মাহফুজ আনাম এখন রাষ্ট্রদ্রোহ অভিযোগের মুখোমুখি:বিবিসি

    0
    242

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,১৯ফেব্রুয়ারীঃ দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনামের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ আক্রমণের বিষয়ে বিশ্বের উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত। বাংলাদেশে স্বাধীন গণমাধ্যম দমনের চেষ্টা করা হচ্ছে।

    বৃহস্পতিবার বিবিসির দক্ষিণ এশিয়া প্রতিনিধি জাস্টিন রোলাটের লেখা এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে।

    প্রতিবেদনে বলা হয়, দ্য ডেইলি স্টার বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ইংরেজি দৈনিক। ২৫ বছর আগে বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্র ফিরে এলে পত্রিকাটি চালু হয়। সাংবাদিকতায় সততার চর্চা এবং মুক্ত ও প্রগতিশীল মত প্রকাশের জন্য পত্রিকাটির খ্যাতি আছে। এটি অনেকটা বাংলাদেশি নিউইয়র্ক টাইমস। এটা খুবই দুঃখজনক যে, মাহফুজ আনাম এখন রাষ্ট্রদ্রোহ অভিযোগের মুখোমুখি।

    রোলাট লিখেছেন, মাহফুজ আনামকে ‘পুরোপুরি নীতিহীন’ ও ‘মিথ্যাবাদী’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ। তাঁকে (মাহফুজ আনাম) কারাগারে পাঠানোরও দাবি করেছেন তিনি। তার এমন বক্তব্যের পর খ্যাতিমান এই সম্পাদকের বিরুদ্ধে বেশ কিছুসংখ্যক রাজনীতিবিদ, ছাত্রসহ অন্যরা মানহানির অভিযোগে মামলা দায়ের করেন।

    প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ডেইলি স্টার এবং বাংলাদেশের সর্বাধিক প্রচারিত বাংলা দৈনিক প্রথম আলোর অর্থনৈতিক ভিত্তি দুর্বল করতে ইতিমধ্যে গোপন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। গত গ্রীষ্ম থেকে বিবিসি বিষয়টি লক্ষ্য করছে। বাংলাদেশে কিছু বৃহত্তম টেলিকম ও ভোগ্যপণ্য প্রতিষ্ঠানকে এই দুই পত্রিকায় তাদের বিজ্ঞাপন দিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটির সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা।

    বাংলাদেশের বৃহত্তম মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন এ বিষয়টি আল জাজিরার কাছে স্বীকার করেছে। গ্রামীণফোনের মূল কোম্পানি টেলিনরের যোগাযোগপ্রধান বলেছেন, অন্য কতিপয় প্রতিষ্ঠানের মতো তারাও কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এই দুই পত্রিকায় বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়ে নির্দেশনা পেয়েছে।

    কর্তৃপক্ষের এই পদক্ষেপের ফলে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার এক-তৃতীয়াংশ আয় হারিয়েছে বলে এক হিসাবে দেখা গেছে।

    সাংবাদিক ও ভাষ্যকার ডেভিড বার্গম্যানের ভাষ্য, এখন পর্যন্ত আইনে কর্তৃপক্ষের আদেশের কোনো ভিত্তি নেই। কর্তৃপক্ষ আদেশটি স্রেফ জোর করে চাপিয়ে দিয়েছে। এই তৎপরতার উদ্দেশ্য পরিষ্কার। তা হলো, স্বাধীন গণমাধ্যমকে বশে আনা এবং ভিন্নমত দমন করা। তাদের বার্তা হলো, ‘সীমা লঙ্ঘন করলে তারা ব্যবস্থা নেবে’।
    বার্গম্যান লিখেছেন, বাংলাদেশে এমন কোনো সংবাদপত্র বা টেলিভিশনের সম্পাদক নেই, যারা ওই নিষেধাজ্ঞার কথা জানেন না। কিন্তু দেশটির প্রায় ৩০ টির মতো টিভি চ্যানেল ও অসংখ্য সংবাদপত্রের মধ্যে কোনোটি এখন পর্যন্ত প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারকে ভীতিপ্রদর্শনের বিষয়ে প্রতিবেদন করেনি।

    বিষয়টি সম্পর্কে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর কাছে বিবিসির এই প্রতিনিধি জানতে চাইলে তিনি এ ধরনের (বিজ্ঞাপন বন্ধ) কোনো আদেশের কথা জানেন না বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট সংবাদপত্র বা কোনো প্রতিষ্ঠান যদি আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ দেয়, তবে তিনি তা তদন্ত করবেন। আর যদি ব্যবসার ওপর কোনো অবৈধ বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়, তবে তিনি ব্যবস্থা নেবেন।

    বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডেইলি স্টার-এর বিরুদ্ধে কোনো তৎপরতার কথা অস্বীকার করেছেন তথ্যমন্ত্রী ইনু। তাঁর ভাষ্য, মাহ্ফুজ আনামের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো এনেছেন বিভিন্ন ব্যক্তি। এতে সরকারের হাত নেই। মাহ্ফুজ আনাম দোষী কি না, তা নির্ধারণ করবেন আদালত।

    মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে এ ধরনের আক্রমণের প্রকৃত তাৎপর্য নিয়ে বার্গম্যানের কোনো সন্দেহ নেই। বার্গম্যান এ বিষয়ে নিশ্চিত যে, সরকারের অনুগত ব্যক্তিরা যেকোনো প্রভাবশালী স্বাধীন গণমাধ্যম বা তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে ভিন্নমতের গণমাধ্যম বন্ধ করে দিতে চান। অথবা নিদেনপক্ষে তা বশে আনতে চান। এই প্রবণতা বাংলাদেশের মতো নড়বড়ে গণতন্ত্রের দেশে অশুভ উপায়ে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরার বিষয়টিকে তুলে ধরবে।

    যেহেতু বাংলাদেশের গণমাধ্যম এ বিষয়ে কথা বলতে ভয় পাচ্ছে, তাই বাকি বিশ্বের কিছু করার সময় এসেছে।সুত্র বিবিসি