বেনাপোল পোর্ট থানা এক আতঙ্ক জনপদের নাম  

    0
    236

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,১২মার্চ,বেনাপোল প্রতিনিধি: বেনাপোল পোর্ট থানা এক আতঙ্ক জনপদের নাম। যেখানে সারাদিন একদল চৌকস দারোগা বিভিন্ন অজুহাতে লোক ধরে এনে থানা হাজতে গরুর খোয়াড়ের মত ঢুকিয়ে রাখে। আর দেন-দরবার শেষে গভীর রাতে মোটা অঙ্কের ঘুষ নিয়ে তাদের ছেড়ে দেয়। পুলিশ লোক ধরে এনে মুক্তিপন আদায় করার ঘটনার ঘটাচ্ছে বলে এলাকায় আলোচনা সমালোচনার ঝড় উঠেছে। ভয়ে কেউ পুলিশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছে না। যাদের আটক করে নাটকীয় ভাবে ঘুষ আদায় করছে তাদের আবার সতর্ক করে দেওয়া হচ্ছে কোনো প্রকারে যেন সাংবাদিকদের সামনে মুখ না খোলে। তাহলে আবারও তাকে ধরে এনে চালান করে দেওয়া হবে মাদক ও অস্ত্র দিয়ে।

    তবে থানা কর্মকর্তা বিষয়টি স্বীকার না করে উল্টো সাংবাদিকদের কাছে ওই সব পুলিশ কর্মকর্তাদের নাম জানতে চান।

    যশোরের শার্শা উপজেলার বেনাপোল, পুটখালি ও বাহাদুরপুর এই তিনটি ইউনিয়ন নিয়ে ২০০১ সালের ৫ এপ্রিল বেনাপোল পোর্ট থানার উদ্বোধন করেন তৎকালিন ডাক টেলিযোগাযোগ ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী  মোহাম্মাদ নাসিম। ছোট একটি থানায় এক ডজনের বেশি পরিদর্শক (এসআই), সহকারী পরিদর্শক (এএসআই) নিয়োগ দেওয়ায় এ অবস্থার সৃস্টি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, প্রতিদিন সাদা পোশাকে ও পোশাক পরিহিত অবস্থায় এসব পুলিশ কর্মকর্তারা চোরাচালানী, মাদক ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষদের আটক করে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরাও এদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না।

    সুত্র জানায়, পোর্ট থানার গ্রাম গুলিতে পুলিশ সাদা পোশাকে গিয়ে কারণে অকারণে প্রকৃত মাদক ব্যবসায়িদের আটক করতে না পেরে বা তাদের নিকট থেকে ফায়দা লুটতে না পেরে যাদের গায়ে পুরাতন মাদক ব্যবসার গন্ধ লেগে আছে তাদের ধরে নিজেদের কাছে থাকা ইয়াবা, ফেনসিডিল অথবা দুই এক পুরিয়া হেরোইন তাদের পকেটে অথবা বাড়ির আঙিনায় রেখে আটক করে চালান দেওয়ার নাম করে মোটা অংকের টাকা আদায় করছে।

    সুত্র থেকে আরও জানা যায়, গত ১৫ নভেম্বর বেনাপোলের পুটখালি গ্রামের মোশাররফ আলীর ছেলে রাশেদ আলীর কাছ থেকে থানা পুলিশ জোর করে ৪৫ হাজার টাকা আদায় করে। এরপর ১৩ নভেম্বর পুটখালি গ্রামের রবিউলের ছেলে আলাউদ্দিনকে আটক করে তার চোখে কাপড় বেধে শারীরিক নির্যাতন করে ৮৫ হাজার টাকা আদায় করে। একই গ্রামের সাহেবের ছেলে রমজান আলীকে গত ৮ নভেম্বর জোর করে ধরে মাদক দিয়ে চালান দেওয়ার নাম করে ৭০ হাজার টাকা আদায় করে। ২৯ অক্টোবর শুকুরের ছেলে আরিফকে আটক করে ৭০ হাজার টাকা আদায় করে। ৪ নভেম্বর পুটখালি গ্রামের মুনছুরের ছেলে জাফরকে আটক করে ১০ হাজার টাকা আদায় করে।

    এদিকে ১৮ ডিসেম্বর বেনাপোল পোর্ট থানার উত্তর বারোপোতার হাফিজুর রহমানকে রাজাপুর থেকে তার প্রেমিকাসহ থানা হাজতে আটকে রেখে তাদের নিকট থেকে ৩৪ হাজার টাকা উৎকোচ নিয়ে ছেড়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগিদের এক আত্মীয়।

    তিনি জানান, পোর্ট থানার জনৈক দারোগা বলে তোদের বিয়ে করতে ১ লাখ টাকা কাবিন লাগবে। ওটা আমাদের দিলে তোরা তাড়াতাড়ি ছাড়া পেয়ে যাবি। পুলিশ হাফিজুরকে নির্যাতন করে বলে তোর আত্মীয় কেনো সাংবাদিকদের জানিয়েছে। টাকা নেওয়ার পর হাফিজুরের আত্মীয়দের বলেছে এর পর যদি সাংবাদিকদের জানানো হয় তাহলে ফেনসিডিল, ইয়াবা ও অস্ত্র দিয়ে চালান দেওয়া হবে। প্রথমে হাফিজুরের আত্মীয়দের বলা হয় ১ লাখ টাকা দিলে ছেড়ে দেওয়া হবে। পরের দিন তারা এলাকার লোকজন দিয়ে থানায় সুপারিশ করিয়ে ৩৪ হাজার টাকা দিয়ে এ যাত্রা রক্ষা পান।

    সীমান্তবর্তী যশোর জেলার ৯টি থানার মধ্যে অন্যতম থানা হচ্ছে বেনাপোল পোর্ট থানা। এটি গোল্ডেন থানা হিসেবে পরিচিত। মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেনের মাধ্যমে এ থানায় পোস্টিং হয়ে থাকে। আর থানায় যোগ দিয়েই অনেক পুলিশ সদস্য জড়িয়ে পড়েন দুর্নীতিতে। এছাড়াও থানার কথিত ক্যাশিয়ার আমির হোসেন ওরফে জামাই আমিরের মাধ্যমে লেনদেন হয় বিভিন্ন সিন্ডিকেটের লাখ লাখ টাকা।

    ১৪ বছরে এ থানায় ২১ জন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) যোগদান ও বদলি হয়েছেন। এদের মধ্যে অনেকেই নানা দুর্নীতির অভিযোগে বদলি ও বহিষ্কৃত হয়েছেন। এক ডজনেরও বেশি উপ-পরিদর্শক (এসআই), সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) ও কনস্টেবলদের একই ভাগ্য বরণ করতে হয়েছে এ থানা থেকে।

    পুলিশ সদস্যদের নানা দুর্নীতির সংবাদের ব্যাপারে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অপূর্ব হাসানের সাথে কথা বললে তিনি জানান, কোনো পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। কিছু লোক পুলিশ সম্পর্কে একটু বেশি বাড়িয়ে বলে। সব পুলিশতো আর এক নয়। দু’একজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকতে পারে। তবে আমি সবাইকে সতর্ক করে দিয়েছি। কোনো অনিয়ম এর সাথে জড়িত থাকলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।