কালো তালিকা ভুক্ত মনি সিংহ কাজ নিচ্ছে ভিন্ন লাইসেন্সে

    0
    282

    দখলে খামারবাড়ির সরকারি সব দপ্তর, কালো তালিকায় থাকা মনি সিংহ কাজ নিচ্ছে ভিন্ন লাইসেন্সে

    কথিত আছে রডের পরিবর্তে বাঁশ দিয়ে ভবন নির্মাণ করে বাংলাদেশে পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য ‘বাঁশের দালান’ তৈরী করে চমক সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন ঠিকাদার মনি সিং ওরফে কালা মনি। কিন্তু বেরসিক তদন্ত কমিটি মনি সিংহের এস্বপ্ন পূরন হতে দেয়নি। উল্টো বাঁশ মনি খেতাব দিয়েছে। র‌্যাবের গোয়েন্দা জালে ধরাও পড়েন অনৈতিকতার জঘণ্য উদাহরন সৃষ্টিকারি ঠিকাদার মনি সিংহ।

    কিন্তু আশ্চর্য্যরে বিষয় হলো বাঁশ মনিরের খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে জেল থেকে মুক্তি। আলোচনায় চলে আসে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা মণি সিংহ। গ্রেপ্তারের পর পর কালো তালিকায় স্থান পায় মনি সিংহের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জয় ইন্টারন্যাশনাল। অভিযোগ উঠেছে, বাঁশ মনির একটি প্রতিষ্ঠান কালো তালিকাভূক্ত হলে তিনি ঠিকাদারি করতে আশ্রয় নিয়েছেন আরো অন্ততঃ ১০টি প্রতিষ্ঠান।

    এর মধ্যে কোনটির লাইসেন্স নিজ নামে কোনটি পরিবারের সদস্যদের আবার কোনটি রয়েছে শুভাকাঙ্খিদের নামে। জেল মুক্তির পর ভিন্ন ভিন্ন নামে লাইসেন্সে ঠিকাদারী করছেন মনি সিংহ। নতুন করে শুরু করে টেন্ডার বানিজ্য। রাজধানীর ফার্মগেটের খামার বাড়ি, প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর, তুলা উন্নয়ন বোর্ড, মৃত্তিকা ভবনসহ অত্র এলাকার চাঁদাবাজী ও টেন্ডারবাজী এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে মনি সিং ওরফে কালা মনি। জেল মুক্তির পর হয়ে উঠেছেন আরো বেপরোয়া। যেন ফিরে পেয়েছেন নতুন যৌবন। তার নামে থাকা খামারবাড়ির হোটেল ব্যবসায়ী মঞ্জু, শাহাবাগের শাহিন, মনিপুরিপাড়ায় চন্দন হত্যা মামলাগুলো টেন্ডারবাজির ক্ষেত্রে বড় হাতিয়ার। চাঞ্চল্যকর এসব খুনের কথা প্রচার করে মনি সিং বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের প্রকল্প পরিচালকদের ভয় দেখান। তার ক্যাডার বাহিনি নিয়ে ত্রাসের রাজস্ব কায়েম করে। যাতে করে কোন কাজের টেন্ডারে অন্য কোন প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহন না করে। অথবা মনি সিংহের সাথে আপোষ করতে বাধ্য হয়। ওই এলাকার কোন প্রকল্প পরিচালক পাওয়া যাবেনা যাকে ভয় দেখাননি মনি সিংহ। কোনো কোনো পরিচালককে কাজ না দিলে হত্যার হুমকিও দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাসতুরা ইন্টারন্যাশনাল, জেনটিক ইন্টারন্যাশনাল, সিমেন্স ইন্টারন্যাশনাল, দেওয়ান এন্ড ব্রাদার্স ইন্টারন্যাশনাল ও মেসার্স মাহিয়া ইন্টারপ্রাইজ প্রভৃতি নামের লাইসেন্স কাজ ভাগিয়ে নেন সময়ের আলোচিত এ ঠিকাদার।

    খামার বাড়ি এলাকার প্রকল্পগুলোর ৭০ থেকে ৮০ ভাগ কাজ করেন মনি সিং। সেখানে অন্য কোন ঠিকাদার টেন্ডারের সিডিউল কিনতে যেতে পারেনা । সিডিউল ড্রপ করার সময় তার বাঁশ বাহিনী চার পাশে সশস্ত্র অবস্থান করে। তার পালিত ক্যাডারদের মধ্যে পলাশ, পিচ্ছি পলাশ সুমন লালটু রুবেল, টিপু, কাদের, হুমায়ন, আহাদ, তুহিনসহ আরো ৩০ থেকে ৪০ জনের একটি বাহিনী পাহারায় থাকে যাতে করে বাইরের কেউ টেন্ডার ড্রপ করতে না পারে। মনি বাহিনি নামে পরিচত এসব ক্যাডার খামার বাড়ি আ.কা.মু গিয়াস উদ্দিন মিল্কী অডিটরিয়ামে মদ ও জুয়ার আসর বসায়।

    সন্ধ্যা থেকে সেখানে চলে বিভিন্ন ধরনের বিনোদন ও মাতলামি। তরুণিদের গভীর রাতে বের হতে দেখা যায় ওই অডিটরিয়াম থেকে। এতে সহজেই অনুমেয় সেখানে চলে নারী নিয়ে ফুর্তি। ওই অডিটরিয়ামে টর্চারের জন্য আলাদা রুম রয়েছে। এসব করেই শত কোটি টাকার মলিক মনি সিংহ। তার ঘনিষ্টজনেরা বলেছেন, টাকার জোরে মনি সিংহ থানা আ.লীগের অর্থ সম্পাদকের পদটি বাগিয়ে নিলেও নেতা-কর্মীদের আন্দোলনের মূখে ওই কমিটি স্থগিত হয়ে যায়। তারপরও তিনি ওই পদটি ব্যবহার করেন।

    দল ও পদ ব্যবহার করে বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে ঠিকাদারি কাজ ভাগিয়ে আনেন। তার ঘনিষ্টজনেরা বলেছেন, বড় ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে মনি সিংহ দেশ ছেড়েও পালিয়ে যেতে পারেন। তাদের দাবি, মনি সিংহকে এখনই গোয়েন্দানজরদারির মধ্যে রাখা উচিৎ। অন্যথায় তার হাতে কারো খুনের ঘটনা ঘটলেও আশ্চয্যের কিছু থাকবে না। উল্লেখ্য, চুয়াডাঙ্গায় ‘বাংলাদেশ ফাইটোসেনেটারি ক্যাপাসিটি শক্তিশালীকরণ’ প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়নাধীন উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের অফিস ভবন কাম ল্যাবরেটরি নির্মাণ কাজে লোহার রডের পরিবর্তে বাঁশ ব্যবহার করা হয়।

    এ ঘটনায় মনি সিংসহ চারজনকে আসামি করে দামুড়হুদা মডেল থানায় মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলায় র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন মনি সিংহ। সিলেটের কোতোয়ালি থানার সাগরদীঘির পাড়ের বাসিন্দা যতিন সিংয়ের ছেলে মনি সিংহ এর মামলার বিষয়টি তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন। রাজধানীর ৬৪/এ মনিপুরি পাড়ার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জয় ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী ছিলেন বহুল সমালোচিত মনি সিংহ।