জ্যোৎস্না খুনের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ছদর গ্রেফতার

    2
    341

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,০১ মার্চ,মতিউর রহমান মুন্নাঃ হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ পৌরসভার গন্ধা গ্রামের পৌর কাউন্সিলর মিজানুর রহমানের বাড়ির সীমানা প্রাচীর থেকে হবিগঞ্জের উচাইর গ্রামের জ্যোৎস্না বেগমের (৩২) উদ্ধারকৃত ঝুলন্ত মৃতদেহ হত্যা ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে এবং প্রত্যক্ষদর্শী দাবিদার মোঃ তাজ উদ্দিনের দেয়া তথ্যমতে ও মৃত জ্যোৎস্না বেগমের সাথে ধৃতের কল লিষ্টের সুত্রধরে নবীগঞ্জের ছদর মিয়া (২৫)কে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

    গ্রেফতারকৃত ছদর মিয়া পৌর এলাকার মায়ানগর গ্রামের জামাল উদ্দিনের ছেলে। হত্যা ঘটনার প্রায় দুই মাস ১৮ দিন পর মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা ও নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ লিয়াকত আলীর নিদের্শে এসআই আশিকুল ইসলামের নেতৃত্বে একদল পুলিশ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঢাকার জুরাইল কদমতলি এলাকার ভাড়া বাসা থেকে গতকাল রবিবার ভোর ৫ টার দিকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে পুলিশ সুত্রে জানাগেছে। এরআগে গত ২২ ফের্রুয়ারী নবীগঞ্জ শহরের বানিয়াচং রোড এলাকা থেকে সিএনজি অটোরিক্সা চালক মোঃ তাজ উদ্দিনকে আটক করেছিল পুলিশ।

    তাজ উদ্দিন উপজেলার ৭নং করগাও ইউনিয়নের পুরুষোত্তমপুর গ্রামের মৃত কুবাদ উল্লার পুত্র। মোঃ তাজ উদ্দিন উল্লেখিত জ্যোৎস্না বেগমের খুনের ঘটনার প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী বলে দাবি করে পুলিশের কাছে এবং বিজ্ঞ আদালতে ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়ে স্বীকারোক্তি মূলক জবান বন্দি প্রদান করেছে বলেও সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানাগেছে।

    এদিকে প্রত্যক্ষদর্শী তাজ উদ্দিন ও ঢাকা থেকে ছদর মিয়াকে গ্রেফতারের ঘটনায় এলাকায় নতুন করে আলোচনা ঝড় বইছে। স্বস্তি ফিরে এসেছে গ্রামবাসীর মধ্যে। ঘটনার শুরু থেকেই স্থানীয় লোকজন আশংখ্যা করেছিল এলাকার কিলার কুখ্যাত চোর ছদর মিয়া ও তার অপর সহযোগী এ নির্মম হত্যা কান্ডের সাথে জড়িত রয়েছে। এবং কাউন্সিলর মিজানুর রহমান মিজানকে ফাঁসাতে এ ঘটনায় অনেক টাকা বানিজ্য হয়েছে বলে কেউ কেউ দাবী করছেন।

    উল্লেখ্য, গত বছরের ১০ ডিসেম্বর ভোরে গন্ধ্যা গ্রামের বাসিন্দা নবীগঞ্জ পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মিজানুর রহমান মিজানের বাড়ির সীমানা প্রাচীর থেকে জ্যোৎস্না বেগমের ঝুলন্ত মৃতদেহ দেখে ওই গ্রামের এক মহিলা সুর চিৎকার দেন। মহিলার চিৎকারে গ্রামের অনেক লোকজন ছুটে এসে মৃতদেহ দেখেন। পরে খবর পেয়ে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার ও সুরতহাল রিপোর্ট তৈরী করে।

    মৃতদেহ সুরতহাল করার সময় পুলিশ মৃতদেহের ব্লাউজের নীচ থেকে একটি চিরকুট উদ্ধার করে। চিরকুটের সূত্র ধরে মৃতদেহের পরিচয় সনাক্ত করে পুলিশ। নিহত জ্যোৎস্নার পিতার নাম সামছু মিয়া। বাড়ি হবিগঞ্জ সদরের উচাইল চারিনাও গ্রামে। জ্যোৎস্নার স্বামীর বাড়ি বানিয়াচং উপজেলার দক্ষিণ যাত্রাপাশা গ্রামে। জ্যোৎস্না খুনের ঘটনার ৮/১০ মাস আগে স্বামী মহিবুর রহমানের সাথে তার বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটেছিল বলে ওই সময় লোকমুখে প্রচারিত হয়েছিল।

    আটক মোঃ তাজ উদ্দিন পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে পৌর এলাকার মদনপুরের ছদর মিয়াসহ অপর এক যুবক ঘটনার রাতে অনুমান ১০ টার সময় তার সিএনজি গাড়ি নবীগঞ্জ থেকে রিজার্ভ নিয়ে আউশকান্দি থেকে জ্যোৎস্নাকে  তাদের বাড়িতে আনতে যায়। মদনপুর এলাকায় এসে দু’ যুবকদ্বয় জ্যোৎস্নাকে তাদের বাড়িতে না নামিয়ে মায়ানগর থেকে কিছু দুরে নিয়ে একটি জমিতে নেয়। তাজ উদ্দিনের সামনেই ওই দুই যুবক জ্যোৎস্নার গলায় গামছা পেছিয়ে শ্বাসরোধের চেষ্টা করে।

    তাজ উদ্দিন বাধা দিলে এক যুবক ছুরি দিয়ে তাকে হত্যা করার জন্য এগিয়ে আসলে সে আত্মরক্ষার্থে পালায়। এবং ঘটনাটি কাউকে বললে তাকে হত্যার হুমকি দেয় যুবকদ্বয়। এছাড়াও পুলিশ তদন্তকালে ওই যুবকদের মোবাইল নম্বারের সাথে নিহত জ্যোৎস্না বেগমের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের কললিষ্ট পাওয়া যায় বলে সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানাযায়। ঘটনার পর থেকেই ছদর মিয়া ও তার অপর সহযোগী গাঁ ঢাঁকা দেয়। পুলিশ তাদেরকে গ্রেফতারের জন্য জোর তৎপরতা চালায়। ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়েও তাদের পাওয়া যায়নি।

    ঘটনার দীর্ঘ ২ মাস ১৮ দিন পর গোপন সুত্রে খবর পেয়ে রবিবার ভোরে ঢাকার উল্লেখিত স্থান থেকে ছদর মিয়াকে গ্রেফতার করে নবীগঞ্জ থানায় নিয়ে আসে। নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ ও মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা মোঃ লিয়াকত আলীর সাথে গতকাল রাতে ফোনে আলাপকালে তিনি জানান, ধৃত ছদর মিয়ার কাছ থেকে হত্যাকান্ডের বিষয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে বলা যাবে না।