আসছে সেই রক্তাক্ত ১৩‘ই আগস্ট

    0
    455

    আমার সিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,১২আগস্ট,এম এস জিলানী আখনজীঃ আসছে রক্তাক্ত ১৩‘ই আগস্ট। অজ¯্র শোক, বেদনা ও মর্মাহত জড়ানো একটি দিন। যে দিন সুন্নীয়তের নীলাকাশে খসে পড়েছিল একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র। আর সে নক্ষত্র হলেন নিউইয়র্কে দূর্বৃত্তের গুলিতে নির্মমভাবে নিহত, কুইন্স ওজনপার্কে অবস্থিত আল-ফুরকান জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব জনপ্রিয় ইসলামী চিন্তাবিদ, পীরজাদা আল্লামা শহীদ শাহ্ আলাউদ্দিন আখঞ্জী (রহ:)।

    যিনি ২০১৬ সালের ১৩‘ই আগষ্ট সত্যের আদর্শে পরাজিত শক্তি, নরপিশাচ ঘাতক হায়েনাদের হাতে আল ফুরকান জামে মসজিদের সামনে রোজ শনিবার ইউ.এস.এ দুপুরের সময় ১:৫০ মিনিটে আততায়ীদের গুলিতে নির্মমভাবে শাহাদাত বরণ করেন। তিনি জোহরের নামাজ শেষে বাসায় ফিরছিলেন। তিনি ছিলেন একটি বিস্ময়কর হিরন্ময় জ্যোতি। ছিলেন সকলের প্রাণের ব্যক্তিত্ব ও হৃদয়ের স্পন্দন। ইসলামী বিশ্বে তিনি ছিলেন সুন্নীয়তের শান্তির দূত ও নির্ভীক সিপাহশালা। তিনি আমৃত্যু ইসলামের সঠিকরূপ রেখা তথা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আদর্শ প্রচার ও প্রসারে নিয়োজিত ছিলেন।

    তিনি হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার আহম্মদাবাদ ইউনিয়নের (গোছাপাড়া) গ্রামের শামছুল আরেফীন আল্লামা শাহ্ শামছুদ্দিন আখঞ্জী (রহ:) ঔরশে জন্ম নেয়া এই মহান বীরের জীবন কেটেছে প্রথমে শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে জামে মসজিদ, অতপর হবিগঞ্জ চৌধুরী বাজার কেন্দ্রীয় সুন্নি জামে সসজিদ এবং সর্বশেষ নিউইয়র্ক কুইন্স ওজনপার্কে অবস্থিত আল-ফুরকান জামে মসজিদে। জীবনের সর্বাঙ্গে তিনি ছিলেন অবিচল, আস্থাশীল ও সক্রিয়। তিনি সরলমনা মুসলমানদের শিখিয়েছেন আল্লাহ, নবী ও ওলীদের কিভাবে ভালবাসতে হয়।

    তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যার অক্লান্ত পরিশ্রমের কারণে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থানে ইয়ানবী সালামু আলাইকা’র সাথে মোস্তফা জানে রহমত পেঁ লাখো সালাম এর সুর লহরী প্রতিধ্বনিত হয়েছিল। যা শ্রবণে নবী প্রেমিকদের হৃদয় প্রশান্তিতে ভরে যেত। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন খুবই সাধারণ। জীবন যাপন ছিল অনাড়ম্বর ও অতি সাদামাটা। মূলত সত্য, ন্যায়, ইসলামের সঠিক শিক্ষা ও আদর্শ প্রচারে তিনি ছিলেন সক্রিয় ব্যক্তিত্ব। যার উজ্জ্বল প্রমাণ মানুষকে সত্যের পথিক বানানো। যার কারণে সারা বিশ্বের প্রায় মুসলিম বিশেষ করে প্রবাসী বাঙ্গালীরাও ছিল তাঁর প্রতি ভক্ত ও শ্রদ্ধাশীল। মূলত তাঁর শাহাদাতের পেছনে এটাই আসল কারণ যে, তিনি কেন এ ভাবে মানুষকে সত্যের পথিক বানাচ্ছেন।

    তাই অন্যায়, অসত্য ও তাগুতীবাদের প্রেতাত্মারা ভারাটিয়া কিলারের মাধ্যমে গুলি করে নির্মমভাবে শহীদ করে দেয়। আল্লামা শাহ্ আলাউদ্দিন আখঞ্জী (রহ:) এমন উচুঁমাপের ইসলামী চিন্তাবিদ ছিলেন, যা তাঁর ইন্তিকালের সময়ে প্রমাণিত হয়েছে। তাঁর জানাযার নামাজ জন সমুদ্রে পরিনত হয়েছিল। প্রিয় ব্যক্তিত্বকে হারানোর শোকে অশ্রু“ ঝড়াচ্ছিল দু’নয়নে। তিনি শাহাদাতের সুধা পান করেই আজ জান্নাতী। মূলত শাহাদাত তাঁর একটি কামনা ছিল।

    তাঁর প্রতিটি দোয়া মোনাজাতে বলতেন, আল্লাহ আমাকে শহীদি মৃত্যু দাও। আর মকবুল বান্দার দোয়া কবুল করেন আল্লাহ তায়ালা। প্রিয় নবী (দ:) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে সত্যিই শাহাদাতের মৃত্যু চায়, সে তার বিছানায় মৃত্যুবরণ করলেও আল্লাহ তায়ালা তাকে শহীদের মর্যাদায় পৌঁছে দেন”। (মুসলিম শরীফ) এভাবে হাজারো গুণে-বৈশিষ্ট্যে আল্লামা আখঞ্জী (রহ:) ছিলেন স্বমহিমায় সমুজ্জ্বল। আজ দীর্ঘ এক বছর পরও মানুষ তাকে শ্রদ্ধাভরে স্বরণ করছে এবং ন্যায় বিচারের দিকে থাকিয়ে আছে। তিনি আজ আমাদের মাঝে নেই। আছে হাজারো স্মৃতি ও কথা। তিনি আজীবন সকল সুন্নী মুসলমানদের প্রাণে চীর স্বরণীয় হয়ে থাকবেন।