মেয়ের বাড়িতে আম-কাঁঠালী প্রথা যেন ‘কারো পৌষ মাস কারো সর্বনাশ’!

0
999
মেয়ের বাড়িতে আম-কাঁঠালী প্রথা যেন 'কারো পৌষ মাস কারো সর্বনাশ'!
মেয়ের বাড়িতে আম-কাঁঠালী প্রথা যেন 'কারো পৌষ মাস কারো সর্বনাশ'!

এম এম সামছুল ইসলাম, জুড়ী প্রতিনিধিঃ প্রবাদ আছে, আম-কাঁঠালী প্রথা “কারো পৌষ মাস কারো সর্বনাশ” আম-কাঁঠালী বলে কথা। তা দেয়া নেয়া নিয়ে অনেক কথা আলোচনা-সমলোচনার ঝড় বইছে এবং তা স্বমূলে বন্ধ করে দেয়ার ব্যাপারে সোচ্চার পূর্বাঞ্চলবাসী। বৈশাঁখ-জ্যৈষ্ঠ মাস আসলে মেয়ের পিত্রালয় হতে স্বামীর পিত্রালয়ে বেশি বেশি করে আম-কাঁঠালী পাঠাতে হবে স্বামীর পরিবারে এটা বাধ্য বাদকতা করে দিয়েছে বহু পূর্ব থেকে। তা ধনী পরিবারের জন্য আনন্দের আর গরিব পরিবারের জন্য বেদনাদায়ক। আম-কাঁঠালী এ রেওয়াজ বা প্রথা মনে হয় বাংলাদেশের কোথাও চালু নেই। দীর্ঘদিন যাবত দেশের পূর্বাঞ্চল তথা বৃহত্তর সিলেটের শহর, বন্দর কিংবা পল্লী গাঁয়ের আনাচে-কানাচে ওই প্রথা চালু রয়েছে।
যার ফলে, ধনী পরিবার প্রতি বছর বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে আনন্দ চিত্তে অনায়াসে মেয়ের স্বামীর পিত্রালয়ে আম-কাঁঠালী পাঠিয়ে দেন। তাতে মেয়ের শ্বশুর বাড়ীর লোকজন তা পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েন। পক্ষান্তরে গরীব পরিবার তথা নিম্নবৃত্ত পরিবারের জন্য তা দেয়া কষ্টদায়ক ও অভিশাপ স্বরূপ। পূর্বাঞ্চলের মেয়েদের বিয়ে হলেই স্বামীর বাড়ী পবিত্র রমজানে ইফতারী দেয়ার মতো বোশেখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে আম-কাঁঠালী দেয়ার বিপদটা চেপে বসে তাদের (মেয়েদের) পিতার পরিবারের উপর। ওই দু’মাস ঘুরে আসার সাথে সাথে স্বামীর পরিবার মেয়ের পরিবারকে আম-কাঁঠালী পাঠাতে বার বার চাপ প্রয়োগ করে থ
এ সময় মেয়ের পরিবারকে স্বামীর পরিবারের কর্তা তাও বলে দেন যে, আমার আত্মীয় স্বজন (কুটুম) খুব বেশি আম-কাঁঠালী বাড়িয়ে দিবেন কিন্তু। নইলে আমাদের মান সম্মান থাকবে না। মেয়ের পরিবার ধনী হলে তা সাথে সাথে পাঠিয়ে দেন। পক্ষান্তরে মেয়ের পরিবার গরিব হলেই যত বিপত্তি। তখনই উভয় পরিবারের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ এক পর্যায়ে বিচ্ছেদ থেকে মামলা মোকাদ্দমা। এর ভয়ে মেয়ের অভাব গ্রস্থ পিতা বাধ্য হয়ে কন্যার সুখের কথা ভেবে ধার কর্জ করে আম-কাঁঠালী পাঠাতে বাধ্য হন। আর তার দেয়া নেয়ার ব্যাপারে এ পর্যন্ত বহু মেয়ের সংসার ভেঙ্গেছে এবং স্বামী ও শাশুরীর নির্মম নির্যাতনে প্রাণ গিয়েছে অনেক মেয়ের। এ নিয়ে চলতি বছরও রমজানে ইফতারী সংক্রান্ত ব্যাপারে পূর্বাঞ্চলের কয়েকজন মেয়ের প্রাণ চলে যায়। তাদের এহেন কর্মকান্ডে ধিক্কার জানানোর ভাষা খোঁজে পায়নি পূর্বাঞ্চলবাসী।
বলা বাহুল্য, আম-কাঁঠালী বলতে শুধু আম আর কাঁঠালেই সীমাবন্ধ নয়। এগুলোর সাথে যোগ হয় আনারস, লিচু, আপেল, আংগুর, নাশপাতি, মাল্টা, লটকন, তরমুজ ও বিভিন্ন মিষ্টান্ন দ্রব্যসহ বিভিন্ন স্বাদের পানীয় ইত্যাদি। একেকটি পরিবারকে প্রতিবারে আম-কাঁঠালী দিতে অবস্থা বুজে ২০-৫০ হাজার টাকা গুনতে হয়। তাতে ধনী পরিবার অনায়াসে আম-কাঁঠালী পাঠিয়ে দেন। কিন্ত গরীব পরিবার ধার কর্জ করে পাঠান। তবে, অভাব গ্রস্থ পরিবারের মেয়ের পিতা এ ঋণের ঘানি টানতে টানতে একসময় নিংশেষ হয়ে যান। সচেতন নাগরিকদের মতে, পূর্বাঞ্চল তথা বৃহত্তর সিলেটে ইফতারীসহ আম-কাঁঠারী প্রথা জঘন্য অপরাধ। এ প্রথাটি চিরতরে বন্ধ হউক এটাই কামনা করেন তারা। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি পড়লে শিগগিরই বন্ধ হবে ইফতারীসহ আম-কাঁঠালী প্রথাটি।