জৈন্তাপুরে রাতের আঁধারে পাহাড় কাটার উৎসব,নিরব পরিবেশ অধিদপ্তর!

0
846
সিলেটের জৈন্তাপুরের ৬ টি ইউনিয়নে ছোট বড় পাহাড় ও টিলা রয়েছে যেগুলো পরিবেশের জন্য অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাহাড় ও টিলা শ্রেনীর ভূমিতে প্রচুর কাঠাল, তেজপাতা ও নানা প্রজাতির লেবু উৎপাদিত হয়। স্থানীয় প্রভাবশালীরা সরকারী পাহাড় ও টিলা দখল করে এর শ্রেণী পরিবর্তন ঘটিয়ে বসতবাড়ী নির্মাণসহ পাহাড় শ্রেনীর ভূমি ক্রয় বিক্রয় করছে।
সিলেটের জৈন্তাপুরের ৬ টি ইউনিয়নে ছোট বড় পাহাড় ও টিলা রয়েছে যেগুলো পরিবেশের জন্য অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাহাড় ও টিলা শ্রেনীর ভূমিতে প্রচুর কাঠাল, তেজপাতা ও নানা প্রজাতির লেবু উৎপাদিত হয়। স্থানীয় প্রভাবশালীরা সরকারী পাহাড় ও টিলা দখল করে এর শ্রেণী পরিবর্তন ঘটিয়ে বসতবাড়ী নির্মাণসহ পাহাড় শ্রেনীর ভূমি ক্রয় বিক্রয় করছে।

রেজওয়ান করিম সাব্বির, জৈন্তাপুর প্রতিনিধিঃ সিলেটের জৈন্তাপুরের ৬ টি ইউনিয়নে ছোট বড় পাহাড় ও টিলা রয়েছে যেগুলো পরিবেশের জন্য অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাহাড় ও টিলা শ্রেনীর ভূমিতে প্রচুর কাঠাল, তেজপাতা ও নানা প্রজাতির লেবু উৎপাদিত হয়। স্থানীয় প্রভাবশালীরা সরকারী পাহাড় ও টিলা দখল করে এর শ্রেণী পরিবর্তন ঘটিয়ে বসতবাড়ী নির্মাণসহ পাহাড় শ্রেনীর ভূমি ক্রয় বিক্রয় করছে।

এই রকম তথ্য জানার পরেও সংশ্লিষ্ট পরিবেশ অধিদপ্তর ও উপজেলা প্রশাসন নিরব ভূমিকা পালন করছে। জৈন্তাপুরের পাহাড় ও টিলা রক্ষায় সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এগিয়ে না আসলে মারাত্বক আকারে পরিবেশের বিপর্যয় দেখা দিবে।

রোববার (১৬ মে) সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ৫ নং ফতেপুর (হরিপুর) ইউনিয়নের উপর শ্যামপুর গ্রামের মৃত সুনা মিয়ার ছেলে হেলাল উদ্দিন এলাকায় পাহাড় কর্তন করছে প্রভাবশালী মহল। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিগত দিন গুলোতে এসকল এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করে পাহাড় কর্তনের উপর নিষেদাজ্ঞা জারী করে। কিন্তু নিষেদাজ্ঞাকে বৃদ্ধা আঙ্গুলী দেখিয়ে পাহাড় কর্তন চালিয়ে যাচ্ছে অসাধু প্রভাবশালীরা।

বর্তমানে নতুন নির্বাহী কর্মকর্তা যোগদান করার ফলে চক্রটি পুনরায় জনগুরুত্বপূর্ণ এলাকার পাহাড় কর্তন শুরু করে দিবা-রাত্রী সমান ভাবে পরিবহন যোগে মাটি বিক্রয় করে আসছে।

