মৌলভীবাজারে লালমোহন সাধুর “চড়ক পূজা”

    0
    690

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,০২এপ্রিল,জহিরুল ইসলাম.মৌলভীবাজার:মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের সন্ধানী আবাসিক এলাকায় লালমোহন সাধুর চড়কপূজা অনুষ্ঠিত। গম্ভীরপূজা বা শিবের গাজন এই চড়ক পূজারই রকমফের। চড়ক পূজা চৈত্রসংক্রান্তিতে অর্থাৎ চৈত্র মাসের শেষের দিকে অনুষ্ঠিত হয়। আগের দিন চড়ক গাছটিকে ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করা হয়। এতে জলভরা একটি পাত্রে শিবের প্রতীক শিবলিঙ্গ রাখা হয়, যা পূজারিদের কাছে ‘বুড়োশিব’ নামে পরিচিত।
    আজ সোমবার দুপুর ১১ ঘটিকায় হরগৌরী ও শীতলি দেবীর পুজার মাধ্যমে শুরু হয় এই পূজার কার্যবিধি। সনাতন ধর্মের লোক ছাড়াও অন্যান্য ধর্মের কয়েক হাজার মানুষের পদচারনায় মুখর হয় পূজাস্থল। পূজাস্থলের আশেপাশের বিশাল অংশজুড়ে বসে মেলা। দুপুর ৩ ঘটিকার দিকে চড়ক গাছ ঘুরানো হয়। সন্ন্যাসীরা নিজের শরীর বড়শিতে বিঁধে চড়কগাছে ঝুলে শূণ্যে ঘুরতে থাকেন। পিঠে বাণ ফুড়িয়ে চড়ক গাছের সঙ্গে বাশঁ দিয়ে তৈরি করা বিশেষ এক ধরনের চড়কায় ঝুলন্ত দড়ির সঙ্গে পিঠের বড়শি বেঁধে দেওয়া হয়। চড়কগাছে ভক্ত বা সন্ন্যাসীকে লোহার হুক দিয়ে চাকার সঙ্গে বেঁধে দ্রুতবেগে ঘোরানো হয়। তার পিঠে, হাতে, পায়ে, জিহ্বায় এবং শরীরের অন্যান্য অঙ্গে বাণ শলাকা বিদ্ধ করা হয়। আগের দিন রবিবার রাত ১২ঘটিকায় অদিবাস ও কালি পুজা হয়।

    এছাড়াও জ্বলন্ত অঙ্গারের ওপর হাঁটা, কাঁটা আর ছুঁড়ির ওপর লাফানো, বাণফোঁড়া, শিবের বিয়ে, অগ্নিনৃত্য এবং হাজারা পূজা করা হয়। লালমোহন সাধুর মেয়ে শান্তি দেবনাথ জানান, আমরা ৬৬ বছর যাবত এই পূজা করে আসছি। এই পূজায় মোট ২৫ জন ভক্ত থাকে এবং তাদের কে ৮ হাজার টাকা দিয়ে আনা হয়। পূজার কাজটি করার আগে প্রায় ৪/৫ দিন আগে থেকে মাছ-মাংস বাদ দিয়ে শুধু নিরামিষ খেতে হয় এবং মাঝে মাঝে উপোস থাকতে হয়। আয়োজক কমিটির সাথে আলাপ করে আরো জানা যায়, পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য হিসেবেই তারা এই পূজা করে আসছেন। মূলত, হিন্দুধর্মীয় দেবতা শিবের সান্নিধ্য লাভ করতেই তারা এই পূজা করে থাকেন। পূর্বে লালমোহন দেবনাথ( লালমোহন সাধু) এই পূজা করলেও বর্তমানে লালমোহন দেবনাথের মেয়ে শান্তী দেবনাথ এই চড়ক পূজা করে আসছেন।
    চড়ক পূজা কবে কিভাবে শুরু হয়েছিল তার সঠিক ইতিহাস জানা যায়নি। তবে জনশ্রুতি রয়েছে, ১৪৮৫ খ্রিস্টাব্দে সুন্দরানন্দ ঠাকুর নামের এক রাজা এই পূজা প্রচলন করেন। রাজ পরিবারের লোকজন এই পূজা আরম্ভ করলেও চড়কপূজা কখনও রাজ-রাজড়াদের পূজা ছিল না।
    উল্লেখ্য, বর্তমানে এই চড়ক পূজা আমাদের দেশীয় সংস্কৃতির উৎসবে পরিণত হয়েছে। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে মেলা বসে যা “চড়ক সংক্রান্তির” মেলা নামে পরিচিতি।