প্রস্তাবিত বাজেটে যেসব পণ্যের দাম বাড়বে বা কমবে

    0
    264

    আমার সিলেট টুয়েন্টি ফোর ডটকম,০১জুন,ডেস্ক নিউজঃ   প্রস্তাবিত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে বেশকিছু পণ্যের ওপর স্থানীয় পর্যায়ে ও আমদানিতে শুল্ক, সম্পূরক শুল্ক ও রেগুলেটরি ডিউটি বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এর ফলে ভোক্তা পর্যায়ে কিছু পণ্যের দাম বাড়বে। বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মহিত এ সংক্রান্ত বেশকিছু ঘোষণা দেন এবং বেশকিছু পণ্যে শুল্ক, মূল্য সংযোজন কর (মূসক) ও সম্পূরক শুল্ক কমানোর প্রস্তাব করেছেন।

    আমদানি পর্যায়ে আমদানি ও সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তাবের ফলে যেসব পণ্য বা সেবার দাম বাড়তে পারে : অটোরিকশা, ইলেকট্রিক ব্যাটারিচালিত মোটর গাড়ি, সিসি ভেদে মোটর গাড়ি, চার দরজা বিশিষ্ট ডবল কেবিন পিকআপ, দুই ও চার স্ট্রোক বিশিষ্ট অটোরিকশা/থ্রি হুইলার ইঞ্জিন, সিলিং ফ্যান ও এর যন্ত্রাংশ, আমদানিকৃত রঙিন টেলিভিশন, সিম কার্ড, আমদানিকৃত সোলার প্যানেল, গুড়া দুধ, মাখন, শুকনা আঙ্গুর, যেকোনো ধরনের তাজা ফল, গোল মরিচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, এলাচ, জিরা, চকলেট, শিশুখাদ্য, পটেটো চিপস, সস, আইসক্রিম, লবণ, জ্বালানি তেল, পেইন্টস, বার্নিশ, প্রসাধনী, শেভিংয়ে ব্যবহারের সামগ্রী, শরীরের দুর্গন্ধ দূরীকরণে ব্যবহৃত সামগ্রী, টয়লেট সামগ্রী, রুম সুগন্ধি, সাবান, ডিটারজেন্ট, মশার কয়েল, এরোসল ও মশা মারার সামগ্রী, প্লাস্টিক পণ্য, প্লাস্টিকের দরজা, জানালা, ফ্রেম, মোটর গাড়ির টায়ার, বিভিন্ন ধরনের ব্যাগ, ওভেন, ফ্রেবিক্স, কার্পেট, বিদেশি জুতা, ইমিটেশন জুয়েলারি, স্টেইলনেস স্টিলের সিঙ্ক, ওয়াস বেসিনের যন্ত্রাংশ, ওয়াটার ট্যাপ, বাথরুমের ফিটিংস ইত্যাদি।
    স্থানীয় বা সরবরাহ পর্যায়ে সম্পূরক শুল্ক আরোপের ফলে যেসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে : সব ধরনের বার্গার, স্যান্ডউইচ, চিকেন ফ্রাই, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, হট ডগ, পিৎজা, ফ্রুট ড্রিংক, পাস্তা, লাজারানো, মিনারেল ওয়াটার (৩ লিটার পর্যন্ত), কোমল পানীয়, এনার্জি ড্রিংক, সিগারেট, বিড়ি, জর্দা ও গুল, পেইন্টস, পাউডার, শ্যাম্পু, সুগন্ধযুক্ত বাথ সল্ট ও অন্যান্য সামগ্রী, সিরামিক দেয়াল টাইলস ও বাথটাব।
    অপরদিকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বেশকিছু পণ্যে শুল্ক, মূল্য সংযোজন কর (মূসক) ও সম্পূরক শুল্ক কমানোর প্রস্তাব করেছেন।
    বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপনকালে অর্থমন্ত্রী বেশকিছু পণ্যের ক্ষেত্রে এসব প্রস্তাবনা দেন। এসব প্রস্তাব অনুমোদন পেলে যেসব পণ্যের দাম কমবে তা হলো :
    কৃষি যন্ত্রপাতি: কৃষিকাজে আধুনিক পদ্ধতি অর্থাৎ যান্ত্রিক পদ্ধতির ব্যবহার পূর্বের তুলনায় বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব যন্ত্রপাতি বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। কম খরচে স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করা যায় সে লক্ষ্যে বিদ্যমান ১ শতাংশ আমদানি শুল্কের আওতায় আরো কিছু কৃষি উপকরণ যোগ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে কৃষি যন্ত্রপাতির মূল্য কমতে পারে।
