আজ ঐতিহাসিক শোহাদায়ে কারবালা দিবস,১০ই মোহররম

    0
    289

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,০১অক্টোবরঃ আজ হিজরি বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস মোহররম এর ১০ তারিখ পবিত্র আশুরা।ইতিহাসের বহু ঘটনার স্মৃতিবাহী হলেও এই দিনটি বিশ্বনবী হযরত মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহে ওয়া সাল্লামার প্রিয়  দৌহিত্র হযরত ইমাম হোসাইন (রাঃ)-এর শাহাদত দিবস হিসেবে ব্যাপকভাবে পালিত হয়ে থাকে। এমন এক সময়ে শোহাদায়ে কারবালার ক্ষণ আমাদের সামনে উপস্থিত হয়েছে যখন হাজার হাজার মুসলিম রোহিঙ্গারা শহীদ হচ্ছেন বৌদ্ধ ধর্মের ধর্মীয় সন্ত্রাসীদের হাতে যেমনটি ঘটেছিল  কারবালার প্রান্তরে বিতর্কিত শাসক ইয়াযিদের সেনাবাহিনীর হাতে তিনি পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে শাহাদত বরণ করেন। গোটা মুসলিম বিশ্বে এই শাহাদত দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়ে থাকে। মানব ইতিহাসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা এদিনে সংঘটিত হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও হবে বলে বিভিন্ন বর্ণনা পাওয়া যায়। প্রমাণ পাওয়া যায়,এদিনেই জগৎ সৃষ্টির সূচনা হয় এবং ধ্বংস  ও হবে এই দিনে।

    মুসলিমদের ধর্ম মতে প্রথম মানব নবী হযরত আদম (আঃ) কে সৃষ্টি করা হয় এই দিনে।এদিনেই তাকে দুনিয়ায় পাঠানো হয়। হযরত নূহ (আঃ) এদিনেই মহাপ্লাবন থেকে স্থলভাগে অবতরণ করেন। এদিনেই হযরত আইয়ূব (আঃ) রোগমুক্ত হন। হযরত ইউনূস (আঃ) মাছের পেট থেকে মুক্তিলাভ করেন। হযরত ইব্রাহিম (আঃ) নমরুদের অগ্নি কাণ্ড থেকে নিরাপদে বের হয়ে আসেন। হযরত সুলাইমান (আঃ) বাদশাহী লাভ করেন। এই দিনেই হযরত মূসা (আঃ) ফেরাউনের আক্রমণ থেকে মুক্তিপান এবং আল্লাহর অনুগ্রহে নীল নদ পার হন একই সময়ে ফেরাউন নীলনদে ডুবে মারা যায়।হযরত মূসা (আঃ) এই দিনেই আল্লাহর সাথে কথোপকথন করেন এবং মুক্তির উপতক্যায় পৌঁছান। এই দিন হযরত ঈসা (আঃ)কে আসমানে তুলে নেয়া হয়। এদিনেই হযরত আদম (আঃ) ও হযরত দাউদ (আঃ)-এর প্রার্থনা কবুল হয়। হযরত ইউসুফ (আঃ) পিতা হযরত ইয়াকুব (আঃ)-এর সঙ্গে মিলিত হন। এ দিনটির ঐতিহাসিক গুরুত্বের কারণেই আশুরা একটি পবিত্র দিবস।
    নবী-রাসূলদের জীবনে সংঘটিত মোজেজা ও ইতিহাসের বাঁক পরিবর্তনকারী অসংখ্য ঘটনার কারণে মানুষ সৃষ্টির শুরু থেকে এ দিবসটি বিশেষ মর্যাদায় অভিষিক্ত হয়ে আছে। আল্লাহর রাসূলের দৌহিত্র হযরত ইমাম হোসাইন (রাঃ)’এর শাহাদত দিবস হিসেবে এ দিনটি বিশেষ গুরুত্বের সাথে বিবেচিত মানব সমাজে।প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহে ওয়া সাল্লামা-র ওফাতের ৫০ বছর পর তার প্রিয় দৌহিত্র হযরত ইমাম হোসাইন (রাঃ) অন্যায় ও অসত্যের বিরুদ্ধে ছিলেন সোচ্চার।এজিদ বাহিনীর ছলনা ও প্রতারণায় লড়াই করতে বাধ্য হয়ে নারী শিশু কিশোরসহ হিজরি ৬১ সনে ইরাকের কারবালা প্রান্তরে শাহাদত বরণ করেছিলেন তিনি। তার এই শাহাদতের ঘটনা ইসলামের ইতিহাসে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। অন্যায়, অসত্য ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে পরিবার-পরিজন ও ভক্ত-অনুসারীদের নিয়ে তিনি পরাক্রান্ত শাসক শক্তির হাজার হাজার দক্ষ ও প্রশিক্ষিত সেনাদের বিরুদ্ধে এক অসম লড়াইয়ে অবতীর্ণ হতে বাধ্য হন এবং সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেন। তার এই বেনজির আত্মত্যাগ, সত্যনিষ্ঠা ও ন্যায়বাদিতা যুগ যুগ ধরে মুসলিম উম্মাহর কাছে এক অনিঃশেষ অনুপ্রেরণা হয়ে আছে এবং আগামীতেও থাকবে। উপমহাদেশের খ্যাতিমান আলেম ও কবি মাওলানা মুহাম্মদ আলী জওহরের ‘কাতলে হোসাইন আসল মে মুর্গে ইয়াজিদ হ্যায়, ইসলাম জিন্দা হোতা হ্যায় হার কারবালা কে বাদ’ কথাটি যুগেযুগে প্রমাণিত হয়েছে। দেখা গেছে, বারবার মুসলমানদের চরম দুর্দিনে কারবালা সংঘটিত হয়েছে এবং এর পরপরই মুসলমানরা জেগে উঠেছে। ইসলামের জাগরণ ও অগ্রযাত্রা নতুনভাবে দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে।

