ঘূর্ণিঝড় ‘মোকা’র প্রভাব থেকে দেশের চট্টগ্রাম-সিলেট ও ঝুঁকিমুক্ত নয়!

0
196

আমারসিলেট রিপোর্টঃ অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোকা’ আজ রোববার (১৪ মে) সকাল ৯টা থেকে বেলা ৩টার মধ্যে কক্সবাজার-উত্তর মিয়ানমার উপকূল অতিক্রম করতে পারে।এর প্রভাব থেকে চট্টগ্রাম সিলেট ও ঝুঁকিমুক্ত নয়। এ অবস্থায় স্কুল-মাদ্রাসাগামী শিশুদের ব্যাপারে সতর্ক থাকার প্রয়োজন রয়েছে বলে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে সচেতন মহল।

চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় এলাকায় শনিবার দিনগত রাত থেকে মোকার অগ্রভাগের প্রভাব শুরু হয়েছে। মধ্যরাতে মনপুরা দ্বীপ, চরফ্যাশনসহ আশপাশের এলাকায় হালকা বাতাস ও বৃষ্টি দেখা গেছে। সেন্টমার্টিন দ্বীপেও হালকা বাতাস ও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। সাগরেও জোয়ার আসা শুরু করেছে। মধ্যরাতে বৃষ্টি বেড়েছে কক্সবাজার শহরে। কক্সবাজারের টেকনাফেও ভোর রাতে বৃষ্টি বেড়েছে।

বাংলাদেশে দুর্যোগ নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর জোট নিড অ্যাসেসমেন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের একটি প্রভাব বিশ্লেষণ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চার জেলার ২০ উপজেলার ওপর দিয়ে ৯৩ কিলোমিটার বা তার বেশি গতিতে ঘূর্ণিঝড়টি অতিক্রম করবে। এতে ঝুঁকিতে রয়েছে প্রায় ৫৭ লাখ মানুষ, যার মধ্যে প্রায় ২৮ লাখ নারী, ৭ লাখ ৫৮ হাজার শিশু (চার বছরের কম বয়সী) ও ৭৪ হাজার ৬৭৩ জন প্রতিবন্ধী। আর নারীদের মধ্যে ৭৪ হাজারের বেশি সন্তানসম্ভবা ও ১ লাখ ৯৫ হাজার জন বৃদ্ধা।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ঝুঁকিতে থাকা এলাকায় ৭ লাখ ৬৩ হাজারের বেশি কাঁচা ঘর ও ঝুপড়ি রয়েছে। এসব ঘর ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত অথবা ধ্বংস হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

কক্সবাজারের মধ্যে টেকনাফ ও উখিয়া, চকরিয়া ও মহেশখালী ঝড়ের বাতাস ও বৃষ্টির কারণে উচ্চঝুঁকিতে রয়েছে। রাঙামাটির বিলাইছড়ি ও জুয়াছড়ি এবং বান্দরবানের আলীকদমও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় পড়েছে। চট্টগ্রামের জেলাগুলোর মধ্যে চকরিয়াতে উচ্চঝুঁকি এবং বাঁশখালী, লোহাগড়া ও সাতকানিয়ায় মাঝারি মাত্রার ঝুঁকি রয়েছে। এসব জেলায় ঘণ্টায় ১২০ থেকে ১৭০ কিলোমিটার বেড়ে ঝড়ো বাতাস বইতে পারে। ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে সেখানে পাহাড়ধসেরও আশঙ্কা রয়েছে।

এসব এলাকার বাইরে উপকূলীয় দ্বীপগুলোর মধ্যে সেন্টমার্টিন সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। সেখানে শতাধিক পর্যটন হোটেল ও মোটেল রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টি আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে রোববার সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে কক্সবাজার-উত্তর মিয়ানমার উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় মোকার কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ১৯০ কিলোমিটার, যা দমকা বা ঝোড়ো হাওয়া আকারে ২১০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের মানে হলো বন্দর প্রচণ্ড বা সর্বোচ্চ তীব্রতার ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ এক সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের কবলে। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ কিলোমিটার বা তার বেশি হতে পারে। প্রচণ্ড ঝড়টি বন্দরের ওপর বা কাছ দিয়ে উপকূল অতিক্রম করবে। আর ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের মানে হলো, বন্দর প্রচণ্ড বা সর্বোচ্চ তীব্রতার ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়তে পারে। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ কিলোমিটার বা এর বেশি হতে পারে। প্রচণ্ড ঝড়টি বন্দরকে বাঁ দিকে রেখে উপকূল অতিক্রম করবে।

উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো আট নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।

কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে আট থেকে ১২ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস এবং ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পাঁচ থেকে সাত ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশাল বিভাগে ভারি (৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতিভারি (৮৯ মিলিমিটার)

বৃষ্টিপাত হতে পারে। অতিভারি বর্ষণের ফলে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে।