মডেলিংয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তরুণীদের সর্বনাশ করতেন নজরুল ইসলাম রাজ

0
722
মডেলিংয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তরুণীদের সর্বনাশ করতেন নজরুল ইসলাম রাজ

নুরুজ্জামান ফারুকীঃ আলোচিত পরিমণীর অবৈধ ব্যবসার বিশিষ্ট সহযোগী চলচ্চিত্র প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজ সিনেমা ও মডেলিংয়ে কাজের প্রলোভন দেখিয়ে তরুণীদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে জড়াতেন। প্রথমে ফাঁদ পেতে তার নিজের বাসায় ‘রাজ মাল্টিমিডিয়া’য় নিয়ে অনৈতিক কাজে বাধ্য করাতেন। এভাবে প্রায় দুই শতাধিক তরুণীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করেছেন তিনি। এসব তরুণীর বেশিরভাগের বয়স ছিল ১৮ থেকে ২০ এর মধ্যে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদে এ নিয়ে স্বীকারোক্তিও দিয়েছেন রাজ। তার বনানীর বাড়িতে অভিযানেও কম্পিউটার ও মোবাইলে মিলেছে অনেক অনৈতিক গোপন ভিডিও-ছবি। এছাড়াও জব্দ করা হয়েছে তিনটি মেমরি কার্ড।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে নজরুল ইসলাম রাজ দাবি করেন, কমবয়সী তরুণীদের মধ্যে মিডিয়া সেলিব্রেটি হওয়ার শখ বেশি থাকে। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তিনি তরুণীদের সঙ্গে অনৈতিক কাজ করতেন। আবার অনেক সময় ব্ল্যাকমেইলিংয়ের জন্য গোপনে ভিডিও ধারণ করে রাখতেন। এ জন্য তিনি বনানীতে অবস্থিত তার বাসাকে বেশি কাজে লাগাতেন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একধিক সূত্র জানায়, রাজের বনানীর বাসাতে পর্নোগ্রাফি তৈরি কনটেন্ট পাওয়া গেছে। বিশেষ করে তার প্রডাক্শন হাউজের মাধ্যমে যারা মডেল বা অভিনেত্রী হতে ইচ্ছা প্রকাশ করতেন, তাদের সঙ্গে রাজ কোনো না কোনোভাবে শারীরিক সম্পর্ক করতেন। তাদের অনেককে তিনি বাধ্য করতেন। আবার স্বেচ্ছায়ও অনেকে তার সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়াতেন। এসব কাজের দৃশ্য গোপনে ভিডিও করে রাখতেন তিনি।

রাজ ব্যবসার পাশাপাশি দেশের বিনোদন জগতে বিচরণ করেন ২০১৪ সালে। এরপর তার সঙ্গে পরিচয় হয় পরীমনির। রাজের হাত ধরেই পরীমনি মাদক সেবনে জড়িয়ে পড়েন। ‘রাজ মাল্টিমিডিয়া’র কর্ণধার নজরুল ইসলাম রাজ শোবিজ জগতে ক্যারিয়ার শুরুর পর নাটক ও সিনেমা প্রযোজনা শুরু করেন। তার রাজ মাল্টিমিডিয়ার অফিসকে তিনি অনৈতিক কার্যক্রমে ব্যবহার করতেন। অভিযানে সে রকম অনেকগুলো পর্নোগ্রাফির কনটেন্ট জব্দ করেছে এলিট ফোর্স র‌্যাব।

সূত্র আরও জানায়, রাজ কমবয়সী তরুণীদের বেশি টার্গেটে নিতেন। যাদের বয়স ১৮ থেকে ২০ এর মধ্যে। কারণ এসব তরুণীর মিডিয়ায় কাজের আগ্রহ বেশি। অনেকে তার হাত ধরে মিডিয়ায় কাজের সুযোগও পেয়েছেন।

কে এই রাজ ?

১৯৮৯ সালে খুলনার একটি মাদরাসা থেকে দাখিল পাসের পর গ্র‌্যাজুয়েশন করতে ঢাকায় আসেন রাজ। এরপর তিনি বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্য ও ঠিকাদারি কাজ শুরু করেন। পাশাপাশি শোবিজজগতে বিভিন্ন সিনেমা ও নাটকে তিনি নানা চরিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি নামে-বেনামে প্রযোজনায় যুক্ত হন। রাজ মাল্টিমিডিয়া নামে তার একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার পর, ব্যবসায়িক জগৎ ও চিত্রজগতের দুই ক্ষেত্রে তার সংযোগ থাকায় অতিরিক্ত অর্থলাভের আশায় উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে নিজ অবস্থানের অপব্যবহার করেন।

