বিরোধীদের নামে দেশব্যাপী গায়েবী মামলা করেও শেষ রক্ষা হয়নি কথিত পীরের

0
616
বিরোধীদের নামে দেশব্যাপী গায়েবী মামলা করেও শেষ রক্ষা হয়নি কথিত পীরের

“ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, পীর দিল্লুর রহমানের অনুসারীরা দেশের বিভিন্ন এলাকায় তাদের বিরুদ্ধে মানবপাচারসহ ফৌজদারি মামলা করে সহজ-সরল ও নিরিহ মানুষকে হয়রানি করছে” মানবাধিকার প্রতিবেদন

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ  একেবারে ব্রাঞ্চ খোলার মতোই অবস্থা।ধর্মের নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করে সাধারণ মানুষকে ধোঁকা ও প্রতারণা বন্ধে কথিত রাজারবাগ পীর দিল্লুর রহমানের সকল আস্তানা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

পাশাপাশি ‘পীর’ ও তার পৃষ্ঠপোষকতায় ‘উলামা আঞ্জুমান বাইয়ি্যনাত’ অথবা ভিন্ন কোনো নামে কোনো জঙ্গি সংগঠন আছে কি না, পীরের প্রতিষ্ঠানগুলোর নামে দেশের বিভিন্ন স্থানে থাকা সম্পদ চিহ্নিত করা এবং তার সব সম্পদের উৎস সম্পর্কে বিশদ তদন্ত করতে নির্দেশ দিয়েছে বিজ্ঞ আদালত।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), বাংলাদেশ পুলিশের কাউন্টার টেরিরিজম ইউনিট এবং পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) এই আদেশ বাস্তবায়ন করে আগামী ৬০ দিনের মধ্যে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।

বিচারপতি এম, ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো, মোস্তাফিজুর রহমান সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চের দেওয়া পুর্ণাঙ্গ আদেশে এসব নির্দেশ দেওয়া হয়। কথিত রাজারবাগ পীরের দরবার নিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাত দফা সুপারিশ বিবেচনায় নিয়ে হাইকোর্ট এই আদেশ দেন। গত ১৯ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট এক আদেশে রাজধানীর রাজারবাগ দরবার শরিফ এবং পীর দিল্লুর রহমানের সব সম্পদ ও ব্যাংক হিসাব তদন্ত করতে নির্দেশ দেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত সোমবার বিচারপতিদের স্বাক্ষর শেষে লিখিত আদেশটি প্রকাশ করা হয়।

মঙ্গলবার ৫ অক্টোবর ২০২১ ইং তারিখে সংশ্নিষ্ট আইনজীবীদের মাধ্যমে ওই আদেশের অনুলিপি গণমাধ্যমের কাছে পৌছায়।

এদিকে ২৩ সেপ্টেম্বর কথিত রাজারবাগ দরবার শরীফ ও ‘পীর’ দিল্লুর রহমানের সব সম্পদ ও ব্যাংক হিসাব তদন্তের বিষয়ে হাইকোর্টের আদেশ বহাল রেখেছিলেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত।

গায়েবি মামলা করে মানুষকে হয়রানির অভিযোগে গত ১৬ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টে রিট করেন আট ভুক্তভোগী। এতে রাজারবাগ দরবার শরিফের পীর দিল্লুর রহমান এবং তার মুরিদদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া এবং তাদের সম্পত্তি ও ব্যাংক হিসাব তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করতে দুদক চেয়ারম্যানের নির্দেশনা চাওয়া হয়।

এ ছাড়া রাজারবাগ পীরের কর্মকাণ্ড নিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাতদফা সুপারিশ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন ও যুক্ত করা হয় ওই রিটে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, পীর দিল্লুর রহমানের অনুসারীরা দেশের বিভিন্ন এলাকায় তাদের বিরুদ্ধে মানবপাচারসহ ফৌজদারি মামলা করে সহজ-সরল ও নিরিহ মানুষকে হয়রানি করছে।

এরই ধারাবাহিকতায় ১৯ সেপ্টেম্বর রাজারবাগ দরবার শরিফ এবং পীর দিল্লুর রহমানের সব সম্পদ ও ব্যাংক হিসাব তদন্ত করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। লিখিত আদশে হাইকোর্ট রাজারবার দরবার নিয়ে রুলও জারি করেছেন। রুলে কেন রিট আবেদনকারীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মিথ্যা ও হয়রানীমূলক ক্রমাগত ফৌজদারী মামলা দায়েরে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান পূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণে নির্দেশ দেওয়া হবে না বা ওই অদালতের বিবেচনায় যথাযথ প্রচারযোগ্য অন্যবিধ আদেশ বা অধিকতর আদেশ বা আদেশ প্রচারিত হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে।

আদেশে বলা হয়, ‘রুলটি বিচারাধীন থাকাবস্থায় ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি) এর অতিরিক্ত মহা-পুলিশ পরিদর্শককে দরখাস্তকারীগণের বিরুদ্ধে বিভিন্ন হয়রানিমুলক মামলা দায়েরের সঙ্গে জডিত ব্যক্তিগণকে চিহ্নিত ও প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণক্রমে এ আদেশ পাওয়ার ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে হাইকোর্টে একটি প্রতিবেদন জমা দানের নির্দেশ দেওয়া হলো।’ আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শিশির মনির। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।