বাড়ীতে মা- বাবা ও বোনকে নিয়ে ঈদ করা হলো না নবীগঞ্জের ‘অমৃতার’

0
594
বাড়ীতে মা- বাবা ও বোনকে নিয়ে ঈদ করা হলো না নবীগঞ্জের 'অমৃতার'

নূরুজ্জামান ফারুকী, বিশেষ প্রতিনিধিঃ কথা ছিলো আসন্ন ঈদুল আযহায় বাবার বাড়ি আসবেন। মা-বাবা ও ভাই-বোনের সঙ্গে ঈদ করবেন। কর্মস্থল থেকে বাড়ি আসার সময় সবার জন্য নিয়ে আসবেন নতুন জামাকাপড়।

কিন্তু ভাগ্যের লিখন যায়না খণ্ডন। নতুন জামা-কাপড় তো দূরের কথা, মেয়ের মুখে মা ডাক আর কোনোদিন শুনতে পারবে না অমৃতার গর্ভধারিনি মা আনোয়ারা বেগম।

নবীগঞ্জ উপজেলার পূড়ব বড় ভাকৈর (পূর্ব) ইউনিয়নের রামপুর গ্রামের মোতালিব মিয়ার ও আনোয়ারা বেগমের মেয়ে অমৃতা বেগম (২৯)। কাজ করতেন নারায়ণগঞ্জ ভুলতা এলাকার সজীব গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কারখানায়। বৃহস্পতিবারের (৮ জুলাই ২০২১) ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে অঙ্গার হয়ে যান অমৃতা। কাজ করছিলেন কারখানার চতুর্থ তলায়। এ তলা থেকে অর্ধশতাধিক দ্বগ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে- এগুলোর মধ্যে অমৃতার লাশও রয়েছে।

অমৃতার ৭ বছরের একমাত্র মেয়ের ডিএনএ সংগ্রহ করা হয়েছে। এবার মিলানো হবে লাশগুলোর সঙ্গে।

অমৃতার মা আনোয়ার বেগম এ প্রতিবেদককে জানান, তার স্বামী পঙ্গু । ৩ মেয়ে ১ ছেলের সংসার অনেকটাই অমৃতার আর্থিক সহযোগিতায় চলতো। ওই ফ্যাক্টরিতে কাজ করার সুবাধে স্বামী ও মেয়েকে নিয়ে অমৃতা নারায়ণগঞ্জের ভুলতা-গাউছিয়ার ভোলাকান্দা-নতুন বাজার (দক্ষিণ পাড়ার) হাবিব মিয়ার বাড়িতে বাসা ভাড়া করে থাকতেন।

আনোয়ারার তিন মেয়ে এক ছেলের মধ্যে অমৃতাই বড়। বড় ভাই বিয়ে করে আলাদা সংসার নিয়ে থাকেন। অল্প বয়স থেকে অমৃতাই বাবা-মাকে দেখছেন। শত বাঁধার মধ্যেও চালিয়ে যাচ্ছেন স্বামীর সংসারের সঙ্গে বাবা-মার সংসারও। ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে সংসারের হাল ধরেন অমৃতা। সর্বশেষে গত জুন মাসে ৫ হাজার ৭শ টাকা বেতনে নতুন চাকরি নেন হাসেম ফুড লিমিটেডে। সুমা নামে ৭ বৎসরের এক মেয়ে সন্তান আছে অমৃতার।

অমৃতার কথা বলতে বলতে ঢুকরে ঢুকরে কাঁদেন আনোয়ার বেগম। তিনি বিলাপ করে বলেন, ‘ও আমাকে ফোনে বলেছিলো- আগামী কোরবানির ঈদে আমি বাড়ি আসবো। সবার জন্য নতুন কাপড় নিয়ে আসবো। এবার সবাইকে নিয়ে বাড়িতে ঈদ করবো। কিন্তু কী থেকে কী হয়ে গেলো। মা-রে, আমার অমৃতারে, আমাদের কিছু লাগবো না মা, তুই আমার বুকে ফিইরা আয়। তুই ছাড়া আমাদেরকে আর কে দেখবো।’

গত বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) বিকেল পৌনে ৫টার দিকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের কারখানায় আগুনের সূত্রপাত হয়। প্রায় ৪৫ ঘণ্টা পর শনিবার (১০ জুলাই) বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে।

অগ্নিকাণ্ডের পর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ভবন থেকে একে একে ৫২ জনের মরদেহ উদ্ধার করে। মরদেহগুলো এতটাই পুড়ে যায় যে- দেখে শনাক্ত করা সম্ভব নয়। ফলে সেগুলো এখনো ঢামেক ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। স্বজনদের ডিএনএ টেস্ট করিয়ে মরদেহ শনাক্তের পর হস্তান্তর করা হবে।

এদিকে, এই অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে নবীগঞ্জের অমৃতাও নিখোঁজ রয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে- এই ৫২টি লাশের মধ্যে একটি অমৃতার। এ মর্মান্তিক ঘটনায় অমৃতার বাবার বাড়িতে বইছে শোকের মাতম।

অমৃতার মা আনোয়ারা বেগমের এখন একটাই কথা- ‘আমি আর কিছু চাই না, আমি শুধু আমার মেয়ের লাশ চাই- বিচার চাই।’