প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ঘুমন্ত স্ত্রীকে গলাকেটে হত্যার ঘটনায় ঘাতক স্বামীর স্বীকারোক্তি

0
198

নূরুজ্জামান ফারুকী,বিশেষ প্রতিনিধিঃ হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জে পূর্ব বিরোধের জেরধরে প্রতিপক্ষ মামা শেখ বাদশা মিয়া ও লন্ডন প্রবাসী সালেহ আহমদ গংদের ফাঁসানোর জন্যই নিজের ঘুমন্ত স্ত্রী তহুরা বিবি (৫৫) কে গলা কেটে নির্মমভাবে হত্যা করেছে ঘাতক স্বামী ঝারু মিয়া।

ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়ে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দিয়েছেন ঘাতক স্বামী ঝারু মিয়া।

শুক্রবার রাতে নিহতের ১ম সংসারের ছেলে আল আমীন বাদী হয়ে সৎ পিতা ঝারু মিয়াকে আসামী করে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

শনিবার (১৯ নভেম্বর) সকালে ধৃত ঝারু মিয়াকে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করলে তিনি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায়, তহুরা বিবি নবীগঞ্জ পৌর এলাকায় চরগাঁও গ্রামের ঝারু মিয়ার স্ত্রী। তহুরা বিবির স্বামী ঝারু মিয়া তার মামা শেখ বাদশা মিয়া’র সাথে প্রায় দুই মাস পুর্বে জমিজমা নিয়ে পারিবারিক বিরোধ দেখা দেয়।

তৎকালীন সময় নবীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ছাবির আহমেদ চৌধুরী বিষয়টি শালিস আপোষের মাধ্যমে সমাধান করে দেন।

উক্ত সমাধানে ঝারু মিয়া অসন্তুষ্ট ছিলেন বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। সেই থেকেই তার মামা শেখ বাদশা মিয়া ও লন্ডন প্রবাসী সালেহ আহমদ গংদের ফাঁসানোর জন্য নানা পরিকল্পনা করে আসছে ঝারু মিয়া।

বুধবার (১৬ নভেম্বর) দিবাগত রাত সাড়ে ১২ টা থেকে ভোর ৫ টার মধ্যে যে কোনো এক সময় ঝারু মিয়া তার ঘুমন্ত স্ত্রী তহুরা বিবিকে দা দিয়ে গলা কেটে হত্যা করে।
ঘাতক ঝারু মিয়া চরগাও গ্রামের মরম আলীর ছেলে।
বৃহস্পতিবার (১৮ নভেম্বর) ফজরের নামাজ শেষে ঝারু মিয়া নবীগঞ্জ থানায় উপস্থিত হয়ে ডিউটি অফিসারকে জানান, ফজরের নামাজ শেষে বাড়ি ফিরে তার স্ত্রীকে গলা কাটা অবস্থায় পান।
খবর পেয়ে নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ ডালিম আহমেদসহ একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য হবিগঞ্জ মর্গে প্রেরণ করেন। এ সময় সন্দেহজনকভাবে স্বামী ঝারু মিয়া ও তার দুই পুত্রকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়।
পুলিশ সুপার দীর্ঘ সময় থানায় অবস্থান করে স্বামী ঝারু মিয়াকে নিবিড়ভাবে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

এক পর্যায়ে রাতেই স্বামী ঝারু মিয়া প্রতিপক্ষকে ফাসাঁনোর জন্য নিজের স্ত্রীকে গলা কেটে হত্যার ঘটনা স্বীকার করেন। এ ব্যাপারে রাতেই নিহত তহুরা বিবির ১ম সংসারের ছেলে আল আমীন বাদী হয়ে স্বামী ঝারু মিয়াকে আসামী করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ওসি অপারেশন আব্দুল কাইয়ুম ঝারু মিয়াকে আদালতে নিয়ে গেলে ঝারু মিয়া বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তি মুলক জবানবন্দি প্রদান করেন।
প্রায় ৮ ঘন্টার মধ্যেই চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটিত করলো পুলিশ।
ফলে রক্ষা পেলেন নিরাপরাধ শেখ বাদশা মিয়া ও লন্ডন প্রবাসী সালেহ আহমদগংরা।

ঝারু মিয়া নিহত তহুরা বিবি’র ২য় স্বামী। তার আগের সংসারে আল আমীন নামে অপর একটি ছেলে রয়েছে। ১ম স্বামী মৃত্যুর পর ২য় বিয়ে করেন ঝারু মিয়া।
এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ ডালিম আহমেদ বলেন, ঘটনার ২৪ ঘন্টার মধ্যেই পুলিশ সুপার এসএম মুরাদ আলির নেতৃত্বে লোমহর্ষক এ হত্যার রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হয়েছে।