করোনাতেও কোচিং বাণিজ্য,বড় ঝুঁকিতে নবীগঞ্জ !

0
1370

নূরুজ্জামান ফারুকী,নবীগঞ্জ থেকেঃ করোনা মহামারির কারণে দেশে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ কোচিং ও প্রাইভেট পড়ানো বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু  নবীগঞ্জ উপজেলায় এই নির্দেশ অমান্য করে কিছু অর্থলোভী শিক্ষক প্রাইভেট–বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন।

এসব শিক্ষক ভাড়া করা কক্ষে ব্যাচ করে একসঙ্গে ৭০ থেকে ৮০ জন শিক্ষার্থীকে গাদাগাদি করে বসিয়ে টিউশন বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে উপজেলার কোমলমতি শিক্ষার্থীরা করোনা সংক্রমণের মারাত্মক ঝুঁকির মাঝে রয়েছেন। সারাদেশে সরকার যেখানে, করোনাভাইরাস থেকে রেহাই পেতে স্কুল কলেজ বন্ধ রেখেছে, সেখানে দলবদ্ধভাবে কোচিং কতটা নিরাপদ তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকগণ।

মহামারি করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে সামাজিক দুরত্ব ও স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলতে কর্তৃপক্ষের নির্দেশ রয়েছে, কিন্তু নবীগঞ্জের কোচিং সেন্টারগুলো ঠিক উল্টো পথে হাটছে। কিছু অসাধু কোচিং বাণিজ্যিকরা সরকারি আদেশের তোয়াক্কা না করেই চুপচাপ চালিয়ে যাচ্ছে তাদের অবৈধ কোচিং।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে গত বছরের মার্চ মাসের ১৬ তারিখে দেশের সব কোচিং সেন্টার বন্ধের নির্দেশ দেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এদিন সচিবালয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ নির্দেশ দেন তিনি। তারপর থেকে এখনো পর্যন্ত সেই নির্দেশ জারি রয়েছে। কোচিং চালুর ব্যাপারে নতুন করে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।

দেশে তৃতীয় ধাপে বেড়েছে করোনা সংক্রমণ। করোনা সংক্রমণ রোধে মোট ১৮ দফা নির্দেশনা চূড়ান্ত করেছে সরকার। তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি হল সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক, মাদ্রাসা, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়) ও কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে।

অথচ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে আহমেদ ইব্রাহিম নামের একজন শিক্ষক নবীগঞ্জের ওসমানী রোড কৃষি ব্যাংক এর উপর তলায় ও বিল্ডিংয়ের ছাদে করাচ্ছেন প্রাইভেট কোচিং। স্টার কোচিং নামের এই প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৮০ থেকে ৯০ জন করে ব্যাচ করে পড়াশোনা হচ্ছে। রোববার, মঙ্গলবার ও বৃহস্পতিবার বিকেল ৩ থেকে ৫ টা এক ব্যাচ পড়ানো হয় সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখেই চালিয়ে যাচ্ছেন তার জমজমাট কোচিং বাণিজ্য। এরকম করে আলাদা আলাদা ব্যাচ ও পড়ানো হচ্ছে প্রতিদিন।

কোচিং সেন্টারগুলোর আশপাশের দোকান ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, করোনাভাইরাসের প্রথম সময়ে কোচিং বন্ধ ছিলো। পরে সময়ে সময়ে স্টার কোচিং সেন্টারটি খুলেন এই শিক্ষক। তবে করোনার মধ্যে কোচিং খোলা থাকলেও প্রশাসন তেমন ব্যবস্থা নেয়নি।

এদিকে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কোচিং সেন্টার চালু থাকায় সচেতন মহলে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। করোনার ঝুঁকি নিয়ে কোচিং সেন্টারে আসা শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের নিয়ে উঠছে নানা প্রশ্ন। অভিভাবকদের দায়িত্বে অবহেলা ও খামখেয়ালীপনা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে সচেতনমহলে। প্রশাসনের এমন উদাসীনতা দেখে উপজেলার সচেতন মানুষের মধ্যে প্রচণ্ড ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

কোচিং বাণিজ্য বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যাক্তি বলেন, কোচিংয়ের বিরুদ্ধে সরকারি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। শুধু তাই নয়, করোনার কারণেও রয়েছে বিশেষ কিছু নিষেধাজ্ঞা। সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কিছু শিক্ষক এ কার্যক্রম চালু করেছেন। যেখানে জীবনের চেয়ে শিক্ষা তথা ব্যবসাকে পণ্য বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এই শিক্ষকদের বিরুদ্ধে প্রশাসন ও সরকার একটি শক্ত ভূমিকা নেবে বলে আমরা আশা করছি।

এ ব্যাপারে কথা হয় স্টার কোচিং সেন্টারের পরিচালক ও শিক্ষক আহমেদ ইব্রাহিম সঙ্গে তিনি বলেন, ‘করোনার নতুন নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার জানতে পারছি ১/২ টি ক্লাস নিয়ে কোচিং বন্ধ করে দিব।’

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আব্দুস সামাদ বলেন, দেশে করোনাভাইরাসের প্রভাব বেড়ে যাচ্ছে। এভাবে প্রাইভেট এবং কোচিং সেন্টার চালানো হলে শিক্ষার্থীরা মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়বে। শিক্ষামন্ত্রী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খোলা পর্যন্ত প্রাইভেট এবং কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখাই উত্তম হবে।

এ বিষয়ে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মহিউদ্দিন বলেন, ‘প্রাইভেট পড়ানোর বিষয়টি কোনোভাবেই বরদাশত করা যাবে না। এ ব্যাপারে দ্রুত অভিযান চালানো হবে। তিনি এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন।