নড়াইলে পালিত হল “ইতনা গণহত্যা দিবসের সুবর্ণ জয়ন্তী”

0
723
নড়াইলে পালিত হল “ইতনা গণহত্যা দিবসের সুবর্ণ জয়ন্তী”
নড়াইলে পালিত হল “ইতনা গণহত্যা দিবসের সুবর্ণ জয়ন্তী”

এম ওসমান, নড়াইল প্রতিনিধিঃ রোববার (২৩ মে) যথাযোগ্য মর্যাদায় “ইতনা গণহত্যা দিবসের সুবর্ণ জয়ন্তী” পালিত হয়েছে। রোববার ইতনা হাইস্কুল ও কলেজ আয়োজিত দিবসের বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্যে ছিল শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পণ ও আলোচনা সভা। ওই দিন বেলা এগারোটায় আয়োজকবৃন্দ, বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ, এলাকাবাসী, শহীদের স্বজনেরা শহীদ স্মৃতি স্তম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন ও বেলা সাড়ে এগারোটায় ইতনা স্কুল ও কলেজ মিলনায়তনে প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অনিন্দ্য সরকারের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

গণহত্যা দিবসের সুবর্ণ জয়ন্তীতে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মীনা রাজীব আহমেদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী আকবর হোসেন, আতাউর রহমান ফিরোজ, মলয় কান্তি নন্দী, নারায়ন চন্দ্র বিশ্বাস, শমসেরুল ইসলাম শামু, অদ্যাপক আমিরুল ইসলাম, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস ও বি এম রইস উদ্দিন। বক্তারা ১৯৭১’র সালের সেই ভয়াল দিনটির স্মৃতিচারণ করেন।
উল্লেখ্য, লোহাগড়া উপজেলার মধুমতি নদী তীরবর্তী ইতনা গ্রামের রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। সেখান থেকেই শত্রুপক্ষের উপর আক্রমনের নানা কৌশল ও পরিকল্পনা গ্রহন করা হতো। এ গ্রামের উল্টো দিকে মধুমতির ওপারে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার চরভাটপাড়া গ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের বৃহৎ ক্যাম্প গড়ে তোলা হয়। পাকবাহিনী বিষয়টি আঁচ করতে পেরে ২২মে ১৯৭১ সালে দুপুরে চরভাটপাড়া গ্রামে ঢুকে নিরীহ লোকজনের ওপর হামলা-নির্যাতন শুরু করে।

এ সময় মুক্তিবাহিনী প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং হানাদার বাহিনীর সঙ্গে শুরু হয় তুমুল যুদ্ধ। প্রায় দু’ঘন্টা ব্যাপী যুদ্ধে চার পাকসেনা ও ১৪ মুক্তিযোদ্ধা আহত হন। পাকসেনারা পিছু হটার সময় চরভাটপাড়া গ্রামের কৃষক অনিল কাপালীকে গুলি করতে গেলে গুলি শেষ হয়ে যায়। এসময় কৃষক অনিল কাপালী এক পাক সেনার কাছ থেকে অস্ত্র কেড়ে নিয়ে মধুমতি নদীতে ফেলে দিয়ে দ্রুত সাঁতার কেটে ইতনা গ্রামে আশ্রয় নেন। ক্ষিপ্ত পাক সেনারা ১৯৭১ সালের এ দিনে (২৩ মে) ইতনা হাইস্কুল মাঠে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ এবং এখান ভোরে ইতনা গ্রামে এসে ৫টি ভাগে বিভক্ত হয়ে একের পর এক বাড়িঘর জ্বালিয়ে পুড়িয়ে নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করতে থাকে।

এদিন পাখির মতো গুলি করে একে একে ৩৯ জন স্বাধীনতাকামী মানুষকে হত্যা করে। রক্তে লাল হয়ে যায় ইতনা গ্রাম। ভয়ে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যায় নিরীহ মানুষ। এছাড়াও যুদ্ধকালীন সময়ে আরো ১১ জন নিহত হন এই গ্রামে। দেশ স্বাধীন হলেও ইতনা গ্রামের এই নৃশংস হত্যাযজ্ঞে নিহতদের কোন রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নেই, নেই সরকারী উদ্যোগে দৃষ্টিনন্দন একটি স্মৃতিস্তম্ভ, এলাকাবাসীর অনেকের দীর্ঘদিনের দাবী।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এই ইতনা গ্রামবাসী বিভিন্নভাবে দিবসটি পালন করে আসছে। মহামারী করোনার কারণে এ বছর নিয়ে দু’বছর দিবসটি সীমিত আকারে পালিত হয়েছে।