মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম সফল উদ্যোগ হিসেবে সর্বস্তরের জনগণের কাছে স্বীকৃতি পেয়েছে: গর্ভনর

    0
    321
    মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম সফল উদ্যোগ হিসেবে সর্বস্তরের জনগণের কাছে স্বীকৃতি পেয়েছে: গর্ভনর
    মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম সফল উদ্যোগ হিসেবে সর্বস্তরের জনগণের কাছে স্বীকৃতি পেয়েছে: গর্ভনর

    ঢাকা, ১৯ মে : বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেছেন, মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম সফল উদ্যোগ হিসেবে সর্বস্তরের জনগণের কাছে স্বীকৃতি পেয়েছে। এনসিসি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং উদ্যোগের মাধ্যমে লাখ লাখ ব্যাংকিং সেবাবঞ্চিত মানুষের কাছে আর্থিক সেবা পৌঁছে দেয়ার নতুন সংযোগ সৃষ্টি করলো। আজ রবিবার রাজধানীর রূপসী বাংলা হোটেলে এনসিসিবি শিওর ক্যাশ সেবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গভর্নর এ কথা বলেন।
    এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকায় কানাডার রাষ্ট্রদূত হিদার ক্রডেন, ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান মো. নুরুন নেওয়াজ সেলিম। বক্তব্য রাখেন এনসিসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ নুরুল আমিন। উপস্থিত ছিলেন এনসিসিবি শিওর ক্যাশ পরিচালনায় প্রযুক্তি সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান প্রগতি সিস্টেমসের প্রধান নির্বাহী ড. শাহাদত হোসেনসহ এনসিসি ব্যাংকের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এছাড়া অনুষ্ঠানে নতুন সেবা পণ্যের বিস্তারিত তুলে ধরেন ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং প্রধান মো. ওমর ফারুক ভূঁইয়া। এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে টাকা পাঠাই ফোনে ফোনে স্লোগানে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করল বেসরকারি এনসিসি ব্যাংক লিমিটেড। এনসিসিবি শিওর ক্যাশ নামের নতুন এ সেবার মাধ্যমে এনসিসি ব্যাংকের গ্রাহকরা মোবাইল ফোনে ব্যাংকিং ও লেনদেন করার সুবিধা পাবেন।
    অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গভর্নর বলেন, বিকল্প পরিশোধ চ্যানেল হিসেবে ব্যাংকিং খাতে মোবাইল প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক এ পর্যন্ত ২৫টি ব্যাংককে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রমের অনুমোদন দিয়েছে। এর মধ্যে ১৬টি ব্যাংক তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। এনসিসি ব্যাংক নিয়ে এ সংখ্যা দাঁড়ালো ১৭টিতে। তিনি আরো বলেন, এ ব্যাংকগুলো সারা দেশে ৭০ হাজার এজেন্ট নিয়োগ করেছে। আর ৫০ লাখ মানুষ মোবাইল ব্যাংকিং সেবা নিচ্ছেন। এর মাধ্যমে প্রতি মাসে তিন হাজার কোটি টাকার লেনদেন সম্পন্ন হচ্ছে। প্রতি মাসে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা গ্রহীতার সংখ্যার ২০ শতাংশ হারে বাড়ছে । বিভিন্ন উৎসব-পার্বনে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন আরো বেড়ে যায়। দেশের বিপুল শ্রমজীবী জনগোষ্ঠীর কাছে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছানোর ক্ষেত্রে দেশের প্রথাগত ব্যাংকিংয়ের চেয়ে মোবাইল ব্যাংকিং যে অধিকতর উপযোগী সেটি ইতোমধ্যেই প্রমাণিত হয়েছে।
    গভর্নর বলেন, ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন বা আর্থিক সেবাভুক্তিকরণ অভিযানের যথেষ্ট অগ্রগতি হলেও এখনও দেশের গ্রামীণ জনপদের বিশাল জনগোষ্ঠী ব্যাংকিং সেবা থেকে বঞ্চিত। শহরাঞ্চলে কর্মরত কল-কারখানার শ্রমিকসহ বিভিন্ন পেশার স্বল্প আয়ের জনগোষ্ঠীর, বিশেষ করে লাখ লাখ গার্মেন্টস কর্মীর হাতে ব্যাংক হিসাব খোলার মতো সময় এবং টাকার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। দেশের প্রথাগত ব্যাংকিং ব্যবস্থা তৃণমূল ও স্বল্প আয়ের জনগোষ্ঠীর অল্প টাকার লেনদেনে তেমন উৎসাহ প্রদর্শন করে না। আবার, পল্লী অঞ্চলে ব্যাংক-শাখা পরিচালনা বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জন্য সবসময় লাভজনকও হয় না। তবুও আমরা গ্রামীণ শাখা স্থাপনে জোর তৎপরতা চালিয়েছি। নতুন শাখা খোলার নীতিমালায় আমরা অর্ধেক শাখা গ্রামে স্থাপন করার নির্দেশনা দিয়েছি। বেসরকারি