পূর্ব ঘোষণা ব্যতিত সভায় ১০ লক্ষ টাকা সংগ্রহ নিয়ে আশ্চর্য তাহিরপুরবাসী

0
624
পূর্ব ঘোষণা ব্যতিত সভায় ১০ লক্ষ টাকা সংগ্রহ নিয়ে আশ্চর্য তাহিরপুরবাসী

ফরহাদ ওয়েসি,তাহিরপুর থেকে : সুনামগঞ্জ তাহিরপুর উপজেলায় কচুয়া মিরাণীয়া খানকায়ে সোবাহানিয়া দরবার শরীফের বর্তমান গদ্দীনিশীন পীর “শাহজাদা মোহাইমিনুল হক ইবনে জিয়াউল হক ক্বাদেরী” সাহেবের উদ্যোগে গতকাল ১২/০৯/২১ ইং রোজ রবিবার উত্তর বড়দল ও দক্ষিণ বড়দল ইউনিয়নের মাঝামাঝি আমতৈল বন্দে ভবিষ্যৎ হাফিজিয়া মাদ্রাসা’র বালু ভরাটকৃত স্থানে এক বিশাল মিটিংয়ের আয়োজন করা হয়।

এতে বিভিন্ন ডিস্ট্রিক্টের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সহ প্রায় ৩ শতাধিক মানুষ উপস্থিত ছিলেন। মিটিং শেষে নতুন হাফিজিয়া মাদ্রাসা করার জন্য উপস্থিত সময়ে ৮ লাখ ৭৭ হাজার টাকা কালেকশন হয়। মিটিং পরবর্তীতে আরো অনেকের অংশগ্রহণে প্রায় ১০ লক্ষ টাকার কালেশন হয়েছে বলে আমাদেরকে জানানো হয়েছে। পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই মিটিং (সভা) করে এত বিশাল পরিমাণ কালেকশনে আশ্চর্য হয়েছে তাহিরপুর উপজেলাবাসী এবং প্রত্যেকের মুখে হাসি ও খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে।

মিটিংয়ের পর থেকে হাটে-ঘাটে বাজারে চায়ের স্টলে কচুয়া মিরাণীয়া খানকায়ে সোবাহানিয়া দরবার শরীফের বর্তমান গদ্দীনিশীন পীর “শাহজাদা মোহাইমিনুল হক ইবনে জিয়াউল হক ক্বাদেরী ” সাহেবের এই অবদানের কথা সবার মুখে মুখে।

গতকাল ১২/০৯/২১ ইং রোজ রবিবার বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে মিটিং আরম্ভ হয়। এতে উপস্থিত হয় সদূর ঢাকার নারায়ণগঞ্জ থেকে বিশিষ্ট ব্যসায়ী জনাম আলহাজ্ব বশির আহমদ প্রধান সাহেব, সুনামগঞ্জ জেলা থেকে আগত বিশিষ্ট ব্যবসয়ী “চেম্বার অফ কমার্স সুনামগঞ্জ” এর পরিচালক মুহাম্মদ নূরে আলম সাহেব, সুনামগঞ্জ পূবালী ব্যাংকের ম্যানেজার সহ আরো অনেকেই। যারা প্রত্যেকেই তাহিরপুর উপজেলার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মুহাম্মদ নাসির মিয়া সাহেবের ব্যবসায়িক পার্টনার এবং কাছের বন্ধুবর্গ।

ক্বারী মুহাম্মদ আল আমিন ওয়েসির পরিচালনায় মিটিংয়ের শুরুতে পবিত্র কুরআন তিলায়াত করেন হাফেজ মুযাক্কির আলম সাহেব, হামদ পরিবেশন করেন ক্বারী মোশাররফ হুসাইন, নাতে রাসূলে পাঠ করেন মুহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিক ফকির সাহেব।

তারপর মিরাণীয়া গার্মেন্টস একতা বাজারের প্রোপাইটার মাওলানা হুসাইন আহমেদ সাহেবের বক্তব্য দ্বারা মিটিংয়ের পারম্ভিকক কার্যক্রম শুরু হয়। এ সময় আরো বক্তব্য রাখেন ওয়ার্ড মেম্বার জনাব আব্দুর রউফ মেম্বার সাহেব, জনাব আহাদ (সাবেক মেম্বার) সাহেব, হাজী আক্তার মিয়া সাহেব সহ আরো বেশ কয়েকজন। তারা প্রত্যেকেই তাহিরপুর উপজেলায় শিক্ষার উন্নয়নে কচুয়া দরবার শরীফের বর্তমান শাহজাদা মোহাইমিনুল হক এবং ওনার পিতা মরহুম মগফুর মাওলানা জিয়াউল হক ক্বাদেরী (রাহঃ) এর অবদানের কথা তোলে ধরেন।

