ঈদের কেনাকাটায় কলকাতা যাচ্ছে সীমান্ত অঞ্চলের মানুষ

    0
    259

    আমার সিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,১৭জুন,এম ওসমান,বেনাপোলঃ  রোজা-গরমের মধ্যেও বেনাপোল দিয়ে হাজারো মানুষ প্রতিদিন পাড়ি জমাচ্ছে কলকাতায়। তাদের বড় অংশেরই উদ্দেশ্য ঈদের কেনাকাটা। চলতি জুনের শুরু থেকে কলকাতাগামী যাত্রীর সংখ্যা বেড়েছে। এদের বড় অংশই ফিরে আসছেন লাগেজ ভর্তি পণ্য নিয়ে। ভারতীয় ভিসা সহজ হওয়ার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। যশোর, ঝিকরগাছা, নওয়াপাড়া, খুলনাসহ সীমান্ত অ লের বিপুল সংখ্যক মানুষ কলকাতায় ঈদের কেনাকাটা করায় স্থানীয় বাজারে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। দেশের বৃহত্তম আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট বেনাপোল ও পূর্ব ভারতের প্রধান নগরী কলকাতার দূরত্ব মাত্র ৮৪ কিলোমিটার।

    যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় অল্প খরচে স্বল্প সময়ে কলকাতাসহ ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে অনায়াসে যাওয়া যায়।
    ইমিগ্রেশন সূত্র জানায়, স্বাভাবিক সময়ে বেনাপোল দিয়ে প্রতিদিন ৩-৪ হাজার যাত্রী যাতায়াত করেন। ঈদ সামনে রেখে এখন প্রতিদিন যাতায়াত করছেন ৭ হাজার থেকে সাড়ে ৭ হাজার মানুষ। চলতি মাসের ১৫ দিনে ভারতে যাতায়াত করেছেন এক লাখ পাঁচ হাজার ৭শ’ যাত্রী। এর মাধ্যমে রাজস্ব আয় হয়েছে প্রায় আড়াই কোটি টাকা। যাদের সিংহভাগ ঈদের কেনাকাটা করে ফিরছেন। এখন ঈদের কেনাকাটায় যাতায়াত বাড়লেও ক’দিন পর থেকে ঈদ অবকাশ যাপনে যাত্রী সংখ্যা আরো বাড়বে বলে কর্মকর্তারা মনে করছেন। ঈদের ছুটির সময় এ সংখ্যা দশ হাজার ছাড়াতে পারে বলেও কেউ কেউ ধারণা করছেন। গত বছর ঈদের ছুটি ঘিরে দশ দিনে ৫০ হাজার ৬১৬ যাত্রী বেনাপোল-হরিদাসপুর চেকপোস্ট দিয়ে বৈধ পথে যাতায়াত করেছিলেন। সে হিসেবে দিনে গড়ে সাড়ে পাঁচ হাজার যাত্রী যাতায়াত করেছিলেন। এ বার এ সংখ্যা যে আরো বাড়বে তাতে কারো কোনো সন্দেহ নেই।
    চাপের সময় যাত্রীদের যাতে দুর্ভোগে না পড়তে হয় সেজন্য বেনাপোল চেকপোস্টে পাসপোর্টের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার প্রস্তুতিও রেখেছে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ। তবে দুর্ভোগে পড়তে হয় ভারতীয় চেকপোস্টে গিয়ে। সেখানে দীর্ঘ লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। সেখানে ইমিগ্রেশনে ধীরগতির কাজের কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এমনও দেখা গেছে, সকালের যাত্রীরা দুপুরে, দুপুরের যাত্রীরা বিকেলে এবং বিকেলের যাত্রীরা রাতে পার হয়েছেন। বেনাপোল বাজারের কাপড়ের দোকানি বিপ্লব রহমান এর মতে, সব শ্রেণীর মানুষের জন্য ভিসা সহজি হওয়ার কারণে সচ্ছল মানুষরা ঈদ-পুজোর কেনাকাটার জন্য ভারতের কলকাতায় চলে যাচ্ছে। সেখান থেকে তারা প্রয়োজনীয় পণ্য কিনে ফিরছেন। এতে করে এদেশের ব্যবসায়ীরা ব্যবসা হারাচ্ছেন। এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে জাতীয় অর্থনীতিতে।
    বেনাপোল বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও বাজারের গামেন্ট ও ছিটকাপড় ব্যবসায়ী হাজি মোহাম্মদ উল্লাহ ক্লথ স্টোরের স্বত্বাধিকারী আব্দুল ওয়াহেদ দুদু বলেন, ‘আগে ঈদে খুব বেচাকেনা হতো। এখন এলাকার মানুষরা ঈদের কেনাকাটার জন্য কলকাতায় যাচ্ছেন। সেখান থেকে তারা জামা কাপড়, জুতা-স্যান্ডেল কিনে আনছেন। এতে করে ছিটকাপড়, গার্মেন্ট এবং জুতা ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছেন। আমরা ঈদকে সামনে রেখে বিপুল অংকের টাকা বিনিয়োগ করলেও কাঙ্কিত ক্রেতা পাচ্ছি না। এতে করে লোকসানে পড়তে হচ্ছে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের।’
    বৃহস্পতিবার বিকেলে কলকাতা থেকে পরিবারের জন্য ঈদের কেনাকাটা করে ফিরছিলেন বেনাপোলের বাসিন্দা আনিছুর রহমান। তিনি বলেন,’ গত ২-৩ বছর ধরে আমি কলকাতা থেকে ঈদের কেনাকাটা করছি। আমাদের জেলা থেকে ঢাকার চেয়ে কলকাতার দূরত্ব কম। যাতায়াত খরচও কম। তাছাড়া বেনাপোল ও যশোরের বাজারে গলাকাটা দাম রাখা হয়। জিন্সের প্যান্ট এখানে তিন হাজার টাকা হলেও কলকাতায় ৭০০ টাকায় পাওয়া যায়। যে জুতা বেনাপোল, নাভারন ও যশোরে ৫-৬ হাজার টাকা, তা কলকাতায় দেড় হাজার রুপিতে পাওয়া যায়। যে কারণে এখান থেকে টুকটাক কেনাকাটা করি। বাকিটা কলকাতা থেকে।’
    নাভারনের আহম্মদ আলী শাহিন বলেন, ‘আমাদের এখানে ভালো মানের পোশাক বা জুতা-স্যান্ডেল পাওয়া যায় না। বাধ্য হয়ে কলকাতায় গিয়ে ঈদের প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে হচ্ছে।’
    বেনাপোল ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওমর শরিফ জানান, অন্যান্য মাসের তুলনায় চলতি মাসে ভারতে যাতায়াত বেড়েছে। যাত্রীদের বেশিরভাগই ঈদের শপিং করে ফিরছেন। রমজানের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত গড়ে ৭ হাজার যাত্রী প্রতিদিন বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে বাংলাদেশ-ভারত যাতায়াত করছেন।