চট্টগ্রাম সংঘর্ষে কমপক্ষে নিহত-৫,পুলিশসহ অর্ধশত আহত,তদন্ত কমিটি গঠন

0
966
চট্টগ্রাম সংঘর্ষে কমপক্ষে নিহত-৫,পুলিশসহ অর্ধশত আহত,তদন্ত কমিটি গঠন
চট্টগ্রাম সংঘর্ষে কমপক্ষে নিহত-৫,পুলিশসহ অর্ধশত আহত,তদন্ত কমিটি গঠন

চট্টগ্রাম প্রতিনিধিঃ চট্টগ্রামের বাঁশখালী থানার গণ্ডামারা ইউনিয়নের পশ্চিম বড়ঘোনায় এস আলম গ্রুপের মালিকাধিন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের সংঘর্ষে ৫ জন নিহতের সংবাদ পাওয়া গেছে। নিহতরা হচ্ছে আহমদ রেজা (১৮), রনি হোসেন (২২), শুভ (২৪), মোঃ রাহাত (২৪) ও মোঃ রায়হান (২৫)। তাদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ ৪ (চার) জন বাঁশখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও একজন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যান।

শনিবার (১৭ এপ্রিল) সকালে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বেতন ভাতা সংক্রান্ত দাবি আদায়ের বিক্ষোভ থেকে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।বিতর্কিত এই কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকে ঘিরে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে ২০১৬ এবং ২০১৭ সালে সাত গ্রামবাসীর নিহতের অভিযোগ রয়েছে। শনিবারের ঘটনায় আহত ১১ জনকে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতরা হলেন হাবিব উল্লাহ (২১), মোঃ রাহাত (৩০), মোঃ মিজান (২২), মোঃ দিদার (২৩), মোঃ মুরাদ (২৫), মোঃ শাকিল (২৩), মোঃ কামরুল (২৬), মোঃ মাসুম আহমদ(২৪), আমিনুল হক (২৫), মোঃ ওমর (২০) ও অভি (২২)। এছাড়া গণ্ডামারা পুলিশ ফাঁড়ির তিন সদস্যও আহত হয়েছেন। তারা হলেন-ইয়াসির (২৪), আসাদুজ্জামান (২৩) আব্দুল কবির ও (২৬)। বাঁশখালী থানার ওসি (তদন্ত) আজিজুল ইসলাম বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রে সংঘর্ষে ৫ জন নিহত হওয়ার খবর পেয়েছি। এসময় অনেকে আহত হয়। বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভেতর বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা আগুন ধরিয়ে দেন বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।
৪টি মরদেহ বাঁশখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রাখা হয়েছে বলে জানান উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. শফিউর রহমান মজুমদার। হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই শীলব্রত বড়ুয়া জানান, বাঁশখালীর বিদ্যুৎকেন্দ্রে পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ ও আহতদের হাসপাতালে আনা হয়েছে। এদের মধ্যে মো. রায়হান (২৫) মারা যান। তিনি নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার আদর্শ গ্রামের আব্দুল মতিনের ছেলে।
এদিকে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন বলেছেন, বেতন-ভাতা নিয়ে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের শ্রমিকদের সঙ্গে কর্তৃপক্ষের বিরোধ চলছিল। সকালে শ্রমিকরা বিক্ষোভের চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। কেন এমন ঘটনা তা তদন্ত করে দেখা হবে।
বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, উপজেলা হাসপাতাল থেকে চার জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। পরে একজন মারা গেছেন। তিনি বলেন, কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকায় সংঘর্ষ হয়। সেখানে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। কেন এমন সংঘর্ষ তা তদন্ত করে দেখা হবে।
দুটি তদন্ত কমিটি গঠনঃ কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রে সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে আলাদা ২টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গতকাল বিকেলে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান ও চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। ডিআইজি আনোয়ার হোসেন বলেন, ওই ঘটনায় জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে প্রধান করা হয়েছে অতিরিক্ত ডিআইজি জাকির হোসেনকে। কমিটির অন্য দুই সদস্যের মধ্যে একজন এসপি ও একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আছেন। জেলা প্রশাসক বলেন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুমনী আক্তারকে প্রধান করে ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কবির আহমেদ, বিদ্যুৎ বিভাগের একজন প্রতিনিধি এবং শ্রম বিভাগের আরও এক প্রতিনিধি সদস্য হিসেবে রয়েছেন।