বড়লেখায় অপচিকিৎসায় পা হারাল স্কুলছাত্র মাহফুজঃঅপচিকিৎসকদের বিরুদ্ধে মামলা

0
276

আফজাল হোসেন রুমেল,বড়লেখা প্রতিনিধিঃ বড়লেখায় হাড়জোড়া কবিরাজ সিন্ডিকেটের অপচিকিৎসায় ডান পা হারিয়েছে মাহফুজ আহমদ নামে নবম শ্রেণির এক স্কুলছাত্র।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী স্কুলছাত্রের মা শামছুন নেহার মঙ্গলবার কথিত কবিরাজ ও ডাক্তার এবং তাদের দুই সহযোগীর বিরুদ্ধে বড়লেখা সিনিয়ির জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেছেন। আদালত ৪৮ ঘন্টার মধ্যে মামলাটির প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সংশ্লিষ্ট থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলার আসামীরা হচ্ছেন, উপজেলার তারাদরম গ্রামের কথিত কবিরাজ আনোয়ার হোসেন, তার ছেলে আব্দুস ছামাদ, উত্তর বর্ণি গ্রামের কথিত ডাক্তার এহসানুল করিম মাহবুব ও বর্ণি ছেগা গ্রামের দেলোয়ার হোসেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বর্ণি ছেগা গ্রামের সাইদুল ইসলামের ছেলে বর্ণি এবি উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র মাহফুজ আহমদকে গত ৭ সেপ্টেম্বর রাস্তায় পেয়ে ৪ নম্বর বিবাদী দেলোয়ার হোসেন মোটরসাইকেলের পেছনে তুলেন। পথিমধ্যে ধাক্কা দিয়ে পাকা রাস্তায় ফেলে দিলে মাহফুজ আহমদের ডান পায়ের হাঁটুতে আঘাত পায়। পরে দেলোয়ার তাকে কথিত কবিরাজ আনোয়ার হোসেনের কাছে নিয়ে গেলে সুস্থ করতে তিনি ওষুধ ও ফি বাবত বড় অঙ্কের টাকা নির্ধারণ শেষে একদিন অন্তর অন্তর নিয়ে যেতে বলেন। কবিরাজ আনোয়ার হোসেন ও তার ছেলে আব্দুস ছামাদ মিলে তাদের নিজস্ব তৈরী মলমের লেপ ও খাঁটি বেঁধে চিকিৎসা করতে থাকেন। ৮ দিন পর উন্নতির বদলে মারাত্মক অবনতি ঘটায় স্কুলছাত্রের বাবা-মা উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেন। কবিরাজ আনোয়ারও চিকিৎসা করতে অপারগতা প্রকাশ করে ফকিরবাজারের কথিত ডাক্তার ৩ নং আসামী এহসানুল করিম মাহবুবের কাছে পাঠিয়ে দেয়। সে ও সুস্থ করে তুলার আশ্বাস দিয়ে টাকা পয়সা হাতিয়ে ১০ দিন চিকিৎসা করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। এরই মধ্যে মাহফুজের ডান পায়ে পঁচন ধরতে শুরু করে। ২৯ সেপ্টেম্বর সিলেটের একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে ভর্তি করেন। পরে চিকিৎসকরা অপারেশনের মাধ্যমে তার ডান পা কেটে ফেলেন।

ভুক্তভোগী স্কুলছাত্রের বাবা সাইদুল ইসলাম অভিযোগ করেন, সিলেটের চিকিৎসরা বলেছেন, ভুল চিকিৎসায় এমন পরিণতি ঘটেছে। সময়ক্ষেপন করায় পা কেটে ফেলা ছাড়া উপায় নেই। দালাল নিয়োগ করে আনোয়ার কবিরাজ হাড়ভাঙ্গা রোগী সংগ্রহ করে। সহজসরল লোকজন না বুঝে তার কাছে গিয়ে সর্বস্ব খুয়াচ্ছেন। তার অপচিকিৎসায় অনেকে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। তিনি ও তার সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে বিরাট আর্থিক ক্ষতির সাথে সারা জীবনের জন্য ছেলের পা হারিয়েছেন তিনি। চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসায় মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দাবী করেন তারা।

বড়লেখা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বেঞ্চ সহকারী ইকরাম হোসেন ভুল চিকিৎসায় স্কুলছাত্রের পা হারানোর ঘটনায় কবিরাজসহ ৪ ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা রুজুর সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, আদালত আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে মামলাটির প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সংশ্লিষ্ট থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন।