জিতে গেলো তাফিদার বাবা মা,লাইফ সাপোর্ট খোলা যাবে না

    0
    237

    অবশেষে জিতে গেলো তাফিদার বাবা মা। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ৫ বছর বয়সী শিশু তাফিদা রাকিবের চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে। খুলে ফেলা যাবে না তার লাইফ সাপোর্ট। চিকিৎসার জন্য তাকে ইতালিতে নেওয়ার ক্ষেত্রে দেওয়া যাবে না বাঁধা। বৃহস্পতিবার লন্ডনের উচ্চ আদালতের বিচারক রয়েল লন্ডন হাসপাতালকে এমন নির্দেশ দিয়েছেন।

    রয়েল লন্ডন হাসপাতালে নিবিড় পর্যবেক্ষণে কোমায় থাকা তাফিদার আশা ছেড়ে দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। তারা বলছেন, তাফিদার আর সুস্থ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। তারা তার লাইফ সাপোর্ট খুলে দেওয়ার জন্য পরিবারকে চাপ দিতে থাকেন। এমন পরিস্থিতিতে বিষয়টি আদালতে গড়ায়। রায়ে বিচারক ম্যাকডোনাল্ড বলেন, ইইউভুক্ত অন্য একটি রাষ্ট্র থেকে চিকিৎসা গ্রহণের অধিকারে হস্তক্ষেপ করার কোনো যৌক্তিকতা থাকতে পারে না। আমি আশা করি, এই স্থানান্তর অবিলম্বে ঘটবে। এনএইচএস ট্রাস্ট, ইতালির গ্যাসলিনি হাসপাতাল বা অন্য যে কোনো হাসপাতালকে তাফিদার চিকিৎসা সেবা দিয়ে যেতে হবে।

    বিচারক রায়ে আরও বলেন, চিকিৎসা পেশায় জড়িতদের অবশ্যই নৈতিক ও ধর্মীয় বিষয়গুলোর সঙ্গে ভারসাম্য রেখে প্রতিটি আলাদা রোগীর ক্ষেত্রে পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

    রায়ের উপসংহারে বিচারক ম্যাকডোনাল্ড বলেন, চিকিৎসার জন্য ইতালিতে নিয়ে যাওয়া তাফিদার মা-বাবার পছন্দ। সন্তানের জীবন ও তার ধর্মীয় পবিত্রতা রক্ষা তাদের অভিভাবকীয় দায়িত্ব। এই দায়িত্ব চর্চা অবশ্যই তারা করবেন।

    এদিকে, উচ্চ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে এনএইচএস ট্রাস্ট আপিল করবে কি-না তা জানা যায়নি। রায় ঘোষণার পর তাফিদার আইনজীবী ব্যারিস্টার ডেভিড লক কিউসি বলেন, এ রায়ে তাফিদার মা-বাবা অনেক বড় যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেলেন।

    এদিকে এনএইচএস ট্রাস্টের পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার কেটিগলপ কিউসি জানান, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ হয়তো রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারে। তবে এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

    রায় ঘোষণার আগে বুধবার স্থানীয় সময় বিকেলে পূর্ব লন্ডনের আলতাব আলী পার্কস্থ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তাফিদার পক্ষে আন্দোলনরত আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘সিটিজেন গো’ এক মানববন্ধন করে। সেখানে রায় বিপক্ষে গেলে এনএইচএস যাতে আর আপিলে না যায় তার দাবি জানানো হয়। মানববন্ধনে ‘সিটিজেন গো’র সমন্বয়ক ক্যারোলিন ফেরো বলেন, আমরা ছোট্ট মায়াবী শিশু তাফিদার বেঁচে থাকার অধিকার রক্ষায় লড়াই করছি। এ লড়াই শুধু তাফিদার মা-বাবার সন্তান রক্ষার লড়াই নয়, এ লড়াই চিকিৎসক কর্তৃক জীবন হরণ সংস্কৃতির বিরুদ্ধে মানবিক মর্যাদা রক্ষার লড়াই। এই ইস্যু শুধু ধর্মীয় বিশ্বাস রক্ষার ইস্যু নয়, এটি হিউম্যান ডিগনিটি রক্ষার ইস্যু। এই আন্দোলন শুধু তাফিদার অধিকার রক্ষার আন্দোলন নয়, বরং বর্তমান ও অনাগত প্রজন্মের স্বাভাবিক মৃত্যুর আগ পর্যন্ত চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার রক্ষার লড়াই।

    মেডিসিন কনসালটেন্ট ড. ফিলিপ হাওয়ার্ড বলেন, একজন রোগীর জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করা চিকিৎসকের নৈতিক দায়িত্ব। জীবন হরণের অনুমতির জন্য আদালতে যাওয়ার এমন ঘটনা আমার দীর্ঘ চিকিৎসক জীবনে দেখিনি। জীবন বাঁচানোর চেষ্টা না করে লাইফ সাপোর্ট খুলে নেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ অমানবিক। মানববন্ধনে স্থানীয় কাউন্সিলর ও কমিউনিটি নেতারাও বক্তব্য রাখেন।

    ৫ বছর বয়সী তাফিদা রাকিব চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি সকালে ঘুম থেকে উঠে মাথায় ব্যথা অনুভব করে। এর একটু পরেই সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। তাকে স্থানীয় নিউহ্যাম হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে ডাক্তাররা পরীক্ষা করে বলেন, তাফিদার ব্রেইন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরপর তার মাথায় অপারেশন করা হয়। অপারেশনের পর থেকে রয়েল লন্ডন হাসপাতালে নিবিড় পর্যবেক্ষণে কোমায় রয়েছে সে। ডাক্তাররা বলছেন, তাফিদার আর সুস্থ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত হলো তাকে শান্তিতে মরতে দেওয়া।

    কিন্তু তাফিদার মা সেলিনা রাকিব বলে আসছেন, তার মেয়ে এখন আগের চেয়ে ভালো এবং সে দিন দিন সুস্থতার দিকে যাচ্ছে। তারা মেয়েকে উন্নত চিকিৎসার জন্যে ইতালির জেনোয়ার গ্যাসলিনি চিলড্রেনস হাসপাতালে স্থানান্তর করতে চায়। কিন্তু রয়েল লন্ডন হাসপাতালের চিকিৎসকেরা ইতালির হাসপাতালে যাওয়ার অনুমতি দিচ্ছিলেন না।