এদিকে ঢাকার নারায়ণগঞ্জ থেকে আগত বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আলহাজ্ব বশির আহমদ সাহেব উপস্থিত সময়ে হাফিজিয়া মাদ্রাসা’র প্রতি মানুষের ভালোবাসা দেখে তার বক্তব্যে বলেন “আমি এই মাদ্রাসার জন্য নগদ ১০ হাজার টাকা দিয়ে যাচ্ছি। আর নারায়ণগঞ্জ গিয়ে মুহাম্মদ নাসির মিয়ার (ব্যবসায়িক পার্টনার) সাথে কথা বলবো কিভাবে এই মাদ্রাসার ভবনের কাজগুলো করা যায় এবং দেওয়া যায়। এই ব্যপারে তিনি সবাইকে আশ্বস্ত করেন।

অন্যদিকে সুনামগঞ্জ থেকে আগত ” চেম্বার অফ কমার্স সুনামগঞ্জ ” এর পরিচালক বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মুহাম্মদ নূরে আলম সাহেব বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন “আমি অত্যন্ত খুশি হয়েছি যে, এই অজপাড়া গাঁয়ে একটি দ্বীনি প্রতিষ্ঠান হাফিজিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হবে। আমি আমার পক্ষ থেকে ১ লক্ষ টাকা দিব এবং মাদ্রাসা’র ছাত্রদের জন্য প্রতি বৎসর পোশাক পরিচ্ছদ, হুজুরদের বেতনেও সহযোগিতা করব ইনশাআল্লাহ। ” ওনার পরেই সুনামগঞ্জ জেলার পূবালী ব্যাংকের ম্যানেজার মুহাম্মদ কবিরুল ইসলাম সাহেবও বক্তব্যে সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন কচুয়া মিরাণীয়া খানকায়ে সোবাহানিয়া দরবার শরীফের বর্তমান গদ্দীনিশীন পীর শাহজাদা মোহাইমিনুল হক ইবনে জিয়াউল হক ক্বাদেরী সাহেব। তিনি বক্তব্যে হাফিজিয়া মাদ্রাসা গুরুত্ব এবং ফজিলত তোলে ধরার পাশাপাশি বলেন “আমি আমার জন্য বলছিনা, আমার পকেটে টাকা দিতে বলছিনা। আমি আজ থেকে বলে গেলাম যে, আপনারা যারা আমাকে হাদিয়া দিতে চান, তারা এই মাদ্রাসায় দিবেন। এই মাদ্রাসায় দিলে মনে করবেন আমি পেয়ে গেছি। আগে যে বা যারা বিভিন্ন নিয়তে আমার দরবারে টাকা পয়সা পাঠাতেন তা সব এখন এই মাদ্রাসাতে দিবেন।

পাশাপাশি তিনি আরেকটু কথা সবাইকে জোর দিয়ে বলেন যে, এই মাদ্রাসা আমি করছি বিধায় যে, শুধু এখানে দিবেন তা নয় আমার বাবার প্রতিষ্ঠিত নদীর ওপারে দাখিল মাদ্রাসা’টিকে কেউ ভুলে যাবেন না। মনে রাখবেন এই মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করছি আমি, আর ওই মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন আমার বাবা হুজুর। তাই ওই মাদ্রাসা খোলার পর পর আপনাদের ছেলে মেয়েদের তাদের পাঠদানে পাঠাবেন এবং সর্বদা আর্থিক সহযোগিতা করবেন। আমাদের দুটি মাদ্রাসা হবে তাহিরপুর উপজেলায় সবচেয়ে মডেল মাদ্রাসা। “

