ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে জৈন্তাপুর সীমান্তে প্রবেশ করছে ভারতীয় পণ্য

0
207

রেজওয়ান করিম সাব্বির, জৈন্তাপুর (সিলেট) প্রতিনিধি: পবিত্র ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলা প্রতিটি সীমান্ত পথ বাংলাদেশে প্রবেশ করছে ভারতীয় পণ্য সামগ্রী।
এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে ভারতীয় বিভিন্ন ব্যান্ডের মদ, ইয়াবা, ফেন্সীডিল, আমদানী নিষিদ্ধ বিড়ি, সিগারেট, শাড়ী, লেহেঙ্গা, মোবাইল হ্যান্ডসেট, নিম্ন মানের চা-পাতা, গাড়ীর টায়ার-টিউব সহ যন্ত্রপাতি, মটর সাইকেল এবং ভারতীয় চিনি ও গরু মহিষ।
ব্যবসায়ীরা বলেন, মোটা অংকের সালামির মাধ্যমে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয় ভারতীয় পণ্য সহ গরু-মহিষ। সংশ্লিষ্টদের ফাঁকি দিয়ে সীমান্ত অতিক্রমের কোনো সুযোগ নেই।

সরেজমিনে জৈন্তাপুর উপজেলার ৪৮ বিজিবির আওতাধীন আলুবাগান, মোকামপুঞ্জি, শ্রীপুর, আদর্শগ্রাম, মিনাটিলা, কেন্দ্রী, কাঠালবাড়ী, কেন্দ্রী হাওর, ডিবিরহাওর, ডিবিরহাওর(আসামপাড়া) এবং ১৯ বিজিবির আওতাধীন ঘিলাতৈল, ফুলবাড়ী, টিপরাখলা, কমলাবাড়ী, গোয়াবাড়ী, বাইরাখেল, হর্নি, মাঝেরবিল, কালিঞ্জি, জালিয়াখলা, অভিনাশ ও লাল মিয়ার টিলা, তুমইর, বাঘছড়া, জঙ্গীবিল, বালিদাঁড়া, ইয়াংরাজা এলাকা দিয়ে পালাক্রমে দিনের বেলায় বাংলাদেশে প্রবেশ করছে ভারতীয় পন্য সামগ্রী।

ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে সীমান্ত জুড়ে অবাধে চলে চোরাকারবার সাথে সংশ্লিষ্টদের আনাগোনা। দিন-রাত সমান ভাবে পন্য আদান প্রদানের মহোৎসব চলছে। সীমান্ত দখলে থাকে চোরাচালান ব্যবসায়ী ও তাদের বাহিনীর দখলে। কেউ আনছে আসছে গরু-মহিষ, দামী শাড়ী, কেউবা আনছে মাদক, আর কেউবা আনছে চা-পাতা, কসমেট্রিক্স-এর চালান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চোরাকারবারী দলের সক্রিয় সদস্য বলেন, সংশ্লিষ্ট বাহিনীর সাথে লিয়াজো করে ভারতীয় পণ্যের চালান বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। প্রতিনিয়ত সীমান্তের বিভিন্ন পথ ব্যবহার করে বীরদর্পে চলছে চোরাচালানের নিরাপদ বাণিজ্য। বিনিময়ে মোটা অংঙ্কের সালামী পৌঁছে যাচ্ছে নানা মহলে। তিনি আরও বলেন, আপনারা (সাংবাদিক) যত লিখবেন তখন সালামী বেশি দিতে হয়। মাঝে মধ্যে বড় বড় চালান প্রবেশ করাতে গিয়ে লিয়াজোর চাইতে বেশি টাকা দিতে হচ্ছে।

তারা আরও বলেন, বাংলাদেশের উত্তরপূর্ব সিলেটের সর্বোচ্চ চোরাচালানের নিরাপদ রুট জৈন্তাপুর। অতএব প্রতিদিন সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশ প্রবেশ করছে হাজার হাজার বস্তা ভারতীয় চিনি, কসমেট্রিক্স, নি¤œমানের চা-পাতা, ঔষধ সামগ্রী, মোবাইল হ্যান্ডসেটের বড় চালান, মাদকের চালান, শাড়ী ও লেহেঙ্গার চালনা প্রবেশ করছে।

