ঢাকা, ০৪ মে: আজ শনিবার দুপুর ২টায় রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে সমাবেশ করবে ১৮ দলীয় জোট। মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে এটাই বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের প্রথম সমাবেশ। সাভার ট্রাজেডির প্রতিবাদ, জড়িতদের শাস্তি, সরকারের ব্যর্থতা, দুর্নীতি, নির্দলীয় সরকার পুনর্বহাল ও সরকারের পদত্যাগের দাবিতে এ সমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষণ দেবেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
সভাপতিত্ব করবেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ও ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা।
এর আগে রাজধানীজুড়ে বিভিন্ন কর্মসূচির পাশাপাশি জোটের পক্ষে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেই বড় ধরনের সমাবেশ করা হয়। কিন্তু শাপলা চত্বরের মতো বড় জায়গায় এই প্রথম সমাবেশের অনুমতি পেয়ে অনেকটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে প্রধান বিরোধী জোট। তবে জোটের নেতারা বলছেন, ভেন্যু যত বড়ই হোক সর্ববৃহৎ সমাবেশ করে তারা সরকারকে এবার তাক লাগিয়ে দেবেন। সমাবেশ হলেও সারাদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে নেতাকর্মীরা যোগ দিয়ে একে মহাসমাবেশে রূপান্তর করবে। তবে সকাল থেকেই দলে দলে বিএনপি ও ১৮দলের শরিকদলগুলোর নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে জড়ো হতে শুরু করেছেন। সমাবেশকে ঘিরে রাজধানীতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোড়দার করা হয়েছে। বরাবরের মতো সকাল থেকেই মাঠ দখলে নিয়েছে জামায়াত ও শিবিরের নেতাকর্মীরা। তারা মঞ্চের পশ্চিম দিক দৈনিক বাংলা মোড় ও বায়তুল মোকাররম এলাকায় অবস্থান নিয়েছে।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে পুলিশের পক্ষ থেকে সমাবেশের অনুমতি পেয়ে সন্ধ্যা থেকেই মঞ্চ নির্মাণের কাজ শুরু হয়। রাতভর কাজ শেষে ৫০ফুট দৈর্ঘ্য আর ২৪ফুট প্রস্থ মঞ্চ নির্মাণ শেষ হয়। পল্টনমুখী এবং দৈনিক ইত্তেফাকমুখী জনসাধারণ যাতে মঞ্চ দেখতে পায় এজন্য মঞ্চের দুই পাশ খোলা রাখা হয়েছে। জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতের পক্ষ থেকে সামবেশকে কেন্দ্র করে আছে ব্যাপক প্রস্তুতি। শুক্রবার রাত থেকে তারা ব্যানার, ফ্যাস্টুন লাগানোর কাজ শুরু করে। মানবতাবিরোধী অপরাধে আটক জামায়াত নেতাদের মুক্তি ও সরকারবিরোধী স্লোগান দেন সমাবেশে আসা নেতাকর্মীরা। এছাড়া বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরাও জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি সম্বলিত ব্যানার ফেস্টুনসহ সমাবেশস্থলে জড়ো হচ্ছেন।
সমাবেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মঞ্চের আশপাশে এবং সমাবেশের চারপাশে মোতায়েন করা হয়েছে। ১৮ দলের এই জনসভাকে কেন্দ্র করে পুলিশ কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। মঞ্চের আশপাশে বসানো হয়েছে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা। বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, আড়াই হাজারের একটি স্বেচ্ছাসেবক দলও নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে। বিরোধী দলের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, জনসমাগম ঠেকাতে সরকারের পক্ষ থেকে বাধা দেয়া হয়েছে; তবে সে অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন সরকারি দলের নেতারা। মতিঝিলের এ জনসভার অনুমতি নিয়েও সরকার টালবাহানা করেছিলো বলে অভিযোগ বিএনপির। সমাবেশের দুদিন আগে ১৩টি শর্তে অনুমতি দিয়েছে পুলিশ। এছাড়া দলের পক্ষ থেকে সমাবেশের আইনশৃঙ্খলা তত্ত্বাবধান করবেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অব. আ স ম হান্নান শাহের নেতৃত্বে নিরাপত্তা টিম। আর স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করবেন স্বেচ্ছাসেবক দল, যুবদল, ছাত্রদল, মহিলাদল, শ্রমিকদলসহ বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সমাবেশ উপলক্ষে রাজধানীজুড়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোড়দার করা হয়েছে। সমাবেশে আগতদের স্বাস্থ্যসেবা দিতে ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ(ড্যাব)এর ১০টি টিম কাজ করবে।
