ছাতকে পুলিশী তদন্তে থলের বেড়াল বেরিয়ে পড়েছে

    0
    221

    আমার সিলেট টুয়েন্টি ফোর ডটকম,১৮এপ্রিল,চান মিয়া,ছাতক (সুনামগঞ্জ):ছাতকে নিরীহ লোকজনের উপর একের পর এক মিথ্যাও সাজানো মামলা দায়েরের পর অবশেষে চৌকস পুলিশের হাতে ধরাশায়ি হয়েছেন বিয়ে পাগল মাহবুব লন্ডনীর পরিত্যাক্তা স্ত্রী শাপলা বেগম। এ মামলায় পুলিশী তদন্তে শাপলার বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে ভাড়াটে বাদি সাজার চা ল্যকর তথ্য বেরিয়ে পড়ে।

    জানা যায়, দোলারবাজার ইউপির মঈনপুর গ্রামের শুকুর আলীর মেয়ে শাপলা বেগমের বিয়ে হয় কুর্শি গ্রামের বিয়ে পাগল মাহবুব লন্ডনীর সাথে। ২০১৫সালের ১২নভেম্বর শাপলা বেগমসহ একই সাথে চার স্ত্রীর নামে ছাতক পৌরসভা মেয়র বরাবরে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে তালাক দেয়া হয়। এতে স্বামী মাহবুবের কলামে স্বাক্ষর দেয় প্রতারক আব্দুল্লাহ।

    এদিকে মাহবুবের ছোট বোন লিপি বেগমের স্বামি হাসনাবাদ গ্রামের খালেদ আহমদের সাথে সম্পদের ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে বিরুধ দেখা দেয়। এতে শাপলাকে টাকার বিনিময়ে ভাড়াটে বাদি সাজিয়ে থানার সাবেক ওসি আশেক সুজা মামুনকে ম্যানেজ করে খালেদের বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যাও হয়ারানী মামলা দায়ের করে মাহবুব। সর্বশেষ ২০১৬সালের ৬নভেম্বর মঈনপুর গ্রামের একটি বলাৎকারের ঘটনায় খালেদসহ অন্যান্যের বিরুদ্ধে থানায় মামলা (নং ৯, তাং ১১.১১.২০১৬ইং) দায়ের করে। পরে থানার চৌকস পুলিশ অফিসার এসআই সফিকুল ইসলামের তদন্তে বেরিয়ে পড়ে শাপলার থলের বেড়াল।

    গত ২০১৬সালের ৩১ডিসেম্বর দেয়া থানার চুড়ান্ত রিপোর্টে (নং ৮০) বলা হয়, ২০১৬সালের ৬নভেম্বর রাতে মঈনপুর গ্রামের একটি ওরস চলাকালে শাপলার ভাই লুৎফুর রহমানসহ এলাকার ৩/৪জন বখাটে যুবক একই গ্রামের ওয়াহাব আলীর পুত্র রাগিব আলী (১০) কে বলাৎকার করে। পরে রাগিব আলীর আত্মীয়-স্বজনও গ্রামবাসি বিষয়টি জানতে পেরে ইউপি সদস্য গিয়াস উদ্দিন কুতুবের কাছে বিচার প্রার্থী হন। ঘটনার দিন ৬নভেম্বর বিকেলে ইউপি সদস্যের সভাপতিত্বে তার বাড়িতেই এনিয়ে এক সালিশ বৈঠক বসে।

    এতে গ্রামের ৫০/৬০জন গন্যমান্য ব্যক্তির উপস্থিত ছিলেন। সালিশে শাপলার ভাই লুৎফুরসহ বলাৎকারের সাথে জড়িত অন্যান্যদের গলায় জুতার মালা পরে গ্রাম ঘুরানোর রায় প্রদান করা হয়। জড়িতদের সবাই এ রায় মেনে নিলেও বখাটে লুৎফুর রায় অমান্য করে বৈঠক থেকে চলে যাবার অপচেষ্টা চালালে সালিশানদের সাথে বখাটে লুৎফুরের ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। এসময় শাপলার পিতা শুকুর আলী তার বখাটে পুত্রকে আটকাতে গিয়ে ঘরের দরজার সাথে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে হাতের কনুইয়ের কাছে এবং সালিশ সুন্দর আলী, সেবুলও ওসমান আলীসহ অন্যান্যের সাথে ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে লুৎফুরের মাথায়ও চোখের নীচে সামান্য জখম প্রাপ্ত হয়। পরে লুৎফুর বৈঠকের রায় অমান্য করে চলে যায়।