এদিকে উপজেলা প্রশাসনের গঠিত টাস্কর্ফোসের প্রধান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল বশিরুল ইসলাম, সহকারি কমিশনার (এসিল্যান্ড) রিপামনি দেবী, জৈন্তাপুর মডেল থানা পুলিশ, ১৯ বিজিবি জৈন্তাপুর (রাজবাড়ী) ক্যাম্পের বিজিবি সদস্য ও আনসার বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিতে গত ২জুন দিবাগত রাত সাড়ে ১২টা হতে ভোর ৫টা পর্যন্ত উপজেলার ঘিলাতৈল এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ৩১০ বস্তা ভারতীয় চিনি আটক করা হয়। রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে চোরাইপথে আনা টাস্কর্ফোসের অভিযানে উদ্ধারকৃত ৩২০ বস্তা চিনি গত ৫জুন সোমবার বিকাল ৪টা হতে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২দফায় ১৪ লক্ষ ২০ হাজার টাকায় কাষ্টম কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে প্রকাশ্যে নিলামে বিক্রয় করা হয়।

এদিকে টাস্কর্ফোসের অভিযানের পর হতে উপজেলার ডিবিরহাওর, ডিবিরহাওর আসামপাড়া, ঘিলাতৈল, ফলবাড়ী, টিপরাখলা, গোয়াবাড়ী এলাকা দিয়ে চেরাচালান বন্ধ রাখা হয়। অপরদিকে ৪৮ বিজিবির আওতাধীন আলুবাগান, মোকামপুঞ্জি, শ্রীপুর, আদর্শগ্রাম, মিনাটিলা, কেন্দ্রী, কাঠালবাড়ী, কেন্দ্রী হাওর, ১৯ বিজিবির আওতাধীন বাইরাখেল, হর্নি, মাঝেরবিল, কালিঞ্জি, জালিয়াখলা, অভিনাশ ও লাল মিয়ার টিলা, তুমইর, বাঘছড়া, জঙ্গীবিল, বালিদাঁড়া, ইয়াংরাজা এলাকা দিয়ে পালাক্রমে দিন ও রাতে ভারতীয় পণ্য সামগ্রী বাংলাদেশে প্রবেশ করছে।

এবিষয়ে শ্রীপুর, মিলাটিলা, ডিবিরহাওর, জৈন্তাপুর এবং লালাখাল ক্যাম্পের দায়িত্বশীলরা বলেন, সীমান্তে বিজিবির অভিযান অব্যাহত রয়েছে। অভিযানে বিজিবি বিপুল পরিমান চিনি ও শাড়ী আটক করছে। এরপরও চোরাকারবারীরা নানা পন্থায় চুরির মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করলেও বিজিবি সীমান্ত রক্ষায় নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিজিবির পাশাপাশি উপজেলা প্রশাসন টাস্কর্ফোস গঠন করায় যত দ্রæত সম্ভব চোরাচালান জিরো টলারেন্সে নামিয়ে আসবে।

জৈন্তাাপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) ওমর ফারুক মোড়ল কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রতিবেদকে কোন সদুত্তর না দিয়ে ফোন কেটে দেন। পরে এসএমএস-এর মাধ্যমে মতামত চাইলে কোন সদুত্তর পাওয়া যায়নি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রতিবেদককে বলেন, উপজেলার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে। এছাড়া আমাদের গঠিত টাস্কর্ফোস বাহিনী অভিযান পরিচালনা করছে। আমাদের অভিযানে ৩২০বস্তা ভারতীয় চিনি আটক করে ১৪লক্ষ ২০হাজার টাকায় নিলামে বিক্রয় করা হয়েছে। উপজেলা চোরাচালান বন্ধে টাস্কর্ফোসের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত থাকবে।