“থার্টি ফার্স্ট নাইট” একটি বিকৃত বিজাতীয় সংস্কৃতি

    0
    599

    লুৎফুর রহমান তোফায়েলমাত্র কয়েক ঘন্টা পর ইংরেজি ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে বিদায় নিচ্ছে ২০১৩ সাল। প্রতি বছর ৩১শে ডিসেম্বও রাতে এরকমই একটি পট পরিবর্তন হয়। যা সময়ের পরিক্রমায় খুবই স্বাভাবিক। এই ৩১শে ডিসেম্বর রাতে থার্টি ফাস্ট নাইট নামে আয়োজন করা হয় কিছু অনুষ্ঠানের। যা প্রায় সারা বিশ্বেই হয়ে থাকে। বর্তমানে বাংলাদেশেও ব্যাপকভাবে থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপনের সংস্কৃতি শুরু হয়েছে। কিন্তু নিকট অতীতের মাত্র কিছুদিন আগেও এ দেশের মানুষ থার্টি ফার্স্ট শব্দের সাথেই পরিচিত ছিল না। গত শতকের শেষের দিকে পশ্চিমাদের অনুকরণে বাংলাদেশে থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপনের প্রচলন শুরু হয়। বিশেষ করে ২০০০ সালের ৩১ ডিসেম্বর মধ্য রাতে বিশ্ব একবিংশ শতাব্দীতে প্রবেশের সময় মিলেনিয়াম বা সহ¯্রাব্দ উদযাপনের নামে থার্টি ফার্স্টএর ব্যাপক প্রসার ঘটে।

    যেভাবে থার্টি ফার্স্ট পালন করা হয়, বিকৃত রুচির বহিঃপ্রকাশ ছাড়া কোনো মতেই এটাকে উৎসব বলা যাবে না। পশ্চিমা বিশ্বে ঘর থেকে বেরিয়ে লং ড্রাইভে চলে যাওয়া, রাস্তায় যুবক-যুবতীদের ঢলাঢলি, ছাড়াও সাগর তীরে বা নাইট কাবগুলোতে অশ্লীলতার মহোৎসব। আমাদেরদেশেও এর অনুকরণে বিভিন্ন স্থানে অশ্লীল নৃত্য বা কনসার্টের আয়োজন, আতশবাজি ইত্যাদি যা হয় সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন কোনো মানুষ তা সমর্থন করতে পারে কি?

    বর্তমান বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়া এই আনুষ্ঠানিকতা কোনো ভাবেই সুস্থ সংস্কৃতি বা বিনোদনের অংশ নয়। বরং এটি তরুণ ও যুবসমাজের দেশপ্রেম এবং ধর্মীয় চেতনা ধ্বংসের একটি ভাইরাস। কারণ এই জনপদের মানুষের রয়েছে হাজার হাজার বছরের সমৃদ্ধ ইতিহাস-ঐতিহ্য। এখানকার মানুষ সবসময়ই নিজস্ব স্বকীয়তা সংস্কৃতির ব্যাপারে খুবই সোচ্চার ছিল সুদীর্ঘকাল থেকে। সময় এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে একটি সমৃদ্ধ সংস্কৃতির অধিকারী হয়েছি আমরা। যার মধ্যে নেই কোন অশ্লীলতা-বেহায়াপনার স্থান। আমাদের এই সমৃদ্ধ-ঐহিত্যবাহী সুস্থ্য সংস্কৃতিকে ধ্বংস করতে নামে বেনামে প্রতিনিয়ত দেশে আমদানি হচ্ছে বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানের। তেমনি থার্টি ফার্স্ট নাইট ভিন দেশ থেকে আমদানি করা একটি বিকৃত বিজাতীয় সংস্কৃতি।

    আমরা আন্তর্জাতিক দিন গণনার ক্যালেন্ডার হিসেবে ইংরেজি সালকে ব্যবহার করতে পারি। কিন্তু নিজস্ব চেতনা, আদর্শ, সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে গিয়ে অশ্লীলতা-উন্মাদনার আয়োজনে ইংরেজি নববর্ষকে বরণ করতে পারি না। আমাদের আছে বাংলা বর্ষ এবং ইসলামি বর্ষপঞ্জি বা হিজরি সন। দুটি সনই বিজ্ঞানসম্মত এবং সমৃদ্ধ। এর পরও ভিন্ন সংস্কৃতির একটি সালকে বরণ করার জন্য বাড়াবাড়ি করা হীনমন্যতা ছাড়া কিছুই নয়।

    আজও গ্রামের দরিদ্র জনগোষ্ঠী, খেটে খাওয়া মেহনতি মানুষগুলো বাংলা সনকে নিজেদের ক্যালেন্ডার হিসেবে ধরে রেখেছেন। এক শ্রেণীর পরজীবী গোষ্ঠী যেভাবে থার্টি ফার্স্ট নিয়ে মেতে উঠেছে, আমাদের আশঙ্কা হয়ত এক শতক পরে আমাদের দৈনন্দিন জীবন থেকে বাংলা সন হারিয়ে যাবে।

    তরুণ-তরুণীদের চরিত্র নষ্ট করে ফেলা, যুবসমাজকে ধ্বংস করে দেয়ার জন্য দেশীয় ও আন্তর্জাতিক নীলনকশার একটি অংশ থার্টি ফার্স্ট নাইট। বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হলে এ দেশের ও যুবকদের চারিত্রিক দৃঢ়তা দেখাতে হবে, নৈতিকতার বলে বলিয়ান হতে হবে। চরিত্র বিধ্বংসী যেকোনো কথিত উৎসব বর্জনে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।