    কিন্তু দ্বি-চারিনী শাপলা তার পিতা শুকুর আলীও ভাই লুৎফুরকে ছাতক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এনে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করলে ডাক্তারি সনদে দু’জনের সেম্পুল ইনজুরি প্রকাশ পায়। এঘটনায় লিখিত ডিভোর্সের পরও প্রতারণার মাধ্যমে মাহবুব লন্ডনীকে স্বামী পরিচয়ে তার প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মারামারি মামলা করতে শাপলাকে ভাড়াটে বাদি সাজানো হয়।

    মাহবুবের সাথে সম্পদের ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে ভগ্নিপতি খালেদের বিরুধ থাকায় মাহবুব তাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর অপচেষ্টা চালায়। কিন্তু শাপলাও লুৎফুরের মোবাইল ফোনের কল লিষ্ট পর্যালোচনায় দেখা যায়, ঘটনার সময় তাদের অবস্থান ঘটনাস্থলের আশপাশে থাকলেও এজাহাকৃত আসামি খালেদ মিয়ার অবস্থান ঘটনাস্থল থেকে ছিল ১৮কিলোমিটার ও রাজন মিয়ার অবস্থান ছিল ১১কিলোমিটার দূরে। দোলারবাজার ইউপির মঈপুরের সালিশ বৈঠকের ঘটনাকে ছৈলা-আফজালাবাদ ইউপির সরিষপুর গ্রামের রাস্তায় কাল্পনিক ঘটনা সাজিয়ে মামলা রেকর্ড করে সাবেক ওসি আশেক সুজা মামুন মহবুবের কাছ থেকে কয়েক লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেন। পরে মাহবুবের প্ররোচনায় প্রতিপক্ষকে হয়রানি করার উদ্দেশ্যে টাকার বিনিময়ে ভাড়াটে বাদি সেজে এমামলা দায়ের করেছে বলে পুলিশের তদন্তে শাপলার অপকর্মের চা ল্যকর তথ্য বেরিয়ে পড়ে।

    তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সফিকুল ইসলাম এজাহারকৃত আসামি কালারুকা ইউপির হাসনাবাদ গ্রামের নোয়াব আলীর পুত্র খালেদ মিয়াও পীরপুর গ্রামের রাজন তালুকদারকে মামলা থেকে অব্যাহতি দানের জন্যে আদালতে আবেদন করেন। এরআগে শাপলা একই আসামিদের উপর জিআর মামলা (১৪৮/২০১৬ইং) ও সুনামগঞ্জ নারীও শিশু আদালত বরাবরে কোর্টপিটিশন মামলা (নং ২৪২/০১৬ইং) দায়েরে ভাড়াটে বাদি সাজে। দু’টি ঘটনাই ছিল সম্পূর্ণ মিথ্যা। এসআই সুহেল ও সাবেক ওসি আশেক সুজা মামুন মোটা অংকের টাকায় মোবাইল কললিষ্টসহ মামলার গুরুত্বপূর্ন বিষয়াদি পর্যালোচনা না করেই মিথ্যা চার্জশীট দেয়া হয়। পরে এ মিথ্যা চার্জশীট প্রত্যাহারের দাবিতে সিলেট ডিআইজি মহোদয়সহ বিভিন্ন দফতরে লিখিত আবেদন করা হয়।

    অবশেষে শাপলার একের পর এক ভাড়াটে বাদি সাজার চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে চৌকস পুলিশ অফিসার এসআই সফিকুল ইসলামের তদন্তে। ফলে এখন সাবেক ঘুষখোর ওসি মামুন, এসআই সুহেল, বিয়ে পাগল প্রতারক মাহবুব লন্ডনী, ঘটক আব্দুল্লাহ ও ভাড়াটে বাদি শাপলা বেগম এখন চরম বেকায় পড়েছে বলে জানা গেছে।