অনিয়ম দুর্নীতির প্রশ্নে কাউকেই ছাড় দেইনিঃপ্রধানমন্ত্রী

    0
    217

    আমারসিলেট24ডটকম,ফেব্রুয়ারীঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমান বিশ্বে সশস্ত্রবাহিনীর বহুমাত্রিক ভূমিকার কথা বিবেচনা করে এই বাহিনীকে বাস্তবসম্মত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কর্মসুচির মাধ্যমে যুগোপযোগী করে গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তিনি বলেন, বর্তমানে বিশ্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থায় নতুন নতুন পরিবর্তনের ফলে সামরিক বাহিনীর ভূমিকা ও দায়িত্বে এসেছে বহুমাত্রিকতা। সশস্ত্র বাহিনীর শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রমেও পরিবর্তিত সময়ের এই চাহিদার প্রতিফলন থাকা প্রয়োজন। সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় গুরুত্ব আরোপ করায় তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন। আজ বুধবার মিরপুর ক্যান্টনমেন্টে সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজের (ডিএসসিএসসি) স্নাতক ডিগ্রি প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় তিনি স্নাতক ডিগ্রি অর্জনকারী কর্মকর্তাদের মধ্যেও সার্টিফিকেট প্রদান করেন।
    অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত -সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ, মন্ত্রীবর্গ, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব. ) তারিক আহমেদ সিদ্দিকী , নৌবাহিনী প্রধান ভাইস এডমিরাল ফরিদ হাবিব, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল মুহাম্মদ এনামুল বারি, স্বরাষ্ট্র বাহিনী বিভাগের পিএসও, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যগণ, কূটনীতিক, উচ্চপর্যায়ের সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাগণ সস্ত্রীক উপস্থিত ছিলেন।
    প্রধানমন্ত্রী বলেন, সশস্ত্র বাহিনী আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের মূর্ত প্রতীক। প্রিয় মাতৃভূমির স্বাধীনতা রক্ষার সুমহান দায়িত্ব আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর ওপর ন্যস্ত। এ পবিত্র দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি আমাদের দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায়ও প্রশংসনীয় অবদান রাখছেন। তিনি আরো বলেন, শুধু দেশেই নয়, বহির্বিশ্বেও বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা সততা, নিষ্ঠা ও দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করে প্রশংসা ও সুনাম অর্জন করেছেন। তাদের সাফল্যে সারা বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হয়েছে।
    জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশে একটি সুশৃঙ্খল ও পেশাদার সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর অফিসারদের উচ্চতর প্রশিক্ষণ প্রদানের লক্ষ্যে এ কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে স্টাফ কলেজ আজ এক অনন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিগণিত। সশস্ত্র বাহিনীর উর্ধ্বতন অফিসারদের প্রশিক্ষণের জন্য ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ, এমআইএসটি, আর্মস ফোর্সেস মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠাসহ সেনাবাহিনীর সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নে অনেকগুলো ইউনিট গঠন করা হয়। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য উন্নত প্রশিক্ষণ ও অনুশীলনের ওপর আরও বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
    এ সময় সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নে সরকার বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের গত মেয়াদে ফোর্সেস গোল ২০৩০ এর আওতায় সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়ন ও আধুনিকায়নে বহু উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম গ্রহণ করেছি। এবারও সরকার গঠন করার পর আমরা এই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছি। সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়ন ও কল্যাণের জন্য যা যা করা দরকার আমরা সবই করব।
    প্রধামন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার সবসময় জনগণের সেবক হিসেবে দেশ পরিচালনা করতে চায়, কখনই শাসক হিসেবে নয়। আমরা অনিয়ম দুর্নীতির প্রশ্নে কাউকেই ছাড় দেইনি। সর্বাত্মক আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছি। ডিজিটাল প্রযুক্তি সর্বব্যাপী করে জীবনযাত্রা সহজ ও স্বচ্ছ করেছি। জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস নির্মূল করেছি। দেশসেবায় আমরা আপনাদের সার্বক্ষণিক সহযোগিতা পেয়েছি। এ সময় বিশ্ব শান্তি রক্ষা এবং সকল প্রকার সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বর্তমান সরকারের অবস্থান অত্যন্ত সুস্পষ্ট উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই আদর্শকে সামনে রেখে আমাদের সশস্ত্র বাহিনীকে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।
    ‘আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ একটি উন্নত দেশ হিসাবে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে’ এ প্রত্যাশা ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার লক্ষ্যে তার সরকার কাজ করে যাচ্ছে এবং এ বিষয়ে যথেষ্ট অগ্রগতিও হয়েছে। আমাদের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়ে আজ তা ১০৪৪ ডলারে উন্নীত হয়েছে। বিভিন্ন প্রতিকূলতা সত্বেও চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে রপ্তানি আয় ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
    অনুষ্ঠানে গ্র্যাজুয়েট অফিসারদের পেশাগত জীবনের উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে আপনারা সমরবিজ্ঞানে উচ্চতর জ্ঞান লাভ করেছেন। আমার বিশ্বাস, এ প্রশিক্ষণ অর্পিত দায়িত্ব দক্ষতার সাথে পালন এবং যে কোন ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আপনাদের আরও আত্মপ্রত্যয়ী করবে। এ ছাড়াও বন্ধুপ্রতীম দেশের গ্রাজুয়েট অফিসারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সর্ম্পক ক্রমেই গাঢ় হবে।
    উল্লেখ্য, এ বছর মোট ১৮৮ জন অফিসার্স ডিএসসিএসসি কোর্স শেষ করেন । এর মধ্যে ১০০ জন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর, ২৩ জন বাংলাদেশ নেভির, ২১ জন বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর এবং অবশিষ্ট ৪৪ জন চীন, মিসর, ভারত, ইন্দোনেশিয়া ,আইভেরি কোষ্ট, জর্ডান, কুয়েত, লাইবেরিয়া, মালয়েশিয়া, মায়ানমার, নেপাল, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, সৌদি আরব, সিরিয়া লিয়েন, শ্রীলঙ্কা , তানজানিয়া , তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্র, এবং জিম্বাবুয়ের। এ পর্যন্ত ২,৯৬৫ জন বাংলাদেশি অফিসার ও ৩৭টি দেশের ৮০৮জন বিদেশি অফিসার এ কলেজ থেকে স্নাতক কোর্স করেছেন বলে জানা যায়।