নিজস্ব প্রতিনিধিঃ মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নে পরপর তিনটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনার তৃতীয় ঘটনা সুইলপুর (দুবারহাট) সমশেরগঞ্জ বাজার এলাকায় কিশোর রহিম (১৫) গত ২৭ ডিসেম্বর ২০২১ ইং তারিখ দিবাগত রাত সাড়ে আটটা থেকে নিখোঁজের পর দিন ২৮ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখ সকালে স্থানীয় গ্রাম্যবাজারের অদূরে ধান ক্ষেতের নেড়ার উপর থেকে কিশোরের মৃতদেহ পাওয়া যায়। কে বা কারা এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত, তা ছিল অধরা। প্রাথমিক ভাবে ক্লু-লেস হলেও অবশেষে নানা প্রক্রিয়ায় ৫ জনকে গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করতে সক্ষম হয়েছে শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশ।
কিশোর রহিম (১৫) হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশের দাবি অভিযুক্ত আসামি ও প্রত্যক্ষ সাক্ষীদের সাক্ষ্যমতে ও তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে নিখোঁজ কিশোর হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত পাঁচ (৫) আসামিকে বিভিন্ন সময়ে ঘটনাস্থলের আশপাশ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলো,জুয়েল মিয়া (২৫) পিতা ইলিয়াছ মিয়া, গ্রাম-রায়পরান,মির্জাপুর। অভিযুক্ত অলিউর রহমান (১৫) পিতা আবুল কালাম,গ্রাম-ছত্রাবট,মির্জাপুর।সাদিক মিয়া (২৯) পিতা-আখলিছ মিয়া, গ্রাম রায়পরান,মির্জাপুর। জসিম মিয়া (২৯) পিতা-হারিস মিয়া,গ্রাম-রায়পরান,মির্জাপুর। মারাজ মিয়া (৩৭) পিতা- ইউনুছ মিয়া-উরুফে-বঙ্কুই,গ্রাম-রায়পরান,মির্জাপুর সর্ব থানা শ্রীমঙ্গল,জেলা মৌলভীবাজার।
জানা যায়, হত্যাকাণ্ডের তৃতীয় দিনে মামলা রেকর্ড হওয়ার পর বিভিন্ন সময়ে অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে বিভিন্ন স্থান;বিশেষ করে ঘটনাস্থলের আশপাশ এলাকা হইতে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এছাড়াও স্থানীয়দের দাবী আটক আসামিরা হত্যার বিচার চেয়ে গত ২ ডিসেম্বর ২০২১ ইং তারিখে মানব্বন্ধনেও অংশগ্রহণ করেছে !
এ ব্যাপারে মামলার আইও এস আই নুরুল ইসলাম আমার সিলেট প্রতিনিধিকে বলেন,আসামি জুয়েলকে তথ্যপ্রযুক্তি ও সাক্ষীর প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রথমে গ্রেপ্তার করা হয়,পরবর্তীতে প্রত্যক্ষ সাক্ষীরা বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারা মোতাবেক জবানবন্দি প্রদান করেন। তারই প্রেক্ষিতে অভিযুক্ত অলিউর রহমান (১৫) কে আটক করা হয় এবং তার স্বীকারোক্তি ও দেখানো তথ্যের ভিত্তিতে “তাহমিনা পরিবহন” (মৌলভীবাজার-থ ১২-৭১৮১) সিএনজিটি ছত্রাবাট গ্রামের আবির মিয়ার গাড়ির গ্যারেজ থেকে উদ্ধার করে জব্দ করা হয়। ছবিতে থাকা সিএনজিটি দিয়েই হত্যার পর কিশোর রহিমের মৃতদেহটি বাজার (ঘটনাস্থল) থেকে সাইল রকম ধানী জমিতে রাতের আঁধারে ফেলে আসে। সিএনজিটি উদ্ধারের একই দিনে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে সাদিক মিয়া (২৯) কে গ্রেপ্তার করা হয়। এরই মধ্যে প্রত্যক্ষদর্শী ও অভিযুক্তের তথ্যের ভিত্তিতে অন্যান্যদের গ্রেপ্তার করা হয়।
এস আই নুরুল ইসলাম বলেন,”আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনায় ও এএস আই মনিরসহ পুলিশের একটি দলের সহযোগিতায় আমরা এই ক্লু লেস হত্যা কাণ্ডের মামলার সকল অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করতে পেরেছি।”
প্রসঙ্গত, মামলার বাদী নিহতের বড় ভাই সবুজ মিয়া পিতা রবিয়া মিয়া (রইব্বা মিয়া) মামলা নং-৩৭, তারিখ-৩০-১১-২০২১ ইং, ধারা ৩০২,২০১ ও ৩৪ পেনাল কোড।
এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শামীম অর রশিদ তালুকদারের সাথে কথা হলে তিনি আমার সিলেটকে জানান, “কিশোর রহিম মিয়া (১৫)’র হত্যা মামলার সকল আসামিদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এখন পোস্টমর্টেম রিপোর্ট আসলেই আমরা মামলার চার্জশিট দিয়ে দিব, চার্জশিট প্রদান কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। এছাড়া অন্যান্য মামলার তদন্ত কার্যক্রম বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় চলমান।”
উল্লেখ্য, ১ নং মির্জাপুর ইউনিয়নের পৃথক স্থানে গত ২০২১ সালের জুন মাসে একটি অজ্ঞাত নারী দেহের খণ্ডিতদেহ উদ্ধারসহ দু’মাসের (নভেম্বর-ডিসেম্বর ২০২১) ব্যবধানে একই ইউনিয়ন থেকে এক কিশোরী (মাদ্রাসা ছাত্রী বয়স-১১) ও এক কিশোর রহিম মিয়া (১৫)’র নিখোঁজের পর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় গ্রাম এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে আছে। এলাকাবাসীর দাবী উক্ত ঘটনাগুলোর সাথে জড়িতরা যেন আইনকে ফাঁকি না দিতে পারে,তবেই নিহতদের আত্মা শান্তি পাবে এবং পরিবারের লোকজন ও কিছুটা শান্তনা পাবে।
প্রয়োজনে নিম্নে পূর্বের সংবাদের লিংকগুলো দেখুন