    দেশীয় মোবাইল, ল্যাপটপ, আইপ্যাড: আইসিটি খাত রূপকল্প-২০২১ ও ২০৪১ বাস্তবায়নে মোবাইল, ল্যাপটপ, আইপ্যাডের স্থানীয় সংযোজন ও উৎপাদনকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে এ খাতের প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ ও অন্যান্য উপকরণ আমদানিতে শুল্ক রেয়াতি সুবিধা দেওয়া হবে।
    দেশীয় ব্যাটারি: দেশে উৎপাদিত ব্যাটারি দেশীয় চাহিদা পূরণের পাশাপাশি রপ্তানিও হচ্ছে। ইতিমধ্যে তৈরি পণ্যের আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক এবং কাঁচামালে নিম্ন শুল্কহার রয়েছে। আগামী বাজেটে এই সেক্টরের কাঁচামাল জিংক ক্যালট, আর্সেনিক, এন্টিমনির শুল্কহার হ্রাসের প্রস্তাব করা হয়েছে।
    দেশীয় মোটরসাইকেল ও হাইব্রিড গাড়ি: মোটরসাইকেলের স্থানীয় উৎপাদন সম্প্রসারণের লক্ষ্যে এ খাতের জন্য শর্তসাপেক্ষে রেয়াতি সুবিধা প্রদান করে বিগত অর্থবছরে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছিল। মোটরসাইকেল শিল্পে অগ্রসরমান দেশসমূহে অনুসৃত পদ্ধতি পর্যালোচনা করে ওই প্রজ্ঞাপনটিকে আরো যুগোপযোগী ও বিনিয়োগবান্ধব করে নতুনভাবে জারির প্রস্তাব করা হয়েছে। এর ফলে অতি দ্রুত মোটরসাইকেলের স্থানীয় উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করি। একই সঙ্গে হাইব্রিড যানবাহন বৃদ্ধি করতে শুল্কহার পুনঃনির্ধারণ করা হচ্ছে।
    সিরামিক: বর্তমানে দেশে সিরামিক শিল্পের ব্যাপক প্রসার লাভ করেছে। বাজেটে এই শিল্পের প্রতিরক্ষণ সুবিধা অধিকতর সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ট্যাল্ক, মাইকা, অ্যালুমিনা লাইনার ইত্যাদি কাঁচামালের শুল্ক আরো হ্রাস করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
    চামড়াজাত শিল্প যন্ত্রপাতি: চামড়া দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি শিল্প এবং এক্ষেত্রে কাঁচামালের সিংহভাগ দেশেই উৎপন্ন হয়। এই খাতে ব্যবহৃত সব রাসায়নিক পণ্যকে অনেক আগে থেকেই শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে এই শিল্পের প্রতিষ্ঠানসমূহকে বিদেশি ক্রেতাদের বিভিন্ন শর্ত অনুযায়ী নিরাপদ কারখানা স্থাপন করতে হচ্ছে। সে কারণে এই শিল্পের মূলধনী যন্ত্রপাতির রেয়াতি সুবিধা প্রদানের প্রস্তাব করা হয়েছে।
    ক্যান্সার প্রতিরোধক ওষুধসহ অন্যান্য ওষুধ: বর্তমানে বিশ্বের অনেক দেশে বাংলাদেশের ঔষধ রপ্তানি হচ্ছে। প্রচুর সম্ভাবনাময় এই খাতকে আরো বিকাশিত করার জন্য এই শিল্পে ব্যবহৃত বেশ কিছু কাঁচামালে শুল্ক রেয়াত সুবিধা প্রদানের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে ক্যান্সার প্রতিরোধক ঔষধের কাঁচামালও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
    কৃষি, মৎস্য, পোল্ট্রি ও ডেইরি খাতে পণ্য: কৃষিখাতের আরো উন্নতিতে বিভিন্ন ধরনের চারাগাছের পরিচর্যায় ব্যবহৃত মালচ (Mulch) এবং গ্রিন হাউস প্রযুক্তিতে ব্যবহৃত শেডিং নেটের ওপর শুল্কহার হ্রাস করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ফলে কৃষিপণ্যের বেশকিছু পণ্যের দাম কমতে পারে। একই সঙ্গে কৃষির অন্যতম উপখাত মৎস্য, পোল্ট্রি ও ডেইরি শিল্পের  খাদ্যসামগ্রী ও নানাবিধ উপকরণ আমদানিতে প্রয়োজনীয় আরো কতিপয় পণ্যে শুল্ক সুবিধা তথা প্রণোদনা প্রদানের প্রস্তাব করা হয়েছে।