ছেলের শোকে বাবার মৃত্যুঃছেলের মরদেহ এলেও বাবার আসেনি

    0
    247

    আমার সিলেট টুয়েন্টি ফোর ডটকম,১৮এপ্রিল,এম ওসমান, বেনাপোল : কিশোর আসাদ মন্ডলের (১৫) ক্যানসার ধরা পড়েছিল। হাল ছাড়েননি বাবা রফিক মন্ডল ও মা আরমা বেগম। গত বুধবার (১২ এপ্রিল) চিকিৎসার জন্য তারা আসাদকে ভারতের কলকাতায় নিয়ে যান। চারদিনের মাথায় রোববার (১৬ এপ্রিল) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় আসাদ। একমাত্র ছেলের মরদেহ ভারত থেকে নিয়ে দেশে ফিরছিলেন ওই দম্পতি। কলকাতায় অবস্থিত বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশন থেকে মৃতদেহের ছাড়পত্র আনার জন্য পেট্টাপোল চেকপোষ্টে অপেক্ষা করছিলেন বাবা-মা।

    তবে ছেলের চলে যাওয়াটা সহ্য করতে পারেননি বাবা রফিক মন্ডল। দেশে প্রবেশের আগেই পেট্টাপোল চেকপোষ্টে মারা যান তিনি। ছেলে আর স্বামীর মৃতদেহ নিয়ে বিপাকে পড়ে যায় স্ত্রী আরমা বেগম। মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) সকালে ছেলের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হলে বাবার মরদেহ পড়ে আছে বনগাঁ হাসপাতালে। মরদেহের সনদ আনতে কলকাতায় গেছেন স্থানীয় লোকজনের সাথে স্ত্রী আরমা বেগম। হৃদয়বিদারক করুণ এ ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার (১৭ এপ্রিল) সন্ধ্যায়। আইনি প্রক্রিয়া শেষে কখন লাশ হস্তান্তর হবে তা কেউই বলতে পারছে না। বেনাপোল চেকপোষ্টে স্বজনদের করুণ আহাজারিতে বেদনার্ত হয়েছেন উৎসুক মানুষেরাও।

    রফিক ও আরমা দম্পতি গাজীপুরের গোবিন্দবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা। ছেলে আসাদ (১৪) অষ্টম শ্রেণীর পরীক্ষার্থী।

    বেনাপোল চেকপোষ্টে মরদেহ নিতে আসা মৃত রফিকের চাচা খন্দকার আলী জানান, রফিক মন্ডল পেশায় একজন কৃষক। একমাত্র ছেলেকে বাঁচাতে দেশেই আপ্রাণ চেষ্টা করছিলেন বাবা রফিক। সব জমি-জমা বিক্রি করে ডাক্তারের পরামর্শ মত ৪ মাস ধরে ছেলের চিকিৎসার পেছনে অর্থ খরচ করেছেন। ডাক্তারও আশ্বস্ত করে আসছিলেন, ছেলে আসাদ সুস্থ হয়ে উঠবে। কিন্তু দিন দিন ছেলের শারিরীক অবস্থা উন্নতির বদলে খারাপের দিকে যাওয়ায় বাবার মন ভালো বলছিলো না। তাই তিনি আত্মীয়ের পরামর্শে  কোনোমতে টাকা-পয়সা জোগাড় করে ছেলেকে উন্নত চিকিৎসা করাতে গত ১২ এপ্রিল স্ত্রীসহ তারা কলকাতায় যান। কলকাতায় এসে একটি বেসরকারি নার্সিং হোমে আসাদের চিকিৎসাও শুরু হয়। ১৬ এপ্রিল হাসপাতালে মারা যায় আসাদ। ভর্তির পর পরই ডাক্তাররা বলেছিল ‘ছেলের যে হাল করে এনেছেন, তাতে বাঁচানোর কোনো সুযোগ নেই। অযথা টাকা খরচ না করে বাড়িতে ফেরত নিয়ে যান’।

    ছেলে মারা যাওয়ার পর হাসপাতালের আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে সোমবার আসাদের লাশ বাংলাদেশে নিয়ে যাওয়ার জন্য রওনা দেন আরমা বেগম ও রফিক মন্ডল। ছেলের লাশ নিয়ে সোমবার বিকেলের দিকে পেট্টাপোল চেকপোষ্টেও পৌঁছে যান তারা। এরপর সীমান্ত পার হওয়ার আগে পেট্টাপোলে অপেক্ষারত অবস্থায় হঠাৎই রফিক মন্ডল বুকের ব্যথায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। ওই অবস্থায় স্থানীয় রামেশ্বর রায় নামে এক ব্যক্তির সাহায্যে বাথরুমে যাওয়ার পথে হঠাৎ করেই বমি ও প্রচন্ড বুকে ব্যথায় জ্ঞান হারান তিনি। স্থানীয়রা তাকে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসকরা রফিক মন্ডলকে মৃত ঘোষণা করেন। মরদেহ এখন হাসপাতালে রয়েছে। মরদেহ আনার জন্য আরমা বেগম সকালেই ছুটে গেছেন কলকাতাস্থ বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনে।

    ছেলের অকালমৃত্যুর পর স্বামীকেও হারিয়ে এখন স্তব্ধ হয়ে আছেন আরমা বেগম। কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘ছেলের শোকেই ওর বাবা চলে গেল। ছেলেকে ভীষণ ভালোবাসতো সে।’ অসহায় অবস্থায় আছেন আরমা বেগম।

    এদিকে ছেলের মরদেহ মঙ্গলবার সকালে বাংলাদেশে তার স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। আত্মীয়স্বজনেরা ছেলের মরেেদহ নিয়ে গাজিপুরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছেন বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে। পিতার লাশ আসার পর এক সাথে পিতা পুত্রের দাফন করা হবে বলে জানান চাচা খন্দকার আলী।

    বাবা-ছেলের এমন মৃত্যুর খবর শুনে এক নজর দেখতে চেকপোষ্টে উৎসুক মানুষ ভিড় জমায়। তাদের সবার চোখেও বেদনার ছাপ। সীমান্তে এ ধরণের দৃশ্য একটি বিরল ঘটনা।

    এই ঘটনায় বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের বিধানসভার সদস্য বিশ্বজিৎ দাস স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাংলাদেশের ওই নারী মৃত ছেলে ও স্বামীকে নিয়ে অসহায় অবস্থার মধ্যে পড়েছেন। তবে অসহায় ওই বাংলাদেশি মাকে সব রকমভাবে সাহায্যের চেষ্টা করছি আমি।’