মৌলভীবাজার জেলা এনডিএফ’র সম্মেলনে প্রবীণ রাজনীতিবিদ ডা.এম এ করিম

    0
    256

    এর সাম্রাজ্যবাদ ও দালালদের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক সংগ্রাম বেগবান করার আহবান

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,ফেব্রুয়ারী:  জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট-এনডিএফ মৌলভীবাজার জেলা শাখার ২য় সম্মেলনে উদ্বোধকের বক্তব্য রাখতে গিয়ে এনডিএফ’র কেন্দ্রীয় সভাপতি প্রবীণ রাজনীতিবিদ ডা. এম এ করিম বলেন দেশের জনসংখ্যার শতকরা ৯০ ভাগ শ্রমিক কৃষক হওয়ার পরও দেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত আছে মাত্র ১০ ভাগ ধনিকগোষ্ঠী ও তাদের দোষরদের প্রতিনিধিত্ব করা দালাল শ্রেণী। দেশের রাষ্ট্রক্ষমতা যতদিন পর্যন্ত শ্রমিক কৃষক মেহনতি জনতার হাতে না আসবে ততদিন পর্যন্ত জনগণের সার্বিক মুক্তি অর্জিত হবে না। জনগণের সকল দুঃখ কষ্টের মূল কারণ সাম্্রাজ্যবাদ ও তার এদেশীয় দোষরদের নির্মম শাসন ও শোষণ।

    তাই সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালালদের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক সংগ্রাম বেগবান করে শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি জনতার রাষ্ট্র সরকার ও সংবিধান প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অগ্রসর হতে হবে। ‘বিশ্বব্যাপী সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসী যুদ্ধের বিরুদ্ধে জনগণের ন্যায় সঙ্গত সংগ্রামকে বেগবান করুন’ এই আহবানে ২৬ ফ্রেব্রুয়ারি বিকেল থেকে শুরু হয়ে রাত ৯ টা পর্যন্ত চলা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট-এনডিএফ মৌলভীবাজার জেলা শাখার ২য় সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করে তিনি উপরোক্ত বক্তব্য রাখেন। সম্মেলনের শুরুতেই কুলাউড়া, কমলগঞ্জ, রাজনগর, শ্রীমঙ্গল ও সদর উপজেলা হতে নানা শ্রেণী পেশার কয়েকশত নেতাকর্মী বিভিন্ন দাবিনামা সম্বলিত প্লে-কার্ড, ফেস্টুন ও লাল পতাকায় সজ্জিত হয়ে একটি বর্ণাঢ্য র‌্যালী শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

    পরে শহরের কোর্ট রোডস্থ একটি কমিউনিটি সেন্টারে জেলা এনডিএফ’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোঃ নুরুল মোহাইমীনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক রজত বিশ্বাসের পরিচালনায় অনুষ্টিত সম্মেলন অনুষ্ঠানে উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এনডিএফ’র কেন্দ্রীয় সভাপতি প্রবীণ রাজনীতিবিদ জননেতা ডা. এম এ করিম এবং প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এনডিএফ’র কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল(অবঃ) এম জাহাঙ্গীর হোসাইন। এছাড়াও সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট সিলেট জেলা কমিটির সভাপতি এডভোকেট কুমার চন্দ্র রায় ও সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এডভোকেট এমাদউল্লাহ শহিদুল ইসলাম। সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন জেলা সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক ও ধ্রবতারা সাংস্কৃতিক সংসদ জেলা কমিটির সভাপতি কবি শহীদ সাগ্নিক, এনডিএফ জেলা নেতা আফজাল চৌধুরী, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ জেলা কমিটির সহ-সভাপতি মোঃ মোস্তফা কামাল, বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতি মৌলভীবাজার জেলা কমিটির আহবায়ক ডা. অবনী শর্ম্মা, চা-শ্রমিক সংঘের নেতা বিপ্লব মাদ্রাজী পাশী প্রমূখ।