আজ শনিবার বিকেলে অনুষ্ঠেয় বিএনপির জনসভা ও রবিবার হেফাজতের ঢাকা অবরোধ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে উৎকণ্ঠায় রয়েছেন রাজধানীবাসী। খুব প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে বের হচ্ছেন না। আজ শনিবার সকাল থেকে রাজধানীতে যানচলাচলও কমে গেছে। রাস্তায় ব্যক্তিগত গাড়ি নেই বললেই চলে। রাজধানী থেকে শনিবার সকালে দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। অন্যান্য জেলা থেকে রাজধানীর গাবতলী, সায়েদাবাদ, মহাখালী বাস টার্মিনালে বাস কম আসছে।পরিবহণ সূত্রে জানা গেছে, শনিবার দুপুরের পর থেকে দূরপাল্লার কোনো বাসই ঢাকার দিকে আসবে না। আজকের সমাবেশকে কেন্দ্র করে শাপলা চত্বরের সামনের সড়ক বন্ধ করে দিয়ে ফকিরাপুল পুলিশ বক্সের সামনের সড়ক, দৈনিক বাংলা মোড়, মতিঝিলের শিল্প ব্যাংক ভবন, ইত্তেফাক মোড় দিয়ে ঘুরে গাড়ি চলাচল করতে বলা হয়েছে।
সমাবেশ যোগ দিতে ইতিমধ্যে ঢাকা ও আশপাশের জেলার নেতাকর্মীরা রাজধানীতে অবস্থান করছেন। ঢাকা অবরোধ কর্মসূচিতে যোগ দিতে হেফাজতের নেতাকর্মীরা অনেকেই ঢাকায় চলে এসেছেন। সরকার বাধা দিতে পারে এই আশঙ্কায় হেফাজত কর্মীরা কর্মসূচির এক-দুদিন আগেই ঢাকায় চলে এসেছেন। হেফাজত নেতারা জানান, তাদের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ হবে। তবে কয়েকটি ইসলামি দলের অবরোধ ঠেকানো এবং হরতাল কর্মসূচির কারণে জনমনে উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। রবিবার রাজধানী কার্যত অচল থাকবে বলে জানিয়েছেন হেফাজত নেতারা। ঢাকার বাইরে থেকে কোনো যানবাহন যেমন রাজধানীতে প্রবেশ করতে পারবে না তেমনি ঢাকার ভেতরে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেবেন হেফাজতের নেতাকর্মীরা। রাজধানীবাসীর উৎকণ্ঠিত হওয়ার আরেকটি কারণ হলো, ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি একদিনের বেশি স্থায়ী হতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আগামী নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংলাপের প্রস্তাবের পর মতিঝিলের সমাবেশেই প্রথম বক্তব্য নিয়ে আসছেন বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া। শনিবার বিকালে শাপলা চত্বরে ১৮ দলীয় জোটের এই সমাবেশ হবে, যার প্রস্তুতি সম্পন্ন বলে বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন। বিরোধীদলীয় নেতার প্রেসসচিব মারুফ কামাল খান সকালে বলেন, সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি, সাভার ট্র্যাজেডিতে ব্যাপক মানুষের প্রাণহানির প্রেক্ষাপটে এই সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপারসন জাতির উদ্দেশে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখবেন।
মতিঝিলের এই সমাবেশের একদিন আগে শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকার গঠনেও তার সরকারের আপত্তি নেই। তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলনরত বিরোধীদলীয় নেতাকে তার আগের দিনই সংলাপে বসার আহ্বান জানান তিনি। এর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির পক্ষে দলীয় চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু বলেন, নির্দলীয় সরকার পদ্ধতি পুনর্বহালের দাবি মানা হলে তারা সংলাপে বসতে পারেন এবং সেজন্য আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিতে হবে।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা সংলাপের আগে এ ধরনের শর্ত দেয়ার সমালোচনা করেছেন। দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, তারা প্রস্তাবের প্রতিক্রিয়া খালেদা জিয়ার মুখ থেকেই শুনতে চান। তা জেনেই সংলাপের জন্য আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাঠাবেন তারা। সংলাপ নিয়ে আলোচনার মধ্যে বিকালের জনসভায় আসছেন বিরোধীদলীয় নেতা। সাভারের ধ্বংসস্তূপে উদ্ধার কার্যক্রমের প্রেক্ষাপটে এই সমাবেশ না করার আহ্বান ছিলো প্রধানমন্ত্রীর। বেলা ২টায় এই জনসভা শুরু হলেও খালেদা জিয়া সাড়ে ৩টার দিকে সমাবেশস্থলে যাবেন বলে বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন। ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবদুস সালাম বলেন, সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ভোরেই শেষ হয়েছে মঞ্চ নির্মাণের কাজ। দুপুরের আগেই নেতাকর্মীরা জড়ো হবেন সমাবেশস্থলে।
গত ২৭ এপ্রিল রাতে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটি এবং ১৮ দলের পৃথক বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ এ সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। আগামীকাল রবিবার ভোর থেকে ঢাকা অবরোধের কর্মসূচি রয়েছে হেফাজতে ইসলামের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতিমধ্যে দুই কর্মসূচি স্থগিতের আহ্বান জানালেও তা প্রত্যাখ্যান করেছেন উভয় সংগঠনের নেতারা।