রাজ সিন্ডিকেটে যারা

নজরুল ইসলাম রাজ ও সম্প্রতি র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার শরিফুল হাসান ওরফে মিশু হাসান ও মাসুদুল ইসলাম জিসানের সহযোগিতায় ১০ থেকে ১২ জনের একটি সিন্ডিকেট ছিল। যেই সিন্ডিকেটটি রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত এলাকায়, বিশেষ করে গুলশান, বারিধারা, বনানীসহ বিভিন্ন এলাকায় পার্টি বা ডিজে পার্টির নামে মাদক সেবনসহ নানান অনৈতিক কর্মকাণ্ডের ব্যবস্থা করতেন। পার্টিতে অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকে সিন্ডিকেট সদস্যরা বিপুল পরিমাণ অর্থ পেতেন। অংশগ্রহণকারীরা সাধারণত উচ্চবিত্ত অভিজাত পরিবারের সদস্য ছিলেন। প্রতিটি পার্টিতে ১৫ থেকে ২০ জন অংশগ্রহণ করতেন। এছাড়া সিন্ডিকেটটি বিদেশেও ‘প্লেজার ট্রিপের’ আয়োজন করত। এদিকে রাজচক্রের ডিজে পার্টিতে বেশ কয়েকজন মডেলের নাম পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের তালিকাও যাচাইবাছাই করা হচ্ছে।

মাদক সরবরাহকারী ছিলেন রাজ

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, রাজ নিজেই মাদকের সরবরাহকারী। তার বাসায় বিপুল পরিমাণ মাদক ছিল। রাজ ছাড়াও আরও কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে মাদক সরবরাহকারী হিসেবে। তাদের বিষয়েও যাচাই-বাছাই চলছে।

রাজের বাসায় বিকৃত যৌনাচারের কক্ষ !

রাজের বাসায় একটি রুম পাওয়া যায়। যেখানে একাধিক নারী পুরুষের একসঙ্গে সমন্বিত বিকৃত যৌনাচারে ব্যবহার্য সরঞ্জামাদি ছিল। এটি নজরুল ইসলাম রাজের ‘রাজ মাল্টিমিডিয়া প্রোডাকশন হাউজের’ একটি কক্ষ বা বিশেষ বিছানা।

রাজের বিরুদ্ধে দুই মামলা

বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিপুল বিদেশি মদ, সিসা সরঞ্জামসহ র‌্যাবের হাতে আটকের পর চলচ্চিত্র প্রযোজক রাজের বিরুদ্ধে পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা হয়েছে। এছাড়া বিপুল পরিমাণ মাদক উদ্ধারের ঘটনায় মাদক আইনে আরেকটি মামলা করেছে র‌্যাব। ডিএমপির বনানী থানায় বৃহস্পতিবার র‌্যাব বাদী হয়ে মামলা দুটি করে। দুটি মামলায় রাজের সহযোগী সবুজ আলীকে দুই নম্বর আসামি করা হয়েছে। এদিকে মাদকের মামলাটি আদালতের নির্দেশে ডিবি পুলিশ তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছে। এছাড়া তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

রাজের বাসায় পাওয়া যায় যেসব মাদক

চলচ্চিত্র প্রযোজক রাজের বাড়িতে অভিযানে বিদেশি ১৪ বোতল মদ উদ্ধারের পাশাপাশি দুইটি সিসা সরঞ্জাম, ৯৭০ পিস ইয়াবা, বিকৃত যৌনাচারে ব্যবহৃত ১৪ সেট বিভিন্ন সরঞ্জাম, তিনটি মেমরি কার্ড জব্দ করে র‌্যাব।

পরীমনির বাসায় অভিযান দেখে পালানোর ব্যার্থ চেষ্টা করেন রাজ

বুধবার (৪ আগস্ট) বিকেলে নায়িকা পরীমনির বনানীর ১৯ নম্বরের সড়কের বাড়িতে যখন অভিযান চলছিল, পাশেই ৭ নম্বর সড়কের বাসাতেই ছিলেন চলচ্চিত্র প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজ। অভিযানের খবর পেয়ে রাজ তার বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তবে তার বাড়ির সামনে র‌্যাব সদস্যদের উপস্থিতি থাকায় তিনি পালাতে পারেননি। রাজের সঙ্গে পরীমনির ঘনিষ্ঠতা ছিল। প্রায় পরীমনির বাসায় তারা ডিজে পার্টি ও মদের আড্ডা জমাতেন।