    জগতজুরে বাতিলের বিপক্ষে হকের সংগ্রাম  শোহাদায়ে কারবালার ঘটনা থেকে প্রেরণা ও রসদ লাভ করে উজ্জীবিত হয় মুসলিম সমাজ।এখন যখন ইসলামী চেতনাবিরোধী শক্তি, মুনাফেক চক্র ও ইসলাম বিদ্বেষী পক্ষ সমূহ যার যার অবস্থান থেকে ইসলাম ও মুসলমানদের বিপক্ষে অবিরাম চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র ও দমনমূলক কাজ করে যাচ্ছে তখন মনে হতে পারে, মুসলিম উম্মাহর জন্য প্রতিটি দিনই যেন আশুরা। বাস্তবতাও এমনই। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এমন কোন মুহূর্ত নেই, যখন বিশ্বের কোথাও না কোথাও মুসলমানের রক্ত না ঝরছে। মুসলমানরা নিপীড়িত হচ্ছে না। রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর মিয়ানমার সেনাবাহিনী যে বর্বর নিধনযজ্ঞ ও গণহত্যা চালাচ্ছে তা ইতিহাসে বিরল। মিয়ানমার থেকে মুসলমানদের নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার জন্য মিয়ানমার সরকার এথনিক ক্লিনজিং অভিযান পরিচালনা করছে। লাখ লাখ রোহিঙ্গা প্রাণ ভয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে যা অব্যাহত রয়েছে।তাদের অসহায়ত্ব ও দুর্গতিতে মানব হৃদয় ব্যাকুল না হয়ে পারে না।

    মুসলমানদের উপর পরিকল্পিত এই নিপীড়ন, নির্যাতন ও হত্যা নতুন নয়।ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া,ভারতের কাশ্মীর,বসনিয়া,মুসলমানদের হত্যা ও বিতাড়ন বহু বছর ধরেই চলছে।আফ্রিকা, ইউরোপ, আমেরিকা এবং এশিয়ার বিভিন্ন দেশে যা ঘটছে তা কারো অজানা নয়। একটা যুগসন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে মুসলিম উম্মাহ। তবে হতাশ হবার কিছু নেই। এতসব নিপীড়ন ও নির্যাতনের মধ্যেও সারা বিশ্বে ইসলামের প্রতি মানুষের আকর্ষণ ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন নামকরা প্রতিষ্ঠানের জরিপে, উঠে এসেছে কীভাবে ইসলামের প্রতি মানুষ অনুরক্ত হয়ে উঠছে এবং এর সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় নিচ্ছে। জরিপ গুলোতে আভাস দিয়ে বলা হয়েছে, আগামী বিশ্বে হবে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। এক্ষেত্রে মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য, সংহতি, পরস্পরের পাশে দাঁড়ানো এবং আল্লাহর কোরআন এবং রাসূলের সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরতে হবে। তাহলে অবশ্যই বিশ্বে মুসলমানদেরই আধিপত্য বিস্তৃত হবে। কারবালার শিক্ষা সে কথাই বলে।
    কারবালার শিক্ষা বার বার মুসলমানদের সঠিক পথের দিশা দিয়েছে। দিয়েছে কর্তব্য-কর্মের নির্দেশনাও। এটা শেষ হয়ে যায়নি, হবারও নয়। ন্যায়-অন্যায়, সত্য-মিথ্যা,ধর্ম-অধর্ম এসবই সুস্পষ্ট।ন্যায়ের সাথে অন্যায়কে, সত্যের সাথে মিথ্যাকে, ধর্মের সাথে অধর্মকে গুলিয়ে ফেলার কোন সুযোগ নেই। এই দিবস পালন করতে গিয়ে বা শোক প্রকাশ করতে গিয়ে ধর্মের প্রকৃত চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক এমন কোন কর্মপন্থা গ্রহণ অনুচিত। হযরত ইমাম হোসাইনকে (রাঃ) দুর্বৃত্তের শাসন মানতে বাধ্য করতে পারেনি। জালেমকে ছাড় দেননি তিনি । অন্যায়কে বরদাশত করেননি। মিথ্যাকে স্বীকার করেননি।

    জালেমের সাথে সখ্যতা পরিহার করেছেন তিনি।অধর্মকে সহ্য করেননি। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায় শির দেগা, নেহি দেগা আমামা এটাই কারবালার প্রকৃত শিক্ষা। হযরত ইমাম হোসাইন (রা.)-এর শাহাদতের কিছুদিনের মধ্যেই ইয়াজিদের মৃত্যু হয়েছিল। এর পরবর্তী ঘটনাও ইতিহাসে লিপিবদ্ধ আছে। বিশ্বব্যাপী ইসলামী শক্তি নতুন করে জেগে উঠে। সুতরাং মুসলমানদের বিচলিত হবার কিছু নেই। বিশ্বব্যাপী আজকের দৃশ্যমান অন্ধকার অচিরেই কেটে যাবে যদি আমরা হযরত ইমাম হোসাইন (রাঃ)-এর পথ অনুসরণ করতে পারি, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালবেসে প্রিয় নবীর নির্দেশিত পথে ঐক্য ও সংহতির বন্ধনে নিজেদের আবদ্ধ করতে পারি।বিশ্বে মুসলিমদের জয় অতি সন্নিকতে।আল্লাহু ওয়া রাসুল আ’লামু।