মৌলভীবাজারে ভুল চিকিৎসায় স্ত্রী হত্যার অভিযোগে ডাক্তারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের

0
336
মৌলভীবাজারে ভুল চিকিৎসায় স্ত্রী হত্যার অভিযোগে ডাক্তারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের
৪০ বছর বয়সী, দুই সন্তানের জননী নিহত মিসেস শাহনেওয়াজ

মামলাটি বর্তমানে সিআইডিতে স্থানান্তর করা হয়েছে এবং সিআইডির একটি বিজ্ঞ টিম মামলার তদন্তকাজ শুরু করে দিয়েছেন।

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ মৌলভীবাজারে ডাক্তার কর্তৃক ওষুধ ও ইনজেকশনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে ৪০ বছর বয়সী, দুই সন্তানের জননী মিসেস শাহনেওয়াজ নামে এক নারী মৃত্যুবরণ করেছে বলে বিজ্ঞ আদালতে মামলা দায়ের করেছেন মৃত নারীর স্বামী সাইফুল ইসলাম।মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য বিজ্ঞ আদালত সিআইডিতে পেরন করেছেন এবং সিআইডির একটি বিজ্ঞ টিম মামলার তদন্তকাজ ইতিমধ্যে শুরু করে দিয়েছেন বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে ।
মামলার বাদী সাইফুল ইসলাম পিতা- মোঃ আবুল কাশেম সাং ভানু গাছ রোড শ্রীমঙ্গল। বর্তমান ঠিকানা শ্রীমঙ্গল শহরের মুসলিমবাগ এলাকার কালীঘাট রোডের বাসিন্দা।
এই মামলার একমাত্র আসামী মোঃ মাসুদুর রহমান (৫০), অর্থোপেডিক্স ও ট্রমা সার্জন,রেজিস্টার (অর্থোপেডিক এন্ড ট্রমাটোলজ) সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, চেম্বার আইকন মেডিকেল সার্ভিসেস ডায়াগনস্টিক এন্ড কনসালটেশন সেন্টার,শ্রীমঙ্গল রোড, বেড়িরপার, মৌলভীবাজার।
তিনি (মামলার বাদী ) ও মামলার নথি সুত্রে বলেন আমার স্ত্রীর দুই হাটুতে ব্যাথা থাকায় এই মামলার সাক্ষীদের একজনের (লিজা ওরফে ফাতেমার )পরামর্শে আমরা আসামি ডাঃ মাসুদুর রহমানের কাছে যাই এবং তিনি অসুস্থ রোগীকে দেখে পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করেই বারোটি ওষুধের প্রেসক্রিপশন করেন।

(এই হচ্ছে প্রেসক্রিপশন এর চিত্র)

প্রদত্ত প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী তার নির্ধারিত স্বাস্থ্য সহকারির মাধ্যমে আমার স্ত্রীর শরীরে ইনজেকশন পুশ এবং অনন্য ওষুধগুলো এক ডোজ করে ব্যবহার করার সাথে সাথেই প্রচন্ড অস্থিরতা শুরু হয়। ঔষধের কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কি না এবিষয়ে জানাইতে সাথে সাথে অভিযুক্ত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করিলে তিনি বলেন, পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া হলেও হতে পারে;তবে কোনো চিন্তার কারণ নেই বলে তিনি জানান এবং রোগীটিকে একনজর দেখার জন্য বললেও তিনি দেখার প্রয়োজন নেই বলে জানান। বিবাদী আমার স্ত্রীর চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা করিয়া ইনজেকশন দিয়া মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে।

মামলার মূল বিবরণ নিম্নরূপ-“ডিজিজ আমার স্ত্রী মিসেস শাহনেওয়াজ বেগম দুই পায়ের হাটুতে ব্যাথা বেদনায় আক্রান্ত হইলে ঘটনার তারিখে আমি ডিজিজড আমার স্ত্রীকে ডাঃ মোহাম্মদ মাসউদুর রহমানের চেম্বার আইকন মেডিকেল সার্ভিসেস ডায়াগনস্টিক এন্ড কনসালটেশন সেন্টার, শ্রীমঙ্গল রোড, বেরীরপাড়, মৌলভীবাজারে দেখাইলে বিবাদী ডিজিজড আমার স্ত্রীকে দেখিয়া ও রোগের বর্ণনা শুনিয়া প্রেসক্রিপশনে বিভিন্ন জাতের ঔষধপত্র ও খাওয়ার নিয়মাবলী লিখিয়া এবং কয়েকজাতের ইনজেকশনের নাম লিখিয়া বর্ণিত ইনজেকশনগুলো পুশ করিলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে, তাই স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দিয়া বর্ণিত ইনজেকশনগুলো পুশ করার জন্য পরামর্শ দিলে আমি আমার স্ত্রী ডিজিজড মিসেস শাওনেওয়াজ বেগমকে বিবাদীর কথা ও পরামর্শমতো ঘটনার তারিখেই রয়েল মাল্টিকেয়ার ডায়াগনষ্টিক এন্ড কনসালটেশন সেন্টারে ভর্তি করি।