ব্যাংকগুলো এখন বেশি হারে গ্রামীণ জনপদে শাখা খুলতে শুরু করেছে। ফলে ব্যাংকিং সেবায় অন্তর্ভুক্তির পরিমাণ আশাতীতভাবে বাড়ছে। দেশে দ্রুত বিকাশমান মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক এবং এর ব্যবহারকারীদের ব্যাপক বিস্তৃতি ব্যাংকিং সেবার বাইরে থাকা বিশাল জনগোষ্ঠিকে আর্থিক সেবার আওতায় আনা এবং এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সহজে ও দ্রুত টাকা পাঠানোসহ বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাসসহ বিভিন্ন সেবার বিল পরিশোধ সহজ করার জন্য ব্যাংকের পরিচালনায় মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করা হয়েছে। এ লক্ষে বেশ কিছু রেগুলেটরি উদ্যোগও আমরা গ্রহণ করেছি। ২০১১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর একটি গাইডলাইন জারি করা হয়। এর মাধ্যমে দ্রুত ও কম খরচে লেনদেন এবং আধুনিক ব্যাংকিং সেবা গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
    ড. আতিউর রহমান বলেন, এ ব্যতিক্রমী ব্যাংকিং ব্যবস্থায় মোবাইল ফোন প্রযুক্তির সহায়তায় দেশের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে টাকা পাঠানো; ব্যাংক শাখা, এজেন্ট, এটিএম, মোবাইল আউটলেট এর মাধ্যমে অর্থ লেনদেন, ব্যক্তি কর্তৃক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের অর্থ পরিশোধ যেমন-ইউলিটি বিল, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ব্যক্তির অর্থ পরিশোধ যেমন-বেতন ভাতা, পেনশন, সরকারের অনুদান প্রদান যেমন-বয়স্ক ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ইত্যাদি ও ব্যক্তি কর্তৃক সরকারের অর্থ পরিশোধ যেমন-কর পরিশোধ সংক্রান্ত সেবা প্রদান সহজতর করা সম্ভব হয়েছে। আপনারা জানেন, দেশে ই-কমার্স প্রসারের প্রক্রিয়াকে আরো বেগবান করার লক্ষ্যে আমরা ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ স্থাপন করেছি। এটি দেশের মাদার সুইচ হিসেবে বেসরকারি উদ্যোগে স্থাপিত দেশের সকল পেমেন্ট সুইচসহ ই-পেমেন্টকেও সংযুক্ত করেছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি ব্যাংক এ সুইচের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। যে সব ব্যাংক এখনো এর সঙ্গে যুক্ত হতে পারেনি তাদের শিগগিরই এ কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্যে আমি আহ্বান করছি। গভর্নর আরো বলেন, ব্যাংকিং খাতে প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে দারিদ্র্যের হার কমানো তথা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর কল্যাণে ইতিবাচক ভূমিকা রাখা সম্ভব। মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন কর্মসূচি যেমন সম্প্রসারিত হয়েছে তেমনি এর মাধ্যমে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শহরের টাকা গ্রামে যাচ্ছে। এর ফলে গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা হয়েছে। কৃষির বাইরে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য ও নানা রকম উদ্যোগের প্রসার ঘটেছে। গ্রামীণ কর্মসংস্থান বেড়েছে। গ্রামের দরিদ্র মানুষের আয় ও ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। সার্বিক অর্থনীতিতেও এসবের ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচির সঙ্গে এনসিসি ব্যাংক যেভাবে একাত্মতা দেখিয়েছে এবং এসব কর্মসূচিকে ফলপ্রসূ ও বেগবান করার জন্যে যেভাবে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে তার জন্যে এনসিসি ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ। তাদের আরেকটি সৃজনশীল উদ্যোগ মোবাইল ব্যাংকিং সেবাএনসিসিবিশিওরক্যাশ সেবার সাফল্য কামনা করি।
    ব্যাংকের চেয়ারম্যান নুরুন নেওয়াজ সেলিম বলেন, আমাদের মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবার বাইরে থাকা জনগোষ্ঠীকে আনুষ্ঠানিক সেবার মধ্যে নিয়ে আসতে কাজ করে যাবো। 
    ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল আমিন বলেন, এনসিসিবি শিওর ক্যাশের মাধ্যমে শ্রমজীবী, পোশাক খাতের শ্রমিকরা থেকে শুরু করে করপোরেট প্রতিষ্ঠানের সবাই লেনদেন করতে পারবেন। তিনি আরো বলেন, এর মাধ্যমে টাকা জমা দেয়া, টাকা তোলা যাবে এনসিসি ব্যাংকের শাখা ও এজেন্টদের কাছ থেকে। এছাড়া এর মাধ্যমে টাকা পাঠানো, বেতন গ্রহণ ও বিল পরিশোধ করা যাবে।