তাহলে কি ফেঁসেই যাচ্ছেন যুব লীগ নেতা ওমর ফারুক

    0
    248

    চলমান ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানের আঁচ এতদিন সরাসরি গায়ে না লাগলেও ইতোমধ্যে তাপ অনুভব করে ফেলেছেন যুবলীগ চেয়ারম্যান প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা ওমর ফারুক চৌধুরী।

    তবে এবার বুঝি আগুনের আঁচটা তার শরীরেও লাগতে যাচ্ছে।  যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর সব ব্যাংক হিসাব তলব করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

    বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট থেকে ওমর ফারুক চৌধুরীর সব ব্যাংক হিসাব তলব করে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোয় নোটিশ পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ওমর ফারুক চৌধুরীর নামে থাকা সব ধরনের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন, বিবরণীর তথ্য পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে পাঠাতে হবে।

    ক্যাসিনো কেলেঙ্কারির ঘটনায় এর আগেও কয়েকজন যুবলীগ নেতা ও ব্যবসায়ীর ব্যাংক হিসাব তলব করে বাংলাদেশ ব্যাংক। অনেকের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধও (ফ্রিজ) করা হয়। ফ্রিজ করা হিসাব থেকে টাকা উত্তোলন ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে।

    উল্লেখ্য, ২০০৩ সালে যুবলীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য হন ওমর ফারুক। এর আগের কমিটিতে কার্যনির্বাহী সদস্য ছিলেন তিনি। ২০০৯ সালে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং  ২০১২ সালে হন চেয়ারম্যান। এরপর থেকে যুবলীগে তার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। ক্ষমতাসীন দলের যুব সংগঠনের শীর্ষ পদ পাওয়ার পর বেশ ধনাঢ্য জীবন যাপন করছেন তিনি। যদিও তার দৃশ্যমান কোনো ব্যবসা বা আয়ের উৎস নেই।

    এদিকে ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানের পর থেকেই সমালোচিত হচ্ছেন যুবলীগ চেয়ারম্যান। অনেকে বলছেন, এমনই ভাগ্য ওমর ফারুকের, ৬৪ বছর বয়সে হয়েছেন যুবলীগের চেয়ারম্যান। অথচ যুবলীগের ইতিহাসে এর আগে ৫০ বছরের বেশি বয়সী কেউ চেয়ারম্যান হননি। ১৯৭২ সালের ​নভেম্বরে শেখ ফজুলল হক মণি যখন যুবলীগ প্রতিষ্ঠা করেন, তখন তার বয়স ছিল ৩২ বছর।

    ২০১৭ সালের জাতীয় যুবনীতি অনুসারে, ‘১৮ থেকে ৩৫ বছরের বয়সের যেকোনো বাংলাদেশি নাগরিক যুব হিসেবে গণ্য হবে।’ কিন্তু যুবলীগ চেয়ারম্যানের বর্তমান বয়স ৭১ বছর। তিনি সাত বছর ধরে চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছেন। যদিও গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিন বছর পরপর কমিটি করার কথা। শুধু তিনি নন, যুবলীগের নেতাদের আরও অনেকের বয়স ৬০ পেরিয়ে গেছে।

    জানা গেছে, ১৯৪৮ সালে জন্ম নেওয়া ওমর ফারুক চৌধুরী সত্তরের দশকে চট্টগ্রাম জেলা বিড়ি শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তখন আওয়ামী লীগের প্রয়াত কেন্দ্রীয় নেতা এস এম ইউসুফ ছিলেন তার রাজনৈতিক মুরব্বি। বিড়ি শ্রমিক লীগের নেতা হয়ে মিয়ানমার থেকে টেন্ডু পাতা আমদানি শুরু করেন ওমর ফারুক। তামাকের বিকল্প এ টেন্ডু পাতা বিড়ির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হতো।

    এইচ এম এরশাদ ক্ষমতায় আসার সময় ওমর ফারুক শ্রমিক লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। জাতীয় পার্টির প্রয়াত নেতা নাজিউর রহমান (মঞ্জু) এরশাদের মন্ত্রিসভার সদস্য হলে ওমর ফারুক দল বদল করেন। জাতীয় পার্টির অঙ্গসংগঠন যুব সংহতির চট্টগ্রাম উত্তর জেলার রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। ওমর ফারুক চৌধুরী নাজিউর রহমানের ভায়রা ভাই এবং শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ভগ্নিপতি।

    এরশাদ সরকারের পতনের পর কিছুদিন নীরব ছিলেন ওমর ফারুক। ১৯৯২ সালে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হলে তিনি সদস্য হন। ১৯৯৭ সালে তিনি উত্তর জেলা কমিটির কোষাধ্যক্ষ হন। ওই কমিটির মেয়াদ ছিল ২০০৪ সাল পর্যন্ত।

    সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, এরশাদের আমলে যুব সংহতির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পর ওমর ফারুকের আয় বাড়তে থাকে। মালিক হন পোশাক কারখানার। ওমর ফারুক চৌধুরী নিজেও একটি গণমাধ্যমকে বলেন, তিনি ১৯৮৮ সালে রাউজানে পোশাক কারখানা স্থাপন করেছিলেন, যা পরে চট্টগ্রাম শহরের জুবিলি রোডে স্থানান্তর করেন।

    তবে এই ব্যবসা করতে গিয়ে সম্পদ নিলামে ওঠার পরিস্থিতি তৈরি হয় ওমর ফারুকের। ব্যাংক ঋণের দায়ে নগরের একটি বাড়ি এবং রাউজানের সুলতানপুর গ্রামের জমি ও ঘর নিলামে ওঠার চূড়ান্ত প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে। নিলামে তোলার দিনক্ষণও ধার্য করেছিলেন চট্টগ্রামের অর্থঋণ আদালত। উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ এনে নিলাম ঠেকান তিনি।

    সম্পদ নিলামে ওঠার দুই মাস আগেই যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হন ওমর ফারুক চৌধুরী। আওয়ামী লীগও ওই বছরের শুরুতে ক্ষমতায় আসে। পরিস্থিতি বদলাতে থাকে তার। ব্যাংকঋণের একটি অংশ পরিশোধ করেছেন তিনি। কিন্তু এখন আর ওমর ফারুক চৌধুরীর দৃশ্যমান কোনো ব্যবসা নেই। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি আগে পেঁয়াজ, আদা ও গুঁড়া দুধের আমদানিকারক ছিলাম। এখন বন্ধুদের সঙ্গে আমার ব্যবসা আছে।’ অবশ্য কোন বন্ধুদের সঙ্গে কী ব্যবসা করেন, সেটা পরিষ্কার করে বলেননি তিনি।