কোটি টাকা লোকসানের আশংকায় কমলগঞ্জে পশুর হাট খুলে দেওয়ার দাবি

0
553
কোটি টাকা লোকসানের আশংকায় কমলগঞ্জে পশুর হাট খুলে দেওয়ার দাবি

শাব্বির এলাহী,কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার): করোনা প্রতিরোধে কঠোর লকডাউনে সারা দেশের মতো মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জেও বন্ধ রয়েছে হাট-বাজার, যানবাহন, লোক চলাচল সবই। এ পরিস্থিতিতে কোরবানির পশু কেনা-বেচা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ক্রেতা ও শতাধিক ক্ষুদ্র খামারি। প্রায় এককোটি টাকায় পশুর হাটের বাৎসরিক ইজারা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ছয়জন ইজারাদার। তাদের আয়ের প্রধান উৎস হচ্ছে এই কোরবানির পশুর হাট।

এ বছর হাট না বসায় কোটি টাকা লোকসানের আশঙ্কায় রয়েছেন এই ইজারাদাররা। তাই স্বাস্থ্যবিধি এবং সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত করে প্রশাসনের কাছে শুধুমাত্র পশুর হাট বসার অনুমতি দাবি করেছেন ক্রেতা-খামারি ও ইজারাদররা। এদিকে গত শুক্রবার আদমপুর বাজার, শনিবার মুন্সীবাজার ও রোববার শমশেরনগর বাজারে পশুর হাট বসলেও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতের কথা বলে পুলিশ হাটগুলো ছত্রভঙ্গ করে দেয়।কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর বাজারের পশুর হাটটি জেলার মধ্যে অন্যতম একটি পশুর হাট। সপ্তাহের শুক্রবার ও সোমবার দুই দিন হাট বসে এখানে। কোরবানির কমপক্ষে একমাস আগে থেকেই জমে ওঠে এই পশুর হাট।

এলাকার ছোটখাটো খামারি ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা কোরবানি উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পশু কিনে এই এই হাটে বিক্রি করেন। প্রতি হাটে ৩০০ থেকে ৪০০ গরু-ছাগল কেনা-বেচা হয়। এ ছাড়া গৃহস্থের পালিত গবাদিপশু সারা বছরই বিক্রি হয় এখানে। কিন্তু এ বছর করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতিতে পশুর হাট বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন।

এতে হতাশায় পড়েছেন সবাই।রোববার (১১ জুলাই) বিকেল ৪টার দিকে সরেজমিন শমশেরনগর বাজারে পশুর হাটে গিয়ে দেখে যায়, জনমানবশূন্য এক বিরানভূমি। পশু বাধার আড়াগুলো খালি পড়ে আছে। টোলঘরটিও পলিথিনে মোড়া। দু-একজন ক্রেতা এসে ঘুরে চলে যাচ্ছেন। সকালে কিছু গরু-ছাগল হাটে আনা হলেও পুলিশ এসে বন্ধ করে দেয়। কবে হাট বসবে জানতে মোবাইলে যোগাযোগ করছেন ইজারাদারদের সঙ্গে। তবে নিশ্চিত কোনো তথ্য পাচ্ছেন না কেউ। অন্যান্য বছর কোরবানির আগ মুহুর্তের এ হাটে শত শত পশু আর ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড় ঠেলে চলার সুযোগ ছিল

গত শনিবার মুন্সীবাজারে পশু কিনতে আসা উপজেলার রুপসপুর গ্রামের মো. জাহিদুল ইসলাম (৫০) জানান, কোরবানির বাকি আর মাত্র কয়েকদিন। তাই পশু কেনার উদ্দেশে বিকেলে আসেন তিনি। এখানে এসে দেখেন পুলিশ ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে। পরে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। এখন গ্রামে গ্রামে ঘুরে পশু কেনার চেষ্টা করবেন বলে জানান। রামেশ্বরপর গ্রামের গ্রামের আং রশিদ ও ধর্মপুর গ্রামের লিমন মিয়া এসেছিলেন হাটের খোঁজখবর নিতে। তারা ইজারাদারকে ফোন করে জানতে চান কবে হাট বসবে। কিন্তু অপর প্রান্ত থেকে অনিশ্চয়তার খবরই পেয়েছেন তারা।

