ফোনে বিব্রত বিচারপতি

    0
    240

    আমারসিলেট24ডটকম,০৪ফেব্রুয়ারীঃ বিচার প্রভাবিত করতে সরকারের এক মন্ত্রী ফোন করেছিলেন হাইকোর্টের এক বিচারপতিকে। এ কারণে মামলার শুনানি করতে অপরাগতা জানিয়েছে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ। মন্ত্রীর ফোন করার বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতির কাছে নথি পাঠিয়েছে ওই বেঞ্চ। তবে নথিতে কোন মন্ত্রী ফোন করেছিলেন তার উল্লেখ নেই। মন্ত্রীর ফোন করার বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর এ নিয়ে আদালত পাড়ায় দিনভর নানা গুঞ্জন চলে।বিচারপতি শরীফ উদ্দিন চাকলাদার এবং বিচারপতি একে এম সাহিদুল হকের বেঞ্চের সোমবার ব্যাংক ঋণ সংক্রান্ত একটি মামলা শুনানির জন্য ধার্য ছিলো।

    কিন্তু শুনানি শুরুর আগেই বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক বিচারপতি শরীফউদ্দিন চাকলাদার বলেন, এ মামলায় একজন মন্ত্রী ফোন করেছিলেন। এ অবস্থায় আমরা মামলাটি শুনবো না। মামলাটি পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আমরা প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠিয়ে দেবো। হাইকোর্টের এ সংক্রান্ত আদেশে বলা হয়েছে, এ মামলার শুনানি চলাকালে একজন মন্ত্রী আমাদের টেলিফোন করেছিলেন। এ কারণে আমরা এ মামলাটির শুনানি গ্রহণে ইচ্ছুক নই। হাইকোর্টের আদেশের বিষয়টি সাংবাদিকদের কাছে নিশ্চিত করেন এ মামলায় বরেন্দ্র ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি প্রতিষ্ঠানের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এম আসাদুজ্জামান। তিনি জানান, আজ মামলাটি শুনানির জন্য দিন ধার্য্য ছিল।

    মামলার বিবরণে জানা যায়, বেসরকারি ব্যাংক যমুনা ব্যাংক লিমিটেড থেকে ২০০৬ সালের ৩১শে জুলাই জারিফ ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি প্রতিষ্ঠান ৭০ লাখ টাকা ঋণ নেয়। এ টাকা ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকের কাছে ৫টি ফ্ল্যাট বন্ধক রাখা হয়। এ ফ্ল্যাটগুলোর মালিক হচ্ছেন এম এম মুমিত এবং বরেন্দ্র ইন্টারন্যাশনাল। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঋণ পরিশোধ না করায় যমুনা ব্যাংক তাদের প্রতি ২০০৯ সালের ১৬ই এপ্রিল নোটিস ইস্যু করে। এ নোটিসে ৮৪ লাখ ১৬ হাজার ৮৪৫ টাকা পরিশোধ করতে বলা হয়। একই বছর ২২শে জুলাই যমুনা ব্যাংকের পক্ষ থেকে আরেকটি নোটিস ইস্যু করা হয়। এ নোটিসে ঋণগ্রহীতাদের দুই কোটি ১৭ লাখ ৫ হাজার টাকা পরিশোধ করতে বলা হয়। ঋণগ্রহীতারা আলোচনা সাপেক্ষে বিষয়টি মীমাংসার জন্য ব্যাংক কতৃপক্ষকে চিঠি দেয়। এতে দুই নোটিসে অর্থের পরিমাণে বিপুল ব্যবধানের বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়। ২০১০ সালের ১৩ই জুলাই এ ব্যাপারে সংবাদপত্রে নোটিস ইস্যু করে যমুনা ব্যাংক। যে নোটিসে ঋণগ্রহীতাদের ৮৭ লাখ ৬১ হাজার টাকা পরিশোধ করতে বলা হয়। ২০০৯ সালের ২২শে জুলাই ইস্যু করা নোটিসের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ঢাকার প্রথম যুগ্ম-জেলা জজ আদালতে মামলা দায়ের করে ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠান। একই নোটিস চ্যালেঞ্জ করে জারিফ ইন্টারন্যাশনাল হাইকোর্টে একটি রিট আবেদনও দায়ের করে। হাইকোর্ট প্রথম নোটিসে দাবি করা ৮৪ লাখ ১৬ হাজার ৮৪৫ টাকা পরিশোধের শর্তে ২২শে জুলাইয়ের দ্বিতীয় নোটিসের কার্যকারিতা স্থগিত ঘোষণা করে।

     ২০১১ সালের ২১শে আগস্ট ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠান পে-অর্ডারের মাধ্যমে যমুনা ব্যাংককে এ অর্থ পরিশোধ করে। কিন্তু যমুনা ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা এরইমধ্যে বন্ধকে থাকা সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়েছে। এক কোটি ২০ লাখ টাকা দামে এ সম্পত্তি বিক্রি করা হয়েছে বলে ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়। কিন্তু সম্পত্তির মালিক এম এম মুমিত এবং বরেন্দ্র ইন্টারন্যাশ এ বিক্রির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ব্যাংকের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ এনে নিম্ন আদালতে মামলা করে। এ মামলাটি খারিজের জন্য ব্যাংকের কাছ থেকে নিলামে সম্পত্তি ক্রয়কারী মোঃ হোসেন খান নিম্ন আদালতে আবেদন করেন।

    নিম্ন আদালত আবেদনটি খারিজ করে দেয়। এ আদেশের বিরুদ্ধে তিনি উচ্চ আদালত সিআর (সিভিল রিভিশন) মামলা দায়ের করেন। উচ্চ আদালত এ নিয়ে রুল জারি করে। গত ২৪শে নভেম্বর বিচারপতি শরীফ উদ্দিন চাকলাদার এবং বিচারপতি একে এম সাহিদুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ রুলের ওপর শুনানি শুরু হয়। গতকাল আবারও শুনানি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শুনানির আগেই বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক বিচারপতি শরীফ উদ্দিন চাকলাদার কোনো মন্ত্রীর কাছ থেকে টেলিফোন পাওয়ার তথ্য জানিয়ে মামলাটি শুনানি না করার কথা বলেন।