লক্ষণীয় বিষয় ছিল যে, তিনি বলেন – “যে সমস্ত পীর পেটের ধান্ধায় মুরিদের হাতের দিকে তাকিয়ে থাকে। তাদের প্র ধিক্কার জানিয়েছেন। এসব ভন্ড টাউট বাটপার পীরদের জন্য হক্কানি পীরদের দূর্ণাম হচ্ছে। আর যারা হক্বানী পীর মশায়েখ তাদেরকে মাথার তাজ হিসাবে আখ্যায়িত করেন। তিনি সারা বাংলাদেশের হক্কানি দরবার শরীফের পীর মশায়েখদের হাফিজিয়া মাদ্রাসা গঠনের আহ্বান জানান। “

তারপর মাদ্রাসা’টি প্রতিষ্ঠা করার জন্য সবার সহযোগিতা চায়লে হলহলিয়া গ্রামের ব্যবসায়ী মুহাম্মদ নাসির মিয়া জানান তার ব্যবসায়িক বন্ধু ও মিতা (অনুপস্থিত)ঢাকার নারায়ণগঞ্জের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মুহাম্মদ নাসির মিয়া মেম্বার সাহেব ১ লক্ষ টাকা দিয়েছেন।

এদিকে হলহলিয়ার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নাসির মিয়া’র পিতা হাজী আক্তার আলী সাহেব ১ লাখ টাকা দিবেন বলে ঘোষণা করেন। একই গ্রামের হাজী মুহাম্মদ সিরাজ মিয়া ২০ হাজার টাকা সাহ উপস্থিত এবং অনুপস্থিত ১০ হাজার, ১৫ হাজার, ৫ হাজার, ২ হাজার, ১১১১ টাকা এইভাবে করে উপস্থিত মিটিংয়ে ৮ লক্ষ ৭৭ হাজার টাকা কালেকশন হয়। মিটিং পরবর্তীতে আরো অনেকেই দেওয়ার কথা ব্যক্ত করেছেন। কচুয়ার পীর সাহেব হুজুর জানান প্রায় ১০ লাখ টাকার মত কালেকশন হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ।

জানা যায় শাহজাদা মুহাম্মদ মোহাইমিনুল হক ইবনে জিয়াউল হক ক্বাদেরী সাহেব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্সে অধ্যয়নকালে ২০১৫ সালে ১৯ জানুয়ারি ওনার পিতা পীরে কমেল “আলহাজ্ব হযরত মাওলানা জিয়াউল হক ক্বাদেরী” সাহেব নিজ বাড়িতে আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে খোদার সান্নিধ্যে চলে যান।

বাবার উত্তরসূরী হয়ে ওনার বাবার ভক্ত মুরিদান যেখানেই রয়েছে সেখানেই মসজিদ মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠান করার উদ্যোগ নিয়েছেন। এই পর্যন্ত আমাদের সুনামগঞ্জে ৩ টি হাফিজিয়া মাদ্রাসা সহ সারা বাংলাদেশে এই ৭ বৎসরে ১০ টি সম্পূর্ণ সহ ১৩ টি মাদ্রাসা এবং মাদ্রাসার পাশাপাশি মসজিদ প্রতিষ্ঠার কাজ চলমান রয়েছে।

পূরব প্রচারিত নিউজের মাদ্রাসা’র জায়গায় ৬৮ শতাংশ প্রায় ৭০ শতাংশের জমির সমপরিমাণ টাকা ধরে হাজী সবুজ আলম সাবেক চেয়ারম্যান দক্ষিণ বড়দল ১৫ শতকের জন্য ৮০ হাজার, মুহাম্মদ খোরশিদ মিয়া ৫ শতকের ৬৬ হাজার, মরহুম খোরশেদ ফকির সাহেবের ছেলে শাহাবুদ্দিন সরদার ১৫ শতকের জন্য ৮০ হাজার টাকা ইতোমধ্যে প্রদান করেছেন। আরো অনেকই বাকি রয়েছেন তবে শীঘ্রই এই মাদ্রাসার কার্যক্রম ব্যপকভাবে চালু হবে বলে জানানো হয়েছে এবং ভবিষ্যতে শুধু হাফিজি নয় বরং পাশাপাশি দরাে নেজামিয়া (যা বর্তমানে কওমি আদলে প্রচলিত) কিতাব খানা প্রতিষ্ঠার চিন্তা ভাবনা আছে। যা হবে তাহিরপুর উপজেলায় এক মডেল হাফিজি মাদ্রাসা এবং কিতাব খান।