    সম্মেলনে প্রধান অতিথি এনডিএফ’র কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল(অবঃ) এম জাহাঙ্গীর হোসাইন তাঁর বক্তব্যে সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালালদের বিরুদ্ধে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সকল দেশপ্রেমিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন গড়ে তোলার আহবান জানিয়ে বলেন সমগ্র পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বব্যবস্থায় এক গভীর ও সামগ্রিক সংকট, দ্বন্দ্ব-সংঘাতময় উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর বৃহত্তম ও গভীরতম অর্থনৈতিক সংকট ও মন্দা আঁকাবাঁকা গতিপথে ৮ম বছরে পড়ে দীর্ঘস্থায়ী হয়ে মহামন্দার দিকে ধাবিত হচ্ছে। পুঁজি ও শক্তির অনুপাতে বাজার ও প্রভাববলয় পুণর্বন্টনকে কেন্দ্র করে সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত, মুদ্রাযুদ্ধ, স্থানীয় ও আ লিক যুদ্ধ বিস্তৃত হয়ে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিপদ বৃদ্ধি করে চলছে। সাম্রাজ্যবাদীরা সংকটের বোঝা বিশ্ব শ্রমিকশ্রেণি, নিপীড়িত জাতি ও জনগণের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ায় দেশে দেশে সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালাল বিরোধী আন্দোলন-সংগ্রাম, বিদ্রোহ-বিপ্লব তথা বিশ্ববিপ্লবের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে চলেছে। আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির প্রভাব পড়ছে জাতীয় ক্ষেত্রে।

    বাজার ও প্রভাববলয় পুণর্বন্টন প্রশ্নে আন্তসাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্বে বাংলাদেশসহ এতদা লকে নিয়ে চলছে প্রতিযোগিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার স্থল সংযোগ সেতু এবং  প্রশান্ত ও ভারত মহাসাগরের সংযোগকারী মালাক্কা প্রণালী সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরীয় দেশ হিসেবে বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক ও রণনীতিগত গুরুত্বের প্রেক্ষিতে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ যেমন তার প্রাধান্য অব্যাহত রাখতে চায় তেমনই সাম্রাজ্যবাদী রাশিয়া ও পুঁজিবাদী চীন তাদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করতে চায়। সাম্রাজ্যবাদীরা স্বীয় স্বার্থে বাংলাদেশকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করতে চায়। জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট-এর ঐতিহাসিক দায়িত্ব হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদ সামন্তবাদ ও আমলা-দালাল পুঁজির শোষণের বিরুদ্ধে সংগ্রামকে শাণিত করে সাম্রাজ্যবাদী অন্যায় যুদ্ধের বিরুদ্ধে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সকল শক্তি ও ব্যক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লব সম্পন্ন করার লক্ষ্যে আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তোলা।

    সম্মেলনে বক্তারা সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালাল ভারতের সাথে জাতীয় স্বার্থ বিরোধী সকল চুক্তি বাতিল, রেলের ভাড়া বৃদ্ধি প্রত্যাহার, গ্যাস-বিদ্যুৎসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি রোধ, শ্রমিক-কর্মচারিদের জন্য বাজারদরের সাথে সংগতি রেখে মজুরি নির্ধারণ ও গণতান্ত্রিক শ্রমআইন প্রণয়ন, ভূমিহীন দরিদ্র কৃষকের হাতে জমি ও কাজ, কৃষি উৎপাদনের খরচ কমানো এবং ফসলের ন্যায্যমূল্য, সার, ডিজেল. কীটনাশকের দাম কমানোর দাবিতে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

    সম্মেলনের শেষ পর্বে জেলার সাংগঠনিক বিপোর্ট পেশ করা হয় এবং সর্বসম্মতিক্রমে কবি শহীদ সাগ্নিককে সভাপতি ও রজত বিশ্বাসকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৯ সদস্য বিশিষ্ট জেলা কমিটি গঠন করা হয়। নবগঠিত কমিটিকে প্রধান অতিথি এনডিএফ’র কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল(অবঃ) এম জাহাঙ্গীর হোসাইন শপথবাক্য পাঠ করানোর পর সভাপতির বক্তব্যের মাধ্যমে সম্মেলন সমাপ্ত হয়।