উপজেলার আলেপুর গ্রামের কোরবানির পশু ব্যবসায়ী আং মোক্তাদির জানান, তিনি প্রায় ২০ বছর ধরে কোরবানির পশুর কারবার করছেন। প্রতিবছর তিনি শমশেরনগর ও আদমপুরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে গরু কিনে এই হাটে বিক্রি করেন। গতবছর ১৫টি গুরু বিক্রি করে প্রায় অর্ধ লক্ষ টাকা লাভ করেছেন। কোরবানির পশুর কারবারই তার বছরের প্রধান আয়ের উৎস। কিন্তু এবছর আর তা করতে পারছেন না। ওই ব্যবসায়ী জানান, সবাই হতাশায় পড়েছেন। এমন পরিস্থিতির শিকার হননি কোনোদিন তারা।

উপজেলার আদমপুর এলাকায় ক্ষুদ্র পশুর খামারি মো. সানাউল খান জানান, তিনি বেশ কয়েক বছর ধরে কোরবানি সামনে রেখে পশু লালন-পালন করে আসছেন। বর্তমানে তার খামারে ১২টি গরু আছে। গ্রাম থেকে একেকটি গরু ৪৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকায় কিনে প্রায় ৮ মাস ধরে উন্নত খাবার খাইয়ে হৃষ্টপুষ্ট করেছেন। প্রতি পশুর পেছনে তার ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এখন একেকটি পশুর ওজন ৪-৫ মণ করে। পশুর হাট না বসায় তার এই পশু বিক্রি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। আর সময় মতো বিক্রি করতে না পারলে কয়েক লাখ টাকা লোকসান হবে তার।

আদমপুর পশুর হাটের ইজারাদার মো. ফারুক আহমদ জানান, কোরবানির পশুর হাটই তাদের আয়ের প্রধান উৎস। গত বছরও লোকসান হয়েছে। অনেক টাকা ঋণগ্রস্ত। ব্যাংকের ঋণও রয়েছে। ইতিমধ্যে বছরের তিন মাস পার হয়ে গেছে। পশুর হাট বন্ধ থাকায় তাদের চরম লোকসানে পড়ে পথে বসতে হবে। তাই সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে পশু হাটা খুলে দেওয়ার দাবি জানান ইজারাদাররা।

মুন্সীবাজারের পশুর হাটের ইজারাদার জুনেল আহমদ তরফদার বলেন, ঈদুল আযহা মুসলমানদের সবচেয়ে বড় উৎসব। ঈদুল আযহার মুখ্য বিষয় হচ্ছে কুরবানী করা। মানুষের প্রয়োজনে সরকার কাঁচা বাজার, মাছ বাজার, ভুসিমাল দোকান খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিলেও কুরবানি ক্রয় অত্যন্ত জরুরি বিষয়। এখানে ধর্মীয় অনুভূতির জড়িত। তাহলে কেন কুরবানির হাট বন্ধ রাখা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে জরুরী ভিত্তিতে খুলে দেয়ার দাবী জানান প্রশাসনের কাছে।কমলগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. হেদায়েত আলী বলেন, এই উপজেলায় অর্ধ শতাধিক ক্ষুদ্র খামার রয়েছে।

এসব খামারিরা কোরবানির হাটে ভালো দামে তাদের পশু বিক্রি করার আশায় রয়েছেন। কিন্তু লকডাউনে এ বছর কেউ পশু বিক্রি করতে পারছেন না। কোরবানির এখনও যে কদিন বাকি আছে হাট চালু হলে তা বিক্রি হবে। তা না হলে লোকসানে পড়বেন তারা।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশেকুল হক বলেন, করোনা পরিস্থিতি এখন চরম পর্যায়ে। এ কারণে কোরবানির পশুর হাটসহ সকল প্রকার হাট-বাজার বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসকের সাথে আলাপ হয়েছে। সরকার অনুমতি দিলে শীঘ্রই স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুধুমাত্র পশুর হাট সীমিত আকারে খুলে দেওয়া হবে।