চিকিৎসার পর রোগীর অবস্থা (সি.সি.ইউ (লাইফ সাপোর্টে))

বিবাদীর কথামতো ও প্রেসক্রিপশনে উল্লেখিত পরামর্শমতো ডিজিজড আমার স্ত্রী মিসেস শাহনেওয়াজ বেগম “রয়েল মাল্টিকেয়ার ডায়াগনস্টিক এন্ড কনসালটেশন সেন্টার” শ্রীমঙ্গল সড়ক, বেরীরপাড়, মৌলভীবাজার-এ ভর্তি করিলে বিৰাগীর প্রেসক্রিপশনে উল্লেখিত ঔষধপত্র খাওয়ানো শুরু ও বিবাদী প্রদত্ত প্রেসক্রিপশনে উল্লেখিত ইনজেকশন জনৈক নার্স আমার স্ত্রী মিসেস শাওনেওয়াজ বেগমের শরীরের পুশ করামাত্র ডিজিজড আমার স্ত্রী ইনজেকশন ও ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় অস্থিরতা ও হাত-পা খিঁচুনী শুরু হইয়া ডিজিজড এর শরীরে ছাকা ছাকা ফুলা ও ডান পা ফুলিয়া জিহ্বা বাহির হইয়া যায়। আমি তাৎক্ষণিক বিবাদীর সহিত যোগাযোগ করিলে বিবাদী বলেন, ঔষধ থেকে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হইতেছে, কমবে বলিয়া আমাকে আশ্বস্থ করেন। কিন্তু বিবাদী ঔষধ ও ইনজেকশনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কমার কোন ঔষধ আমাকে দেন নাই। ডিজিজড আমার স্ত্রী মারাত্মক অস্থিরতা ও যন্ত্রণায় ছটপট করিতে করিতে ২০/০৬/২০২২ইং তারিখে রয়েল মাল্টিকেয়ার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান ইনজেকশন ও ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ডিজিজড আমার স্ত্রী শাওনেওয়াজ বেগমের হার্ট, কিডনী, পালস্ সহ শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলো বিকল হইয়াছে। তাই ডিজিজডকে বাঁচাইতে হইলে আইসিইউতে ভর্তি করিতে হইবে। আমি নিরূপায় হইয়া ডিজিজড আমার স্ত্রীকে লাইফ লাইন হসপিটাল এন্ড কার্ডিয়াক সেন্টার, শ্রীমঙ্গল রোড, মৌলভীবাজারে ভর্তি করিলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ডিজিজড আমার স্ত্রীর শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের অবস্থা ক্রিটিক্যাল দেখিয়া তাহাদের দ্বারা চিকিৎসা করা সম্ভব হইবে না বলিয়া উন্নয়ন চিকিৎসার জন্য সিলেটে নিয়া যাওয়ার জন্য বলিলে ডিজিজড আমার স্ত্রীকে দি ইবনে সিনা হসপিটাল লিঃ, সোবহানিঘাট পয়েন্ট, সিলেটে নিয়া গেলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ডিজিজড আমার স্ত্রীকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় আইসিইউ-তে ভর্তি করেন এবং ইবনে সিনা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়া রিপোর্ট ডিজিজড আমার স্ত্রীর হার্ট, কিডনী, পালস্ সহ শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অর্গ্যান বিবাদী প্রদত্ত ঔষধ ও ইনজেকশনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় বিকল হইয়া গিয়াছে মর্মে জানান এবং ডিজিজড আরোগ্য লাভের সম্ভাবনা নাই মর্মে জানাইলে এবং ডিজিজডকে ২১/৬/২০২২ইং তারিখে ডিসচার্জ করিলে ডিজিজডকে আমি বাঁচানোর আশায় জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করিলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ডিজিজডকে সি.সি.ইউ (লাইফ সাপোর্টে) ২২/০৬/২০২২ইং তারিখে ভর্তি করেন এবং ডিজিজড এর বিভিন্ন রকমের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও টেষ্ট করিয়া রিপোর্টে ডিজিজ এর কিডনী, হার্ট, লিভার, পালসসহ শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অর্গ্যান সম্পূর্ণরূপে অকেজো হইয়া গিয়াছে মর্মে জানান এবং ডিজিজডকে বাঁচানো সম্ভব হইবেনা মর্মে জানান এবং সি.সি.ইউ-তে শুধুমাত্র টাকা খরচ হইবে কিন্তু ডিজিজতকে বাঁচানো যাইবে না তাই সি.সি.ইউ-তে লাইফ সাপোর্টে রাখিয়া কোন ফল পাওয়া যাইবে না বলিয়া জানাইলে বিগত ২৩/৬/২০২২ইং তারিখে ডিজিজড আমার স্ত্রী বাসায় নিয়া আসি। ডিজিজড আমার স্ত্রী বিগত ২৫/৬/২০২২ ইং তারিখে (বিবাদী প্রদত্ত ঔষধ ও ইনজেকশনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায়) শ্রীমঙ্গস্থ বাসায় মারা যান।

মৌলভীবাজারে ভুল চিকিৎসায় স্ত্রী হত্যার অভিযোগে ডাক্তারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের
এক পর্যায়ে সিলেট থেকে করা ডিজিটাল আলট্রাসোনো গ্রাফিতে কিডনির ভয়াবহ অবস্থা!

বিবাদী প্রদত্ত ঔষধ ও ইনজেকশনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ও অপচিকিৎসাজনিত কারণে ডিজিজড আমার স্ত্রী মারা গিয়াছেন। ডিজিজডও আমার স্ত্রীর শরীরে ইনজেকশন পুশ করামাত্রা অস্থিরতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া শুরু হইলে বিবাদীর সহিত যোগাযোগ করিলেও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিষ্কৃতির কোন চিকিৎসা দেন নাই। বিবাদী আমার স্ত্রী ভিজিজডকে চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা করিয়া প্রেসক্রিপশনে ঔষধ ও ইনজেকশন দিয়া মৃত্যুর দিকে ঠেলিয়া দিয়াছেন। বিবাদী প্রদত্ত প্রেসক্রিপশনে উল্লেখিত ঔষধ ও ইনজেকশন নেওয়ার

সাথে সাথে ডিজিজড আমার স্ত্রীর কিডনী, হার্ট, রক্তচাপ ও শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অর্গ্যান বিনষ্ট হইয়া ডিজিজড আমার স্ত্রী মারা গিয়াছেন। যাহা ডিজিজড এর টেষ্টা রিপোর্টে সনাক্ত হইয়াছে। ডিজিজড এর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো ও বিভিন্ন হাসপাতালে আই.সি.ইউ, সি.সি.ইউ ও লাইফ সাপোর্টে ভর্তি করিয়া রাখায় আমার মং-৪,০০,০০০/-টাকার ক্ষতি হইয়াছে।

ডিজিজড আমার স্ত্রী বিবাদী প্রদত্ত অপচিকিৎসা ও ভুল চিকিৎসাজনিত ঔষধ সেবন ও ইনজেকশন পুশ করা জনিত কারণে মারা যাওয়ার পর আমি মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন থাকায় ডিজিজডকে দাফন করি। আমি ডিজিজড মারা যাওয়ার পর শ্রীমঙল থানায় অভিযোগ দিতে গেলে থানা কর্তৃপক্ষ আমাকে মাননীয় আদালতের আশ্রয় গ্রহণ করার পরামর্শ দিলে আমি মাননীয় আদালতে অত্র মামলা দায়ের করিলাম। আমার সাক্ষী আছে বিচার চাই।

অতএব, প্রার্থনা যে, উপরোক্ত অবস্থাধীন বিবাদীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ ও প্রয়োজনীয় আদেশদানে মামলায় সুবিচার করিতে সদয় মর্জি হয়।” মামলা নং সি আর ৩৫৪/২২(শ্রী) ২৭/৭/২০২২।বিজ্ঞ আদালতে প্রথম হাজিরা তারিখ ১২-১০-২০২২ ইং।