বিএনপি-ঘোষিত আট জেলার সমাবেশ নরসিংদী থেকে শুরু করবেন আজ

    0
    229

    আমারসিলেটটোয়েন্টিফোর,০৮ সেপ্টেম্বর  : বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুসহ সরকার বিরোধী আন্দোলনে গতি আনতে বিএনপি-ঘোষিত আট জেলার সমাবেশ নরসিংদী থেকে শুরু করবেন। আজ বিকেলে নরসিংদী পৌর শিশুপার্ক মাঠে এ মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এ মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে নরসিংদীর বিএনপিতে বইছে এখন উৎসবের আমেজ। কেন্দ্রীয় নেতাদের পদচারণায় সরব স্থানীয় বিএনপির রাজনীতি অঙ্গন, প্রাণবন্ত স্থানীয় নেতারা। নতুন উদ্যমে উজ্জীবিত হয়ে খালেদা জিয়ার জনসভাকে জনসমুদ্রে পরিণত করতে মরিয়া বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।
    স্থানীয় বিএনপির নেতারা বলছেন, প্রায় ২০ বছর পর আজ রবিবার নরসিংদীতে জনসভায় যোগ দিতে আসছেন বিরোধী দলীয় নেতা ও বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া । নরসিংদীর এ জনসভা স্মরণকালের সবচেয়ে বড় জনসভায় পরিণত করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ তারা। খালেদা জিয়ার জনসভা সফল করতে স্থানীয় জনতা ও সাংবাদিকদের সহযোগিতা চেয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান। এদিকে মহাসড়কে নিজেদের সমর্থন প্রদর্শনের মহড়ার যুদ্ধে নেমেছেন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। খালেদা জিয়ার মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিনের মান অভিমান ও বিবেধ ভুলে একই কাতারে কাজ করছেন বিএনপির রাজনীতিতে নিস্ক্রিয় থাকা শীর্ষ নেতারা। তবে এ ঐক্য নির্ভর করছে আগামীকালের জনসভায় চেয়ারপার্সনের উপস্থিতিতে বক্তব্যের সুযোগ পাওয়ার উপর।
    ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নরসিংদীর ৫টি আসনের সব কটিতে বিএনপির প্রার্থীর জয় হয়। ৯৬ সালে দু’টি হাতছাড়া হয়ে যায়। ২০০১ সালে চারটি আসন পায়। তবে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের গণজোয়ারে সবকটি আসন হারায় বিএনপি। তবে ভরাডুবির জন্য আওয়ামী লীগের গণজোয়ারের পাশাপাশি দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও জেলার শীর্ষ নেতা বিএনপির সাবেক মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়া ও নরসিংদী-৪ আসনের সাংসদ সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুলের সংস্কারের ডাক দিয়ে বিএনপি থেকে ছিটকে পড়াও অন্যতম কারণ বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
    দীর্ঘ সময় চড়াই উতরাই পার করে নেতৃত্বের আসনে বসে বিএনপির কেন্দ্রীয় শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবির খোকন। তবে খোকনের রাজনৈতিক যোগ বিয়োগে অনেক প্রভাবশালী নেতা পদ হারান। প্রকাশ্যে রুপ নেয় জেলা বিএনপির কোন্দল।  বিএনপির একটি সূত্রে জানা গেছে, ঐক্য অটুট রাখতে উভয় পক্ষই আন্তরিক। তবে চেয়ারপার্সনের উপস্থিতিতে বিরোধী শিবির থেকে বক্তব্যের সুযোগের উপর নির্ভর করছে ঐক্যের স্থায়িত্ব। আর এ সারিতে রয়েছেন সারা দেশের বিএনপির একমাত্র সদর উপজেলার চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সহসভাপতি মঞ্জুর এলাহী।
    এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে নাহিয়ান স্বজন বলেন, নরসিংদীর বিএনপির রাজনীতিতে একটি বড় অংশই আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার অনুসারী। প্রয়াত নেতা মান্নান ভূঁইয়ার বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হলেই তারা বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হবে। এতে বিএনপির সাংগঠনিক শক্তি বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। তবে বিগত তত্ত্ব¡াবধায়ক সরকারের সময় জিয়া পরিবারকে নিয়ে কটুক্তি করে সমালোচিত হওয়া সংস্কারপন্থী নেতা সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল বিএনপির রাজনীতিতে নিস্ক্রিয় থাকলেও খালেদা জিয়ার মহাসমাবেশকে সামনে রেখে সক্রিয় হয়েছেন। শোনা যাচ্ছে, প্রায় ২০ হাজার লোকের মিছিল নিয়ে তিনি মহাসমাবেশে যোগ দিবেন। তবে দলীয় পদ হারানো এ নেতারা তৎপরতা খালেদা জিয়ার কাছে কতটুকু গুরুত্ব পায় এটায় এখন দেখার বিষয়।
    অন্যদিকে সরজমিন শহরের বাসাইলে পৌর শিশু পার্কে খালেদা জিয়ার জনসভাস্থল ঘুরে দেখা যায়, শ্রমিকরা অক্লান্ত কাজ করে যাচ্ছেন নির্দিষ্ট সময়ের ভিতর মঞ্চের নির্মাণ কাজ শেষ করার জন্য। মহাসমাবেশের সার্বিক কাজ তদারকি করছেন জেলা বিএনপির সভাপতি খায়রুল কবির খোকন ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। মহাসমাবেশ স্থলের চারপাশ বর্ণিল হয়েছে নেতা-কর্মীদের ব্যানার ও ফেস্টুনে। একই সাথে নেত্রীকে বরণ করে নিতে ঢাকা-সিলেটের মহাসড়কের নরসিংদীর অংশে নির্মাণ করা হয়েছে দেড় শতাধিক তোরণ ও টানানো হয়েছে অসংখ্য ব্যানার-ফেস্টুন। এদের মধ্যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তোরণের সংখ্যাই বেশি।
    নেতা কর্মীরা জানায়, মহাসমাবেশে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মঞ্জুর এলাহী ৩০ হাজার, রায়পুরা বিএনপির আহ্বায়ক জামাল চৌধুরী ১০ হাজার, সালেহ চৌধুরী ১০ হাজার, সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল ২০ হাজার লোক জমায়েতের উদ্যোগ নিয়েছে। পাশাপাশি মহাসমাবেশে নরসিংদীর পার্শ্ববর্তী জেলা কিশোরগঞ্জ, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকেও বিপুল পরিমাণে লোক সমাগম হওয়ার আশা করা হচ্ছে। বিএনপির সূত্র জানায়, মহাসমাবেশকে সফল করতে মঞ্চ, মাইক, প্রচার, মাঠ সংস্কার, আপ্যায়ন, অভ্যর্থনা ও সাংস্কৃৃতিক অনুষ্ঠান বাবদ ৩০ লাখ টাকা বাজেট করা হয়েছে। ইতিমধ্যে সকল কাজ শেষ হয়েছে। মঞ্চে এক সঙ্গে একশত লোক উঠতে পারবে বলে তিনি জানান।
    সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সহসভাপতি মঞ্জুর এলাহী বলেন, নরসিংদীর এ জনসভা স্মরণকালের সবচেয়ে বড় জনসভায় পরিণত করতে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। সেই লক্ষ্যেই আমরা নেতা-কর্মীদের নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। জেলা বিএনপির সভাপতি খায়রুল কবির খোকন বলেন, সমাবেশে স্থানীয় পর্যায়ের ১০ জন ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখবেন। তবে খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে কয়জন স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বক্তব্যের সুযোগ পাবেন সেটা নির্ধারণ করবে মহাসমাবেশের প্রধান সমন্বয়কারী বিএনপির ভাইস প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লাহ আল নোমান। তবে আমরা অবশ্যই বক্তব্য দেয়া নিয়ে যাতে দলের ঐক্য নষ্ট না হয় সেদিকে খেয়াল রাখবো।