এছাড়া কেউ কেউ এসকল পাহাড় ও টিলা শ্রেনীর ভূমি কেটে মারাত্বক ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় বসতবাড়ী নির্মাণ করছে। পাহাড় কর্তনকারী উপর শ্যামপুর গ্রামের মৃত সুনা মিয়ার ছেলে হেলাল উদ্দিন পাহাড়ের বিরাট একটি অংশ রাতের বেলা বৈদ্যুতিক আলো জ্বালিয়ে কর্তন করছে। ১০/১৫জন শ্রমিক তাদের শাবল, কোদাল দিয়ে উচু পাহাড়ের টিলা খোড়ে মাটি নিচে রক্ষিত গাড়ীতে ফেলছে। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শ্রমিক জানায় “স্থানীয় প্রশাসনের লোকজনদের টাকা দিয়ে তারা পাহাড় কর্তন করে মাটি বিক্রয় করছে। কত টাকা দিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন,কত টাকা দিয়েছে সেটা হেলাল ভাই জানেন। বিভিন্ন সময় পুলিশ এসে টাকা নিয়ে যায়।“ এছাড়া সে আরও জানায় স্থানীয় কয়েকজন নেতারা এই এলাকার সকল পাহাড় ও টিলা কাটার কাজে সহযোগিতা করে আসছে।

এদিকে পরিবেশগত সমীক্ষা প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে ছাড়পত্র ছাড়া সিলেট বিভাগের সদর, জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, বিয়ানীবাজার, কোম্পানীগঞ্জ ও গোলাপগঞ্জ উপজেলায় পাহাড়কাটা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিগত ২০১১সালের ১লা মার্চ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) দায়ের করা রিটের রুল নিষ্পত্তি করেন বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও জাহাঙ্গীর হোসেনের নের্তৃত্বাধীন যৌথ বে  এই রায় দেন। ২০১১ সালের ২৭ নভেম্বর এসব এলাকায় পাহাড় কাটা কেন এখতিয়ার বর্হির্ভূত ও জনস্বার্থ পরিপন্থী ঘোষনা করা হবে না এবং পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসরত দুঃস্থদের পূর্ণবাসনের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিল আদালত। রিটে পরিবেশ, ভূমি ও গৃহায়ন সচিব, পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক, সিলেট সিটি করর্পোরেশন, সিলেট বিভাগীয় পুলিশ কমিশনার, সিলেট জেলা অধিদফতরের উপ-পরিচালক, সিলেট সদর, জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, বিয়ানীবাজার, কোম্পানীগঞ্জ ও গোলাপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সহ ১৫ জনকে বিবাদী করা হয়েছিল। আদালতে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) পক্ষে ছিলেন এডভোকেট ইকবাল কবির লিটন ও রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইয়াদিয়া জামান।

এবিষয়ে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রুবেল শরিফ ও জৈন্তাপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক জাকারিয়া মাহমুদ এ প্রতিবেদককে জানান, পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেট অফিসে এলাকাবাসী লিখিত অভিযোগ করে। তার প্রেক্ষিতে তারা সরেজমিনে এসে পাহাড় কর্তনকারীদের বিরুদ্ধে ৪০লক্ষ টাকা জরিমানা ঘোষণা করে চলে যান। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি রহস্য জনক কারনে সামান্য কিছু টাকা জরিমানা করে পাহাড় কর্তন না করার অঙ্গীকার নিয়ে তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তারপর ফিরে এসে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন কিছু প্রভাবশালী নেতাদের ছত্র-ছায়ায় তাদের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা পাহাড় কর্তনের বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন, সহকারী কমিশনার ভূমি এবং জৈন্তাপুর মডেল থানা পুলিশে খরব দিলে কোন কাজ হচ্ছে না। বরং নিবিচারে পাহাড় কর্তন অভ্যাহত রয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুসরাত আজমেরী হক আমার সিলেট প্রতিবেদককে জানান,”আমি জৈন্তাপুর উপজেলায় নতুন যোগদান করে কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করেছি। তবে উপজেলার যে সব ইউনিয়নে পাহাড় ও টিলা কর্তন করা হচ্ছে তা সরেজমিন পরিদর্শন করে কর্তনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।”