ভারতের মুজাফফর নগরে দুদিনের সহিংসতায় নিহত ২৬ জন আটক শতাধিক

    0
    240

    আমারসিলেটটোয়েন্টিফোর,০৯ সেপ্টেম্বর  : ভারতের উত্তর প্রদেশের মুজাফফর নগরে দু’টি সম্প্রদায়ের মধ্য আবারো সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। ওই এলকায় কারফিউ ও সেনা টহলের মধ্যে নতুন করে সংঘর্ষের ঘটনায় আরো ১৩ জন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে দুদিনের সহিংসতায় নিহতের মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৬ জনে। এছাড়া এ ঘটনায় আহত হয়েছে শতাধিক ব্যক্তি।এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত শতাধিক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। সহিংস এলাকায় সেনাবাহিনীর ৮০০ সদস্য ও আধাসামরিক বাহিনীর কয়েকশ’ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। গতকাল রবিবার মুজাফফর নগরে ছয়টি গ্রামে আলাদা আলাদা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ভারতের স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো আজ সোমবার  এ তথ্য জানিয়েছে।
    সংবাদ মাধ্যমগুলো জানিয়েছে সহিংসতার কারণে পুরো উত্তর প্রদেশে জুড়ে উচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ভারতের রাজধানী দিল্লি থেকে দেড়শ’ কিলোমিটার উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় জেলা মুজাফফরনগরের ঘরে ঘরে তল্লাশি চালাচ্ছেন সেনা সদস্যরা। মুজাফফরনগরসহ তিনটি জেলায় কারফিউ জারি করা হয়েছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব সবাইকে শান্ত থাকার অনুরোধ জানিয়ে বলেছেন, শান্তি বজায় রাখার জন্য আমি সবার কাছে আবেদন জানাচ্ছি, কোন গুজবে কান দেবেন না বা গুজবে বিশ্বাস করবেন না।
    গত মাসে সংঘটিত তিন যুবকের হত্যাকাণ্ড নিয়ে ঘটনা শুরু হয়। দাবি করা হচ্ছে, এক নারীকে হেনস্থা থেকে রক্ষার চেষ্টার সময় ওই যুবকদের খুন করা হয়। এ খুনের বিচারের দাবিতে গত শনিবার নাগলাবাধোদ এলাকায় কয়েক হাজার হিন্দু কৃষক এক সমাবেশ করে। উত্তর প্রদেশ সরকারের সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী আজম খান অভিযোগ করেছেন, শনিবারের সমাবেশে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে উস্কানিমূলক বক্তব্য রাখা হয়। রাজ্য বিধান সভার বিজেপি (ভারতীয় জনতা পার্টির) দলীয় চার সদস্য কৃষকদের ওই মহাপঞ্চয়েত সভায় উত্তেজনামূলক বক্তব্য দেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

    এ সমাবেশ থেকে ফেরার পথে তিন কিলোমিটার দূরে কাওয়াল এলাকায় তারা আরেক সম্প্রদায়ের লোকজনের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে ১২ জন নিহত হন। এ পরিস্থিতিতে ঘটনাস্থলে সেনা মোতায়েন করে রাজ্য সরকার। কিন্তু তারপরও নতুন সংঘর্ষে আরো ১৩ জন নিহত হন। দুদিনের দাঙ্গায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ২৬ জন নিহত হয়েছেন। কাওয়ালে গত মাসে ওই যুবকরা নিহত হওয়ার পর থেকে বড় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে রাজ্য সরকার। এই কারণে মহাপঞ্চায়েত সভাটি আইনত অবৈধ ছিল। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের নেতারাই ওই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

    ইউটিউব ও সামাজিক যোগাযোগ ওয়েবসাইট ফেইসবুকে এক যুবকের হত্যাকাণ্ডের মিথ্যা ভিডিও পোস্ট করে উত্তেজনা ছড়িয়ে দাঙ্গা বাঁধানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গতকাল রবিবার এক সংবাদ সম্মেলনে ভারতের স্বরাষ্ট্র সচিব কামাল সাক্সেনা বলেছেন, ইউটিউব ও অন্যান্য সামাজিক যোগযোগ নেটওয়ার্কে ভুয়া ভিডিও পোস্ট করে উত্তেজনা ছড়ানো হয়েছে। ভিডিওটি দুই বছরের পুরনো এবং এটি দেখে উত্তর প্রদেশের ঘটনা বলেও মনে হয়নি বলে জানিয়েছেন তিনি। ভিডিওটি ব্লক করা হয়েছে এবং কে এটি আপলোড করেছে তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা অরুণ কুমার।
    সহিংসতার জন্য রাজ্য সরকারকে দায়ী করেছেন মুজাফফরনগরের গভর্নর বি এল জোশি। তবে এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব। এছাড়া, সহিংসতা হতাহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়ারও অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন তিনি।