জেলা প্রশাসকদের প্রতি জবাবদিহিতার সংস্কৃতি গড়ার নির্দেশ রাষ্ট্রপতির

0
469
জেলা প্রশাসকদের প্রতি জবাবদিহিতার সংস্কৃতি গড়ার নির্দেশ রাষ্ট্রপতির
বিভাগীয় কমিশনার এবং জেলা প্রশাসকদের প্রতি জবাবদিহিতার সংস্কৃতি গড়ার নির্দেশ রাষ্ট্রপতির

উন্নয়নের সবচেয়ে বড় অন্তরায় দুর্নীতি-রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ মাঠ প্রশাসনের প্রতিটি স্তরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সংস্কৃতি গড়ে তোলার জন্য বিভাগীয় কমিশনার এবং জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দিয়েছেন।

মঙ্গলবার ১৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তিন দিনব্যাপী বার্ষিক ডিসি সম্মেলনে বঙ্গভবন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে এই নির্দেশনা দেন তিনি।

রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ বলেছেন, উন্নয়নের সবচেয়ে বড় অন্তরায় দুর্নীতি। এর কারণে টেকসই উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তাই মাঠ প্রশাসনের প্রতিটি স্তরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।

করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ডিসি সম্মেলনের আয়োজন করেনি। ফলে এবার এ সম্মেলন নিয়ে ডিসি ও সরকারের অনেক প্রত্যাশা রয়েছে। সাম্প্রতিক বিভিন্ন ইস্যু তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি বলেন, আমলাতন্ত্র ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতিটি স্তরে দায়িত্ব ও ক্ষমতা অর্পণ করা হয়। এই দায়িত্ব সঠিক ও সুষ্ঠুভাবে পালনের জন্য ক্ষমতা প্রয়োগ অত্যাবশ্যক। তবে ক্ষমতার যাতে অপপ্রয়োগ না হয়, তা নিশ্চিত করা আরও বেশি জরুরি।

রাষ্ট্রপ্রধান কর্মক্ষেত্রে দায়িত্ব ও ক্ষমতার পার্থক্য সচেতনভাবে বজায় রাখারও তাগিদ দেন। ডিসিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, মাঠ পর্যায়ে প্রশাসনে বিরাজমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং নাগরিক সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে গৃহীত কার্যক্রম সম্পর্কে আলোচনার জন্য জেলা প্রশাসক সম্মেলন একটি গুরুত্বপূর্ণ ফোরাম। আপনারা মাঠ পর্যায়ে সরকারের বিভিন্নমুখী কার্যক্রমের সমন্বয় ও তত্ত্বাবধানকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, যা সামগ্রিকভাবে দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

রাষ্ট্রপতি জনগণের সেবক হিসেবে দেশ ও জনগণের স্বার্থকে সবার ঊর্ধ্বে স্থান দেওয়ার উপদেশ দিয়ে বলেন, আমরা ও আপনারা জনগণের সেবক। তাই জনগণের সেবক হিসেবে নিজেদের দায়িত্ব পালন করবেন। জনগণের দোরগোড়ায় সরকারি সেবা পৌঁছে দেবেন।

আবদুল হামিদ বলেন, জনগণকে সেবাদান কোনো দয়া-দাক্ষিণ্য বা বদান্যতার বিষয় নয়। মনে রাখতে হবে- জনগণের টাকায়ই আমাদের সংসার চলে। তাই সেবা পাওয়াটা জনগণের অধিকার। দারিদ্র্য বিমোচন ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি একটি কার্যকর মাধ্যম।

তিনি বলেন, এসব কর্মসূচির মাধ্যমে দেশের দরিদ্র মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ, সামাজিক সুরক্ষা এবং জনগণের বিশেষ করে নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে ডিসিদের কার্যকর নেতৃত্ব প্রদান করতে হবে। প্রকৃত দরিদ্ররা যেন এসব কর্মসূচির সুফল ভোগ করতে পারে, সে বিষয়ে জেলা প্রশাসকদের সচেষ্ট হতে হবে।

তিনি বলেন, পরিবেশবান্ধব গ্রামোন্নয়নের দিকে সরকার বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে, যা বিগত বছরগুলো থেকে আলাদা। শহরের মতো গ্রামেও সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।

মফস্বল এলাকাগুলোতে নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি ডিসিদের আবাসন, শিক্ষা, কৃষিনির্ভর শিল্পের প্রসার, চিকিৎসাসেবা, বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানীয় জল ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার মাধ্যমে উপজেলা সদর ও বর্ধিষ্ণু শিল্পকেন্দ্রগুলোকে আধুনিক শহর-উপশহর হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিশেষ উদ্যোগী হতে হবে।

রাষ্ট্রপতি বলেন, সরকার দক্ষ, আধুনিক, জনকল্যাণমুখী ও টেকসই ভূমি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ভূমির সর্বোত্তম ব্যবহার এবং ভূমি সংক্রান্ত জনবান্ধব সেবা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে জনগণকে ভূমিবিষয়ক সেবা প্রদানের জন্য ডিজিটালি কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু ভূমি রেকর্ডের সময় এক শ্রেণির অসাধু কর্মচারী স্থানীয় প্রভাবশালী দালাল চক্রের সহযোগিতায় অনেক অনিয়ম করছে এবং অবৈধ সুযোগ-সুবিধা হাতিয়ে নিচ্ছে। এতে জনভোগান্তি বেড়েছে। এসব ব্যাপারে আপনাদের কঠোর হতে হবে। জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

তিনি বলেন, সরকার তথ্য অধিকার আইনের কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে সরকারি তথ্য ও সেবা নাগরিকের জন্য সহজলভ্য করার লক্ষ্যে জেলা ই-সার্ভিস সেন্টার, পৌর ডিজিটাল সেন্টার ও ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করেছে।

এসব সেবাকেন্দ্রের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার ব্যাপারে ডিসিদের জোরালো ভূমিকা রাখা এবং তথ্যপ্রযুক্তি সেবাকে তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়ার আহ্বান জানান।

জনগণকে ডিজিটাল সেবা, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে সামাজিক বনায়ন, বন্যানিয়ন্ত্রণ ও নিষ্কাশন, জলাভূমির উন্নয়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি হ্রাস ও দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারের চলমান কর্মসূচি, মাদক বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসকদের আরও সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দেন রাষ্ট্রপতি।