রেজওয়ান করিম সাব্বির, জৈন্তাপুর (সিলেট) প্রতিনিধি: আধুনিকতার যুগে শিল-পাটার কদর কমেনি। প্রতিটি ঘরে ঘরে এখন ব্যবহার হচ্ছে শিল পাটা। পাথরের রাজ্যের শিল পাটার কারিগররা তৈরী করে চলছে নানা ধরনে নকশা করা এসব শিল-পাটা।
সিলেটের অন্যতম পাথর রাজ্যে জাফলং। পিয়াইন নদীর তীরে সংগ্রাম সীমান্ত ফাঁড়ী এলাকায় রয়েছে শিল পাঠার কারিগরদের কারখানা। কারিগরদের নিপুন কারিগরির মাধ্যমে তৈরী হচ্ছে আধি যুগের মসলা তৈরীর যন্ত্র শিল পাটার। নানার নকশি ডিজাইনে তৈরী হচ্ছে এসকল শিলা পাটা। একটা সময় মসলা তৈরীর অন্যতম সহজ উপায় ছিল শিল-পাটা ব্যবহার। সময়ের সাথে সাথে আধুনিকতার ছোয়ায় শিল্পটি বিল্পুতির পথে চলে যাচ্ছিল। কঠিন বাস্তবতার মুখে অনেকেই শিল পাটার পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় জড়িয়ে পড়েন।
কিন্ত নানা প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে সিলেটের জাফলং এলাকায় কিছু সংখ্যাক কারিগররা তাদের পুরাতন পেশাটি টিকিয়ে রাখেছেন। সময়ের ব্যবধানে পুনরায় আধুনিক যন্ত্রের মসলা
পরিবর্তে ফিরে আসছে আধি যুগের শিল পাটার ব্যবহার। তাই ধিরে ধিরে প্রাণ সঞ্চার সৃষ্টি হচ্ছে শিল পাটার প্রতি মানুষের। বর্তমানে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা পিয়াইন নদীর তীরের শিল পাটার কারিঘরদের কদর বাড়ছে। কারিগররা তাদের নিপুন কারিগরি দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে নানা রকমের বাহারি নকশায় তৈরী করছেন শিল-পাটা। আধুনিকতার যুগেও এখন মানুষ প্রতিনিয়িত শিল-পাটা নিচ্ছে নিজেদের পরিবারে তাজা মসলার স্বাদ গ্রহনের জন্য।
জাফলং এলাকাঘুরে কথা হয় শিল-পাটার কারিগর কুকিল মিয়া, জয়নাল আবেদীন সহ ১০ হতে ১২জন কারিগরদের সাথে। তারা বলেন, আধুনিক যন্ত্রের প্রভাবে পড়ে আমাদের পেশাটি বিলুপ্তির পথে চলে যাচ্ছিল। অনেক কারিগরেরা পেশা ছেড়ে দিয়ে অন্যান্য পেশায় চলে যায়। আমরাও কিছু সংখ্যাক লোক শিল-পাটার ব্যবসাকে আকড়ে ধরে রাখি। কোন মতে পরিবার পরিজন নিয়ে চলতে হয়। বর্তমানে শিল-পাটার ব্যবসাটি কিছুটা হলে আগের তুলনায় চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেহারে শিল-পাটার কদর ফিরে আসছে এরকম ভাবে চললে আমরাও সাচ্ছন্দে চলতে পারব এমনটি আশা করছেন কারিগররা।
তারা আরও বলেন, আকার বেঁধে শিল পাটার দাম ২শত টাকা হতে ৮শ টাকা মধ্যে রয়েছে। তুলনামুলক ভাবে দাম কম। পাথর সংকটের কারনে দাম কিছুটা বেশি তার পরও শিল পাটার দাম ক্রেতাদের হাতের নাগালে রয়েছে বলে জানান কারিগররা।
শিল-পাটা নিয়ে কথা হয় সিলেটের বাসিন্দা সামির মাহমুদের সাথে। তিনি বলেন, আধুনিকতার ছোয়ায় যন্ত্রের সাহায্যে তৈরী মসলায় প্রকৃত তাজা স্বাদটি পাওয়া যায়না। তাই মসলার তাজা স্বাদ গ্রহনের জন্য নিজেই পরিবারের জন্য একটি শিল পাটা ৫শত টাকায় ক্রয় করেছি। জাফলংয়ের শিল-পাটা গুনগত মান ভাল। মসলা তৈরীতে পাটা হতে কোন বালু উঠে আসে না। সিলেটের বেশির ভাগ ক্রেতাগণ জাফলং হতে শিল-পাটা ক্রয় করেন।
এবিষয়ে কথা হয়, নাজমুল ইসলাম, উজ্জ্বল মেহেদী, মামুন হোসেনের সাথে তারাও বলেন, যন্ত্রের তৈরী মসলায় প্রকৃত ভাবে মসলার তাজা স্বাদ পাওয়া যায়না। তাড়া হুড়ার জন্য হয়ত আমরা যন্ত্রের তৈরী মসলা ব্যবহার করছি। কিন্তু বেশির ভাগ মসলা গুলো টেকসহ নহে। অসাধু ব্যবসায়ীরা যন্ত্রের তৈরী মসলার গুনগতমান সটিক রাখে না। আমরা নিজেদের প্রয়োজনীয় মসলার চাহিদা মিটাতে শিল-পাটা ব্যবহার করি।
জাফলং এর শিল-পাটার গুনগত মান ভাল। আমরা বেশিরভাগ সময়ই জাফলং হতে শিল-পাটা সংগ্রহ করছি।