমূলক আচরণ, বিভিন্ন অনুষ্ঠানের দাওয়াত থেকে এমনকি সাংবাদিকতার বিভিন্ন ট্রেনিং থেকেও বঞ্চিত রাখা হয়।

কি করণে তার সাথে এমন আচরণ হচ্ছে সাধারণ সম্পাদকের সাথে কথা বলেন।  সাধারণ সম্পাদক তাকে জানান এসব বিষয়ে সব সিদ্ধান্ত সভাপতি নেন বলে তিনিও তাকে পরামর্শদেন সভাপতির বাসায় গিয়ে সব সমাধান করে নিতে। এমন পরিস্থিতিতে নারী সাংবাদিক আরও হতাশ হয়ে পরেন। কিন্তু সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কর্মকান্ড এখানেই সিমাবদ্ধ থাকেনা আর ভয়াবহ রুপনেয়। কমিটির সব ধরনের কার্যক্রম থেকে তাকে বঞ্চিত রাখার পাশাপাশি পেশাগত দ্বায়িত্বেও বাঁধা সৃষ্টি করা হয়। অকারণে সবার সামনে আমার সাথে অপমানজনক আচরণ করা হয়। এমনকি বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকীতে কমিটির সদস্যদের নিয়ে খেলাধুলার আয়োজন করতে চাইলে সাধারণ সম্পাদক তাকে সেটি করতে দেননি। কারণ হিসেবে বলেন নারী হিসেবে এত বড় আয়োজন তুমি সামলাতে পারবেনা। ক্লাবের সদস্যদের খেলাধুলার জন্য আমার ব্যাক্তিগত টাকায় কিছু খেলার উপকরণ সামগ্রী প্রেসক্লাবে দিতে চাইলে সেটিও নিতে আপওি জানান সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক। এসব কিছুর পরও কাঁকন নিরবে পেশাগত দায়িত্ব পাল করতে থাকেন। এতে আর ক্ষিপ্ত হয়ে সভাপতি নারী সাংবাদিককে হুমকি দেন সাংবাদিকতা ছাড়িয়ে বাসায় বসিয়ে দেবেন। এক পর্যায়ে মানসিক ভাবে ভেঙ্গে দিতে উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে প্রেসক্লাবে ফল উৎসব অনুষ্ঠান আয়োজন বিষয়কে ইস্যু করে তাকে বহিষ্কার করা হয়।

একজন নারী সাংবাদিক হিসেবে কাঁকন জানান, হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে রেজিষ্ট্রার জয়েন্ট স্টক কোম্পানিকে নির্দেশ দেন। নির্দ্দেশ পেয়ে জয়েন্ট স্টক কোম্পানি প্রেসক্লাব সভাপতিকে অন্যায়ভাবে বহিষ্কারের আদেশ বাতিল বলে নির্দ্দেশ দেন। এ আদেশ পাওয়ার পরও তাকে ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক এর দায়িত্ব পালনে কোন প্রকার সুযোগ দিচ্ছেন না সভাপতি ও সম্পাদক।  কার্যনির্বাহী কমিটির ওই সভা চলাকালিন সময়ে তার প্রতি অন্যায় ও অশালিন আচরণের একটি ভিডিও/অডিও কপি তার কাছে সংরক্ষিত আছে বলে জানিয়ে তিনি তাঁর প্রতি এমন অহিংস অচরণের বিষয়ে উর্ধ্বতন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা কামনা করেন।